বজ্রপাতের ছবি তুলে ঝড়ের পূর্বাভাস দেবে ইউরোপের নতুন স্যাটেলাইট

মেঘ থেকে মেঘে বজ্রপাতের ছবি তুলতে পারবে নতুন স্যাটেলাইটের ক্যামেরা; যার ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে বৈরী আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারবে ইউরোপের আবহাওয়া অধিদপ্তরগুলো।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2022, 10:08 AM
Updated : 13 Dec 2022, 10:08 AM

ইউরোপ, মধ্যপ্র্যাচ ও আফ্রিকায় আরও ভালোভাবে ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহাকাশে যাচ্ছে ইউরোপের নতুন আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট মিটিওস্যাট-১২।

মঙ্গলবার এ কৃত্রিম উপগ্রহের মহাকাশযাত্রা শুরু হবে আরিয়ান রকেটে চড়ে। বিবিসি লিখেছে, সম্ভবত ইউরোপিয়ান স্পেস লঞ্চের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎক্ষেপণ এটি।

মহাকাশে প্রায় দুই দশকের পুরনো আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি প্রতিস্থাপন করবে এই স্যাটেলাইট। এটা হবে ইউরোপীয় সরকারগুলোর শত-কোটি ইউরোর নতুন প্রকল্পের প্রথম উপগ্রহ।

মিটিওস্যাট-১২ এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে ইউরোপের আবহাওয়া স্যাটেলাইটগুলোর আন্তঃসরকার ব্যবস্থাপনা সংস্থা ইউমেটস্যাটের মহাপরিচালক ফিল ইভানস বলেন, “গতবছর জার্মানি, নেদারল্যান্ডস আর বেলজিয়ামে আঘাত হানা ঝড়গুলোর কথা ভাবুন, দুইশ মানষের প্রাণ গেছে তাতে। এ ঘটনাগুলো দুঃখজনক।

“আরও ভালো পূর্বাভাস দিতে মহাকাশ থেকে আরও সঠিক, ঘন ঘন এবং প্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ তথ্য পাওয়া এই চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার প্রভাব কমাতে অতি গুরুত্বপূর্ণ।”

১৯৭৭ সাল থেকে মহাকাশে নিজস্ব আবহাওয়া স্যাটেলাইট আছে ইউরোপের। মিটিওস্যাট-১২ হবে মহাকাশে ইউরোপের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থায় তৃতীয় প্রজন্মের সংযোজন।

প্রতি ১০ মিনিট পর পর নিচের আবহাওয়ার ছবি তুলে পাঠাবে মিটিওস্যাট-১২। ইউরোপের বর্তমান আবহাওয়া স্যাটেলাইট প্রতি ১৫ মিনিটে একবার করে ছবি পাঠায়। এছাড়া, মহাকাশ থেকে ৫০০ মিটার প্রস্থের জমির মত ছোট জায়গার ওপরও নজর রাখতে পারবে কৃত্রিম উপগ্রহটি।

মিটিওস্যাট-১২ এর সুবাদে যুক্তরাজ্যের ‘মেট অফিস’ এবং ফ্রান্সের ‘মিটিও ফ্রান্স’-এর মতো আবহাওয়া অফিসগুলো আবহাওয়া নিয়ে আরও বেশি তথ্য-উপাত্ত পাবে।

বিবিসি লিখেছে, নতুন স্যাটেলাইটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতাগুলোর একটি হচ্ছে এর বজ্রপাতের ছবি তুলতে সক্ষম বিশেষ ক্যামেরা। বজ্রপাতের পরপরই সাধারণত ঝড়ো বাতাস ও ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়; ফলে মিটিওস্যাটের তোলা ছবির ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে বিপজ্জনক আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছে আবহাওয়া দপ্তরগুলো।

রেডিও তরঙ্গের ভিত্তিতে বজ্রপাত চিহ্নিত করার প্রযুক্তি নতুন কিছু নয়। তবে এ কৌশলে যে বজ্রপাতগুলো চিহ্নিত হয়, তার সিংহভাগই হয় আকাশ থেকে মাটিতে। কিন্তু বায়ুমণ্ডলের ৯০ শতাংশ বজ্রপাত হয় মেঘ থেকে মেঘে; যা চিহ্নিত করতে পারবে মিটিওস্যাট-১২ এর ক্যামেরা।

যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া দপ্তরের ড. সাইমন কিও বিবিসি বলেন, “নতুন মিটিওস্যাট গেইম-চেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে। এটা আমাদের বায়ুমণ্ডলের বজ্রপাতের ওপর ভালোভাবে নজর রাখার সুযোগ দেবে।” 

তৃতীয় প্রজন্মের আবহাওয়া পর্যবক্ষেণ প্রযুক্তির অংশ হিসেবে মহাকাশে মোট তিনটি স্যাটেলাইট পাঠাবে ইউরোপ। বায়ুমণ্ডলের ছবি তুলতে সক্ষম দ্বিতীয় স্যাটেলাইট মহাকাশে যাবে ২০২৬ সালে, প্রতি আড়াই মিনিটে একবার করে ইউরোপের আকাশের ছবি তুলবে সেটি।

তার আগে ২০২৪ সালে একটি ‘সাইন্ডিং স্পেসক্র্যাফট’ মহাকাশে পাঠাবে ইউরোপ। বায়ুমণ্ডল ভেদ করে তাপমাত্রা আর আর্দ্রতার তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে সেটি।

বিবিসি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে নতুন তিন স্যাটেলাইট প্রতিস্থাপনের জন্য পরবর্তী প্রজন্মের স্যাটেলাইট নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছে ইউরোপ। গবেষণা ও স্যাটেলাইট নির্মাণের পেছনে এ পর্যন্ত ১৪০ কোটি ইউরো খরচ করেছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)। আর ইউমেটস্যাট সদস্য দেশগুলো আরও ২৯০ কোটি ইউরো খরচ বহন করছে।

মঙ্গলবার গ্রিনিচ মান সময় ৮টা ৩০ মিনিটে ফ্রেঞ্চ গিনির স্পেসপোর্ট থেকে মিটিওস্যাট-১২ বহনকারী আরিয়ান রকেট উৎক্ষেপণ করবে ইএসএ।