আইফোন হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ‘মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তির’ অভিযোগ রাশিয়ার

এফএসবি বলেছে, এই গুপ্তচরবৃত্তি পরিকল্পনায় অ্যাপল ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএ’র মধ্যে ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা’ লক্ষ্য করা গেছে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2023, 06:33 AM
Updated : 3 June 2023, 06:33 AM

অত্যাধুনিক নজরদারি সফটওয়্যারের সহায়তা নিয়ে হাজার হাজার আইফোন ডিভাইসে প্রবেশের মাধ্যমে মার্কিন এক গুপ্তচরবৃত্তি অভিযানের অভিযোগ তুলেছে রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা ‘ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি)’।

মস্কোভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ‘ক্যাসপারস্কি ল্যাব’ বলেছে, এই আক্রমণে তাদের বেশ কয়েকজন কর্মীর ডিভাইসও আক্রান্ত হয়েছে।

সোভিয়েত যুগের গোয়েন্দা সংস্থা ‘কেজিবি’র মূল উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত এফএসবি এক বিবৃতিতে বলেছে, এই কার্যক্রমে বেশ কয়েক হাজার অ্যাপল ডিভাইস সংক্রমিত হয়েছে। আক্রান্তের তালিকায় রুশ গ্রাহকদের পাশাপাশি রাশিয়া ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে কর্মরত বিদেশী কুটনিকরাও রয়েছেন।

“বিভিন্ন অ্যাপল মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে আমেরিকান বিশেষ বাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রম উদ্ঘাটন করেছে এফএসবি” --বিবৃতিতে বলেছে সংস্থাটি।

এফএসবি বলেছে, এই গুপ্তচরবৃত্তি পরিকল্পনায় অ্যাপল ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ)’র মধ্যে ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা’ লক্ষ্য করা গেছে।

তবে, অ্যাপল এই গুপ্তচরবৃত্তি পরিকল্পনায় সহায়তা করেছে বা এটি সম্পর্কে জানত, এমন কোনো প্রমাণ দেয়নি এফএসবি।

বিবৃতিতে এই অভিযোগ নাকচ করেছে অ্যাপল।

“অ্যাপলের পণ্যে এমন ব্যবস্থা প্রবেশ করিয়ে আমরা কখনও কোনো সরকারের সঙ্গে কাজ করিনি ও করবও না।” --বিবৃতিতে বলেছে কোম্পানিটি।

এই প্রসঙ্গে রয়টার্সকে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি এনএসএ।

ক্যাসপারস্কির প্রধান নির্বাহী ইউজিন ক্যাসপারস্কি টুইট করেন, এই অভিযানে তার কোম্পানির বেশ কিছু কর্মীর ফোন আক্রান্ত হয়েছে। আর তার কোম্পানি একে বর্ণনা করেছে ‘অত্যন্ত জটিল, পেশাদারী উপায়ে করা সাইবার আক্রমণ’ হিসেবে, যা ‘উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের’ কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।

ক্যাসপারস্কির গবেষক ইগোর কুজনেতসোভ রয়টার্সকে বলেন, বছরের শুরুতে তার কর্পোরেট ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে অস্বাভাবিক ডেটা প্রবাহ খুঁজে পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারের আগ পর্যন্ত ক্যাসপারস্কি নিজেদের অনুসন্ধানের কথা রাশিয়ার ‘কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেস্পন্স টিম’কে জানায়নি।

তিনি আরও বলেন, এই হ্যাকিং কার্যক্রমের পেছনে আমেরিকানরা দায়ী বা এতে আরও হাজার হাজার শিকার বানানো হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।

“কাউকে কোনো কিছুতে দায়ী করা খুবই কঠিন।” --বলেন তিনি।

এক ব্লগ পোস্টে ক্যাসপারস্কি বলেছে, এই সংক্রমণের সবচেয়ে পুরোনো নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেছে ২০১৯ সালে।

“২০১৯ সালের জুনে শুরু হওয়া এই আক্রমণ ক্যাসপরস্কির প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত চলছে।” --বলেছে কোম্পানিটি। তারা আরও যোগ করে, নিজেদের কর্মীরা আক্রান্ত হলেও কোম্পানি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী যে, ক্যাসপারস্কি এই সাইবার হামলার মূল লক্ষ্য ছিল না।

এফএসবি বলেছে, এই হ্যাকিং কার্যক্রমে মার্কিন হ্যাকাররা ইসরায়েল, সিরিয়া, চীন ও নেটো সদস্যভুক্ত দেশগুলোর বিভিন্ন কুটনীতিকের ডিভাইসও শিকার হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে রয়টার্সকে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। আর চীন, সিরিয়া ও নেটোর মুখপাত্ররাও তাৎক্ষণিক মন্তব্য জানাতে পারেননি।

‘নাক গলাচ্ছে’ যুক্তরাষ্ট্র?

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ‘বেলফার সেন্টার সাইবার ২০২২ পাওয়ার ইনডেক্স’-এর তথ্য বলছে, পরিকল্পনা ও ক্ষমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষ সাইবার শক্তি। এর পরবর্তী স্থানে রয়েছে যথাক্রমে চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া।

ক্রেমলিন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উভয়ই বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনার কথা বলছে।

“যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মোবাইল ফোনে থাকা সফটওয়্যার দুর্বলতা ব্যবহার করে এইসব লুকানো তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।” --এক বিবৃতিতে বলেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

“ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অজান্তে বিশাল ডেটা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে কয়েক দশক ধরেই বিভিন্ন আইটি কোম্পানি ব্যবহার করে আসছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।”

রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলেন, এফএসবি’র কর্মকর্তা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ফেডারেল গার্ডস সার্ভিস (এফএসও)’র যৌথ প্রচেষ্টা হিসেবে এই চক্রান্ত প্রকাশ পেয়েছে। একসময় কেজিবি’র নবম অধিদপ্তর হওয়ার পাশাপাশি ক্রেমলিন বডিগার্ডও পরিচালনা করে এই ক্ষমতাধর সংস্থাটি।

পশ্চিমা গোয়েন্দাদের ভাষ্যমতে, রাশিয়ার কর্মকর্তারা তাদের দেশে অত্যন্ত পরিশীলিত নজরদারি কাঠামো তৈরি করেছে। আর তারা দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, দেশটির ‘প্রেসিডেন্সিয়াল প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাই জানতেন যে, আইফোনের মতো গ্যাজেটগুলো একেবারেই স্বচ্ছ।

এই বছরের শুরুতে ২০২৪ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের আইফোন ব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানায় ক্রেমলিন। এই ধরনের ডিভাইসের সঙ্গে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার যোগসূত্রতার শঙ্কাকে এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রাশিয়ার সংবাদপত্র ‘কমার্স্যান্ট’।