ভিশন প্রো অগমেন্টেড রিয়েলিটি হেডসেট উন্মোচনের সাফল্যই প্রমাণ করবে যে অ্যাপল এখনও তাদের বিভিন্ন ধারণা দিয়ে বাজার বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে কিনা।
Published : 14 Jan 2024, 05:11 PM
২০০৭ সালে যখন অ্যাপল প্রথম আইফোন নিয়ে আসে তখন যোগাযোগ খাতে যুগান্তকারী বিপ্লব সৃষ্টির কৃতিত্ব ছিল তাদের দখলে।
অ্যাপলের জনপ্রিয় পণ্যটি ১৭ বছর ধরে স্মার্টফোনের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। পাশাপাশি, গত বছর বিশ্বের প্রথম কোম্পানি হিসেবে তিন লক্ষ কোটি ডলার মূল্যায়নের কোম্পানি হয়ে ওঠার পেছনেও ছিল আইফোন।
তবে, সম্প্রতিক মাসগুলোতে এর ভাগ্য পাল্টে গেছে।
কোম্পানিটি বাড়তে থাকা প্রতিযোগিতা ও জীবনযাত্রার খরচ; কঠোর সব নিয়মকানুন ও আইনি চ্যালেঞ্জের কারণে চাপের মুখে পড়েছে। এ কারণে, দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে দীর্ঘতম মন্দার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে অ্যাপল।
এ বছরের শুরুতে ওয়াল স্ট্রিট বিশ্লেষকরা অ্যাপল শেয়ারে দ্বিতীয় ডাউনগ্রেড দিয়েছিলেন, যা বছরের বাকি সময় নিয়ে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল বিনিয়োগকারীদের।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু আইফোনের গতি কমিয়ে দেওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান ক্লাস অ্যাকশন মামলার গ্রাহকদের ৫০ কোটি ডলার দেওয়া শুরু করেছে অ্যাপল।
এ ছাড়াও, সবচেয়ে প্রভাবশালী এআই ব্যবস্থা বিকাশের জন্যও অন্যান্য টেক জায়ান্টদের মধ্যে চলা ইঁদুর দৌড়ে অংশ নেয়নি কোম্পানিটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পদক্ষেপের কারণেই, বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানির প্রতিযোগিতায় ওপেনএআই এর প্রধান সমর্থক মাইক্রোসফটের কাছে হেরে গেছে অ্যাপল।
অনেকে এ যুক্তিও দিয়েছেন যে স্মার্টফোন বাজারের পরিপক্কতা কোম্পানিটির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ কারণ এটি গ্রাহকদের মনোভাব পরিবর্তন করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।
‘গত দশক বা তারও বেশি সময় ধরে স্মার্টফোনের বাজার বদলেছে সমস্ত স্বীকৃতির বাইরে’ – বলেছেন প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা কোম্পানি সিসিএস ইনসাইটের প্রধান বিশ্লেষক বেন উড।
‘এটি মানুষের দৈনন্দিন পণ্যের মতো হয়ে গিয়েছে। এমন কিছু যা মানুষের কাছে থাকতেই হবে। এবং তারা এটিকে অনেক সময় ধরে কাছে রাখছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘একটি ভালো ব্যাখ্যা হতে পরে ওয়াশিং মেশিন। কেউ সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবেন না যে আজ আমি বের হয়ে নিজের জন্য একটি ওয়াশিং মেশিন কিনবো। কিন্তু স্মার্টফোন ভেঙে গেলে আপনাকে অবশ্যই নতুন একটি নিতে হবে।’
অন্যান্য বিশেষজ্ঞ আশা প্রকাশ করেছেন, অ্যাপলের ইকোসিস্টেম অ্যাপ, পরিষেবা এবং অন্যান্য প্রযুক্তিতেই গ্রাহকরা ফিরে আসবেন।
‘আইফোন বিক্রি কমলেও মানুষের হাতে এখনও আইফোন রয়েছে। যার অর্থ, তাদের কাছে ক্লাউড স্টোরেজ, অ্যাপল টিভি প্লাস, ফিটনেস অ্যাপ্লিকেশন ও এ ধরনের নানান পরিষেবা বিক্রি করতে পারে অ্যাপল।’ – বলেছেন একজন প্রযুক্তি বিশ্লেষক ও লেখন চার্লস আর্থার।
‘সুতরাং যে কোনো ধরনের ধীরগতি কেবল বড় সংখ্যার বাস্তবতা। সবসময়ই এটি কেবল বাড়তেই থাকবে সেটা সম্ভব নয়।’
ফেব্রুয়ারি মাসটি অ্যাপলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে লিখেছে স্কাইনিউজ। বিনিয়োগকারীরা মাসের শুরুতে এর আর্থিক ফলাফল প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করছেন। আগের বছরের বড় দিনের সময়ের হিসাবে, টানা পঞ্চম প্রান্তিকে কোম্পানির রাজস্ব কমেছে কিনা তা নিশ্চিত করবে এই ফলাফল।
আগামী মাসে একটি নতুন শুরুও হতে যাচ্ছে। অ্যাপলের সর্বশেষ পণ্য ভিশন প্রো অগমেন্টেড রিয়েলিটি হেডসেট উন্মোচিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। সাড়ে তিন হাজার ডলারের চড়া দাম নির্ধারণ করা হয়েছে পণ্যটির।
এ উন্মোচনের সাফল্যই প্রমাণ করবে যে অ্যাপল এখনও তাদের বিভিন্ন ধারণা দিয়ে বাজার বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে কিনা।