প্লেনটির নাম ‘এমকে-১১ অরোরা’, যা শব্দের গতিকে অতিক্রম করে মাক ১.১ গতিতে পৌঁছাছে। আর এর উচ্চতা ছিল সাড়ে ৮২ হাজার ফুট।
Published : 22 Nov 2024, 01:14 PM
সম্প্রতি সফলভাবে পরীক্ষামূলক ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে একটি যাত্রীবাহী প্লেন, যা ২০০৩ সালে অবসরে যাওয়া কনকর্ডের পর থেকে এ শ্রেণির কোনো প্লেনের ‘সুপারসনিক’ গতি তোলার প্রথম ঘটনা।
প্লেনটি বানিয়েছে নিউ জিল্যান্ডের এভিয়েশন কোম্পানি ‘ডন অ্যারোস্পেস’। কোম্পানিটি বলছে, তাদের বানানো এই রকেট ইঞ্জিন চালিত প্লেন পরবর্তীতে কক্ষপথে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এমনকি মহাকাশে নিয়মিত যাতায়াতের সুযোগও করে দিতে পারে।
“এ অর্জন হাইপারসনিক ভ্রমণ ও মহাকাশে দৈনিক যাতায়াতের লক্ষ্যমাত্রায় বড় এক ধাপ, যেখানে রকেট ইঞ্জিন চালিত এই প্লেনটির সম্ভাবনা রয়েছে নতুন শ্রেণির উচ্চ কার্যকারিতাসম্পন্ন যান হয়ে ওঠার” এক বিবৃতিতে বলেছে কোম্পানিটি।
মঙ্গলবার প্লেনের ফ্লাইট সফল হওয়ার ঘোষণা এলেও এর পরীক্ষা হয়েছে ১২ নভেম্বর, নিউ জিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ড দ্বীপে অবস্থিত মাউন্ট কুকের কাছাকাছি জায়গায়।
প্লেনটির নাম ‘এমকে-১১ অরোরা’, যা শব্দের গতিকে অতিক্রম করে মাক ১.১ গতিতে পৌঁছাছে। আর এর উচ্চতা ছিল সাড়ে ৮২ হাজার ফুট।
মাক হল শব্দের গতির সাপেক্ষে গতির একক। তাই মাক ১.১’র মানে দাঁড়ায়, এটি শব্দের চেয়েও ১০ শতাংশ দ্রুতগতির।
“এ মাইলফলক রকেটের ইঞ্জিনচালিত এয়ারক্রাফট ব্যবহারের অপার সম্ভাবনা তুলে ধরে, যেখানে এমন কার্যকারিতা অর্জন করা সম্ভব, যা এর আগে কখনও দেখা যায়নি,” বলেছেন ডন অ্যারোস্পেস’র প্রধান নির্বাহী স্টেফান পাওয়েল।
অরোরা প্লেনটি এমনভাবে নকশা করা যাতে এটি পুরোপুরি চালু হওয়ার পর দিনে অন্তত দুইবার মহাকাশের দ্বারপ্রান্তে উড়ে যেতে পারে। কোম্পানির দাবি, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বের হওয়া ও পুনরায় প্রবেশের সময় এর গতি সাড়ে তিন মাক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
কনকর্ডের গৌরবময় দিন কি আবার ফিরে আসছে?
২০০৩ সালের ২৬ নভেম্বর কনকর্ডের সর্বশেষ সুপারসনিক যাত্রীবাহী ফ্লাইটের পর অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন, ‘সুপারফাস্ট’ ভ্রমণের দিনগুলো বোধ হয় ফুরিয়ে গেল।
যখন প্লেনটি শব্দের গতিকে অতিক্রম করত তখন ‘সনিক বুম’ বলে একটি ঘটনা ঘটত, যেটি আসলে কানে তালা লাগানোর মতো বিকট আওয়াজ। আর, প্লেনটি চালানোও খরচসাপেক্ষ ছিল।
তবে, মাত্র কয়েক ঘণ্টায় যাত্রীদের ফের আটলান্টিক পারাপার করানোর লক্ষ্যে একাধিক কোম্পানি কাজ করে যাচ্ছে।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, নাসা ও লকহিড মার্টিন মিলে বিশ্বের প্রথম ‘নিঃশব্দ সুপারসনিক এয়ারক্রাফট’ বানিয়েছে, যেখানে ‘সনিক বুম’-এর পরিবর্তে ‘সনিক থাম্প’ তৈরি হয়।
সামনের বছর বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে এটি পরীক্ষা হবে। এর পর ‘এক্স-৫৯’ নামের এই প্লেন দিয়ে আমেরিকার বিভিন্ন শহরের ওপর দিয়ে ‘কোয়েস্ট’ নামে একটি ক্রু মিশন পরিচালনার কথা আছে, যেখানে লোকজন সনিক থাম্পের ঘটনা টের পান কি না বা এর বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখান কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক এগোলে, ২০৩০ সাল নাগাদ তারা নিয়ন্ত্রকদেরকে নিজেদের বিভিন্ন অনুসন্ধান জমা দেবেন যাতে শান্ত প্রকৃতির সুপারসনিক ভ্রমণের নতুন যুগ শুরু করা যায়।