বিশ্লেষকরা যতো কনটেন্ট অনুসন্ধান করে পেয়েছেন, তার দুই-তৃতীয়াংশই এইসব শিশু নিপীড়নের ভিডিও, যেগুলো ধারণ করেছে নিপীড়িত শিশুরাই।
Published : 28 Jan 2023, 12:29 PM
বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ লকডাউনে অনেক কিছুই বদলে গেছে। বদলে গেছে অফিসে কাজের ধরন, জীবনযাপন ও অর্থনীতি। তবে, সম্ভবত সবচেয়ে ভয়াবহ পরিবর্তনের খোঁজ দিলো একটি অনলাইন পর্যবেক্ষণ সংস্থা।
লকডাউনে অনলাইন ভিডিওতে শিশু যৌনআচরণ ও নিপীড়ন বেড়েছে অন্তত ১০গুণ।
ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন (আইডাব্লিউএফ) বলছে, তাদের প্রাপ্ত তথ্য থেকে উঠে এসেছে কীভাবে নিপীড়করা লকডাউন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে।
২০২০ সালের শুরুর দিকে দুটি ঘটনা ঘটতে শুরু করে। বিশ্বব্যাপী মহামারী ছড়াতে শুরু করে এবং সামাজিক মাধ্যমের জনপ্রিয়তা ও এর ওপর নির্ভরশীলতা বাড়তে শুরু করে হুহু করে। বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, এর সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শিশু যৌনআচরণের ভিডিও হোস্ট করা ওয়েবসাইটের সংখ্যা।
আইডাব্লিউএফ গত বছর এ ধরনের ৬৩ হাজারেরও বেশি ওয়েবপেইজের খোঁজ পেয়েছে যা মহামারীর আগে ছিল পাঁচ হাজার।
আইডাব্লিউএফের প্রধান নির্বাহী সুসি হারগ্রিভস বলেন, “মহামারীর সময় ইন্টারনেট হয়ে উঠেছিল জিয়ন-কাঠি, তবে আমরা এতোদিনে কেবল এর পুরো প্রভাব দেখতে পাচ্ছি।”
“যে সত্যিটা বেরিয়ে এসেছে তা হলো, শিশুরা নিজের ঘরে থাকা অবস্থাতেও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।” - বলেন হারগ্রিভস।
আইডাব্লিউএফ বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট থেকে শিশু যৌন নিপীড়নের হাজার হাজার ঘটনা ট্র্যাক, তদন্ত এবং অপসারণের চেষ্টা করে।
সংস্থাটি জোর দিয়ে বলেছে, শিশুদের তৈরি এইসব ভিডিওর সংখ্যা আসলেই বেড়েছে, কারণ সংস্থাটির তথ্য সংগ্রহের ধরন সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বদলায়নি।
বিশ্লেষকরা যতো কনটেন্ট অনুসন্ধান করে পেয়েছেন, তার দুই-তৃতীয়াংশই এইসব শিশু নিপীড়নের ভিডিও, যেগুলো ধারণ করেছে নিপীড়িত শিশুরাই।
মূলত এইসব কনটেন্টে কোনো অনলাইন নিপীড়কের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে শিশুর তৈরি যৌনআচরণ থাকে।
বিশ্লেষকরা যতো কনটেন্ট অনুসন্ধান করে পেয়েছেন, তার দুই-তৃতীয়াংশই এইসব শিশু নিপীড়নের ভিডিও, যেগুলো ধারণ করেছে নিপীড়িত শিশুরাই।
গবেষকরা বলছেন, অনেক ভিডিও শোবার ঘর বা বাথরুম থেকে রেকর্ড বা লাইভস্ট্রিম করা হয়েছে, যেগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়াজে একটি ব্যস্ত পরিবারের কার্যাবলীর আভাস মেলে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো হয় লাইভ চ্যাটিংয়ে এবং শিশু নিপীড়করা এগুলো শিশুদের অজান্তেই রেকর্ড করে শেয়ার ও বিক্রি করার জন্য।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক আইডাব্লিউএফ বলেছে, ভিডিওগুলি থেকে শিশুদের অবস্থান নির্ধারণ করা প্রায়ই কঠিন। তবে, কোনো ভিডিওতে যদি স্কুল ইউনিফর্ম বা অন্যান্য সনাক্তযোগ্য চিহ্ন থাকে তাবে তারা এগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
আইডাব্লিউএফ বিশ্লেষকদের দেখা একটি ভিডিওতে নয় বছর বয়সী একটি মেয়েশিশুকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক নিপীড়করা তার শোবার ঘরে খেলনা পরিবেষ্টিত অবস্থায় যৌনআচরণের নির্দেশ দিতে দেখা গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা অনলাইন নিরাপত্তা বিলের মাধ্যমে শিশু সুরক্ষায় কাজ করার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আইডাব্লিউএফ।
এই আইনটিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলছে যাতে করে কোনো প্ল্যাটফর্মে শিশু নিপীড়নের কনটেন্ট পাওয়া গেলে এজন্য ওই প্ল্যাটফর্মকেও এজন্য দায়ী করা যায়।
তবে, আইডাব্লিউএফ বলছে, তাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এসব কনটেন্ট সারা বিশ্ব থেকেই আসছে এবং এর বেশিরভাগই যুক্তরাজ্যে হোস্ট করা নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লোয়েটেড চিলড্রেনের কাছে ২০২২ সালের পরিসংখ্যান নেই, তবে ২০২১ সালে শিশু যৌন নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। সংস্থাটির সাইবারটিপলাইন ২০২২ সালে ২৯ কোটি ৪০ লাখ প্রতিবেদন পেয়েছে, যা ২০২০ সালে ২ কোটি ১৭ লাখ ছিল।