কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে ‘বড় অগ্রগতির’ ঘোষণা গুগলের

“প্রথমবারের মতো আমাদের কোয়ান্টাম এআই গবেষকরা পরীক্ষামূলকভাবে দেখিয়েছেন, কিউবিটের সংখ্যা বাড়িয়ে এর ত্রুটি কমানো সম্ভব।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2023, 08:29 AM
Updated : 23 Feb 2023, 08:29 AM

বিভিন্ন বাস্তব ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহারে বড় এক অগ্রগতির ঘোষণা দিয়েছেন প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের প্রকৌশলরা।

এই উদ্ভাবনের পর তারা কার্যকরী ও দরকারী কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির দিকে এগিয়ে গেছেন, যা প্রযুক্তিকে স্থবির করে দেওয়া সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে।

কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যৎ হিসেবে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংকে বিবেচনা করা হয়। আর সম্প্রতি ব্যবহৃত প্রচলিত কম্পিউটারগুলোর জন্য জটিল বা অসম্ভব, বিভিন্ন এমন গণনাও করা সম্ভব এর মাধ্যমে।

তবে, এগুলো ত্রুটিপ্রবণ হওয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগের বেলায় এটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে রয়েই গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

গুগলের গবেষকরা বলছেন, তারা এই প্রযুক্তি তৈরির এমন এক উপায় খুঁজে পেয়েছেন, যা এইসব ত্রুটি কমিয়ে আনে। কোম্পানি বলছে, এই অগ্রগতি তিন বছর আগের ‘কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি’ ঘোষণার সমতূল্য। আর এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কার্যকরী ব্যবহারের দিকে যাওয়ার মাইলফলক হিসেবে দাবি করছে গুগল।

গুগল কোয়ান্টাম এআই’র গবেষকরা বলেন, সিস্টেমের আকার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ত্রুটির মাত্রা কমিয়ে আনার এক উপায় খুঁজে পেয়েছেন। এক পর্যায়ে ‘ব্রেক-ইভেন পয়েন্টে’ যাওয়ার কথা বলছেন তারা।

গুগল কোয়ান্টাম এআই’র প্রকৌশল পরিচালক ড. হার্টমুট নেভেন বলেন, এ নিয়ে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ বাকি থাকলেও তিনি মনে করেন, এই পর্যায়ে তারা ‘আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বাণিজ্যিক ব্যবহারের’ প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন।

তিনি আরও যোগ করেন, “আর্থনীতির ভাষায়, আমরা ‘ব্রেক-ইভেন’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি, তবে তা মোটেই যথেষ্ট নয়।

“ত্রুটির হার আমাদের একেবারে তলানীতে নিয়ে যেতে হবে।”

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোয়ান্টাম কম্পিউটার ডেটা সঞ্চয় ও গণনার পেছনে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহার করে।

প্রচলিত কম্পিউটারে তথ্যের মৌলিক একককে ‘বিট’ বলে। আর এগুলো  সংরক্ষিত থাকে এক ও শূন্যের ধারা হিসাবে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার সিস্টেমে এইসব ইউনিট ‘কিউবিট’ নামে পরিচিত। আর এগুলো একই সময়ে এক ও শূন্য হিসেবে থাকতে পারে।

তাত্ত্বিকভাবে, এটি বিভিন্ন কোয়ান্টাম মেশিনকে প্রচলিত মেশিনের তুলনায় বেশি ‘কম্পিউটেশনাল’ ক্ষমতা দেয়। আর এটি বিভিন্ন এমন কাজ সম্পাদন করে, যেগুলো প্রচলিত কম্পিউটারে অনেক বছর সময় লেগে যায়।

এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর কোয়ান্টাম মেশিনের দিকে যাওয়ার অগ্রগতি তুলনামূলক ধীর - উল্লেখ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

এর কারণ হলো, কোয়ান্টাম কম্পিউটারে তথ্য প্রেরণের সক্ষমতা বেশ ভঙ্গুর। তাপমাত্রা ও পরিবেশগত হস্তক্ষেপ এই সমস্যার সম্ভবত অন্যতম কারণ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ক্ষমতা ব্যবহারের বেলায় এই ধরনের ত্রুটি নিয়ন্ত্রণ বা অপসারণ করা একটি বড় বাধা।

এই গবেষণায় ড. নেভেন ও তার সহকর্মীরা ৭২ কিউবিটের ‘সুপারকন্ডাক্টিং’ কোয়ান্টাম প্রসেসর বানিয়ে দুটো ভিন্ন ‘সারফেস কোড’-এর সহায়তায় এর পরীক্ষা চালান। এর একটি ৪৯ ভৌত কিউবিটে আর অন্যটি তুলনামূলক ছোট ১৭ ভৌত কিউবিটে চলেছে।

তারা দেখতে পান, ৪৯ ভৌত কিউবিটের তুলনামূলক বড় সারফেস কোড ছোট সারফেস কোডের তুলনায় ভালো কার্যকারিতা দেখিয়েছে।

“প্রথমবারের মতো আমাদের কোয়ান্টাম এআই গবেষকরা পরীক্ষামূলকভাবে দেখিয়েছেন, কিউবিটের সংখ্যা বাড়িয়ে এর ত্রুটি কমানো সম্ভব।” --এক ব্লগ পোস্টে বলেন গুগল ও অ্যালফাবেটের প্রধান সুন্দার পিচাই।

“আমাদের কোয়ান্টাম কম্পিউটার পরিচালনার উল্লেখযোগ্য এক পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এই অগ্রগতি।”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্যকর গণনার উদ্দেশ্যে ত্রুটির হার কমাতে আরও কাজ করতে হবে। তবে, তারা এ-ও বলেন, তাদের এই গবেষণা ‘ভবিষ্যতে এই ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য তাগাদা হিসাবে কাজ করবে।

গুগল কোয়ান্টাম এআই’র কোয়ান্টাম হার্ডওয়্যার বিভাগের পরিচালক ড. জুলিয়ান কেলি বলেন, “প্রকৌশলগত সীমাবদ্ধতা (কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির) অবশ্যই পেরোনো সম্ভব।”

“এটা বড় এক চ্যালেঞ্জ- এটা এমন কিছু, যা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। তবে তার মানে এই নয় যে আমরা বড় পরিসরে মেশিন তৈরি বন্ধ করে দেব।”

‘নেচার’ গবেষণা সমায়ীকিতে এ নিয়ে তাদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রের শিরোনাম ‘সাপ্রেসিং কোয়ান্টাম এররস বাই স্কেলিং এ সারফেস কোড লজিকাল কিউবিট’।