এ কোম্পানির দাবি, বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় যুক্তির মাধ্যমে আরও সতর্কতার সঙ্গে ‘চিন্তা করতে’ সক্ষম নতুন এআই মডেলটি।
Published : 07 Dec 2023, 06:30 PM
সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল এআই চ্যাটবট বার্ডে নিজেদের সর্বশেষ ‘লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম)’ ‘জেমিনাই’কে যুক্ত করেছে।
এ কোম্পানির দাবি, বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় যুক্তির মাধ্যমে আরও সতর্কভাবে ‘চিন্তা করতে’ সক্ষম নতুন এআই মডেলটি।
এআইভিত্তিক কনটেন্ট তৈরির বিভিন্ন মডেল অনেক সময় এমন কিছু তৈরি করে ফেলে, যাকে নির্মাতারা ‘হ্যালুসিনেশন’ বা অমূলক বলে থাকেন।
গণিত ও মানববিজ্ঞান’সহ মোট ৫৭টি বিষয়ে জেমিনাইয়ের সমস্যা সমাধান ও জ্ঞানের দক্ষতা যাচাই করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
গুগল সিইও সুন্দার পিচাইয়ের মতে, এ বিশেষ মডেল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ‘নতুন যুগের’ প্রতিনিধিত্ব করে।
বছরের শুরুতে নিজস্ব এআই চ্যাটবট বার্ড উন্মোচনের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করেছিল গুগল। সে সময় এর উন্মোচনকে তারা ‘পরীক্ষামূলক’ বলেছিল।
সে সময় নমুনা সংস্করণেই ভুল করে বসে বার্ড, মহাকাশ বিষয়ক এক প্রশ্নের ভুল জবাব দিয়েছিল চ্যাটবটটি।
তবে নতুন মডেল নিয়ে বড় দাবি করেছে গুগল। একে এখন পর্যন্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে আসা ‘সবচেয়ে ক্ষমতাবান’ মডেল আখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক পরীক্ষায় এটি ‘মানব বিশেষজ্ঞদেরও ছাড়িয়ে যেতে পারে’ বলে দাবি করেছে তারা।
জেমিনাই বিভিন্ন লেখা, ছবি, অডিও চিনতে ও তৈরিতে সক্ষম হলেও এটি কোনো স্বনির্ভর মডেল নয়। বরং এটি একটি ‘ফাউন্ডেশনাল মডেল’ হিসেবে পরিচিত। এর মানে, ‘সার্চ’ ও ‘বার্ডের’ মতো গুগলের বিভিন্ন টুলে একে সমন্বিত করা যাবে।
এআই প্রতিযোগিতা
মার্কিন প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের বিশ্লেষক চিরাগ ডেকাটে বলছেন, টেক্সট বা পাঠ্য ছাড়াও বিভিন্ন সূত্র (যেমন ছবি) থেকে শেখার সক্ষমতা আছে জেমিনাইয়ের, যা এআই খাতে ‘নতুন মানদণ্ড’ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, এটি এমন উদ্ভাবন করতে সক্ষম, যা জেনারেটিভ এআই খাতের চেহারা পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।
এখন পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যাটজিপিটির মত ব্যবহারকারীর মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে গুগল। তবে কোম্পানির দাবি, বহুল ব্যবহৃত ৩২টি শিক্ষাবিষয়ক মানদণ্ডের ৩০টিতেই জিপিটি ৪-এর সক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে তাদের এআই মডেলের সবচেয়ে শক্তিশালী সংস্করণ জেমিনাই।
আগামী বছর বাজারে আসতে পারে ওপেনএআইয়ের আরেকটি শক্তিশালী এআই মডেল। কোম্পানির সিইও স্যাম অল্টম্যানের দাবি, এ পণ্য বাজারে এলে তাদের প্রচলিত পণ্যগুলোকে ‘সেকেলে’ মনে হবে।
তবে স্যাম অলটম্যানকে নিয়ে ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক গোলযোগ পণ্যটির উন্মোচনে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, এখনও তা দেখা বাকি।
এদিকে নিজস্ব এআই মডেল ‘এক্সএআই’ চালু করে ওপেনএআইয়ের জন্য প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। এমনকি মডেলটির গবেষণা ও বিকাশের জন্য একশ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছেন তিনি। এছাড়া, চীনা কোম্পানি বাইদুও নিজস্ব এআইভিত্তিক পণ্যের সহায়তায় এ খাতে এগিয়ে যাচ্ছে।
এ প্রযুক্তির বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিপজ্জনক কিছু ঘটার আশঙ্কাও বাড়ছে। ভবিষ্যতে এআইয়ের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য এআই নীতিমালা, এমনকি আইনও প্রণয়ন করারও চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশ।
গেল নভেম্বরে যুক্তরাজ্যে আয়োজিত এআই সম্মেলনেও আলোচনার কেন্দ্রে ছিল বিষয়টি। সেখানে এআই প্রযুক্তি নিরাপদ উপায়ে বিকাশের আহ্বান জানিয়ে এক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।
যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস বলেছিলেন, এ প্রযুক্তির সম্ভাব্য ঝুঁকি ‘দ্রুত ও সমন্বিত উপায়ে’ মোকাবেলা করতে হবে।