দেড়শ বর্গমিটারের দেয়ালকে এইসব প্যানেল দিয়ে আবৃত করলে তা প্রায় এক টন পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ধরে রাখতে পারে।
Published : 12 Aug 2024, 01:04 PM
বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে, এমনই এক যুগান্তকারী ভবন তৈরির নতুন উপাদান বানানোর দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
নতুন এ উপাদানটির বহুল ব্যবহার নির্মাণ শিল্পে কার্বন নির্গমন অনেক কমিয়ে আনতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
এ উদ্ভাবনী উপাদানটি বানিয়েছেন ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল)’-এর ‘বায়ো-ইন্টিগ্রেটেড ডিজাইন প্রোগ্রামের’ একজন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।
নতুন এ উপাদানকে ডাকা হচ্ছে ‘সায়ানোব্যাকটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারড লিভিং ম্যাটেরিয়াল (সি-এল্ম)’ নামে, যা স্কটল্যান্ডের ‘সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বোটানিক গার্ডেন’-এর একটি শৈল্পিক কারুকার্যের অংশ হিসাবে প্রদর্শিত হয়েছে।
এটি বিভিন্ন স্বচ্ছ প্যানেল নিয়ে গঠিত, যা জ্যান্ত ‘সায়ানোব্যাকটেরিয়া’ ধারণ করতে সক্ষম। সায়ানোব্যাকটিরিয়া ক্ষুদ্র এক ধরনের জীব, যেটি উদ্ভিদের মতোই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালাতে সক্ষম।
এইসব ব্যাকটেরিয়া বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে, যা পরবর্তীতে রূপান্তরিত হয় ক্যালসিয়াম কার্বনেটে। এটি এমন এক ধরনের শক্ত উপাদান, যা কার্বন আটকে রাখে ও বায়ুমণ্ডল থেকে কার্যকর উপায়ে কার্বন সরিয়ে ফেলে।
এক কিলোগ্রাম ‘সি-এল্ম’ উপাদান থেকে সাড়ে তিনশ গ্রাম পর্যন্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করা যায়। সে তুলনায়, এক কিলোগ্রাম গতানুগতিক কংক্রিট উৎপাদনের সময় এর থেকে পাঁচশ গ্রাম পর্যন্ত কার্বন নির্গত হতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে, দেড়শ বর্গমিটারের দেয়ালকে এইসব প্যানেল দিয়ে আবৃত করলে তা প্রায় এক টন পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ধরে রাখতে পারে।
এ উদ্ভাবনের পেছনে কাজ করা শিক্ষার্থী প্রান্তর তামুলি বলেছেন, তার লক্ষ্য ছিল, ভবন নির্মাণ শিল্প বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী কাজ হিসেবে পরিচিতি পেলেও একে কার্বন পৃথক করার অন্যতম প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করা।
তামুলি এ উপাদান তৈরির অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন ‘স্ট্রোমাটোলাইট’ থেকে, যা শৈবালে আটকা পড়া পলির স্তর থেকে গঠিত প্রাচীন এক ধরনের কাঠামো। তিনি সি-এল্ম নামের এ উপাদানটি উদ্ভাবন করেছিলেন কোভিড লকডাউনের সময়, যেখানে কোনও পরীক্ষাগার বা পেশাদার টুল ছাড়াই বাড়ি থেকে কাজ করেছেন তিনি।
এইসব প্যানেলে যে নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়েছে, তা ‘ক্যাম্পটোনেমা অ্যানিমেল’ নামে পরিচিত। এটি দীর্ঘ সময় ধরে বেড়ে ওঠে ও সহজেই বিভিন্ন প্যানেলে বসানো যায়।
যেহেতু এইসব ব্যাকটেরিয়া থেকে ক্যালসিয়াম কার্বনেট তৈরি হয়, তাই এগুলো বিভিন্ন প্যানেলকে আরও টেকসই, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব করে তোলে।
সি-এল্ম প্যানেল শুধু পরিবেশগত সুবিধাই দেয় না, বরং এগুলো ওজনে হালকা ও শব্দকে শোষণ করতে পারে, যার ফলে আলো সহজেই আসা যাওয়া করতে পারে। আর এগুলো তাপ নিরোধক হওয়ায় ভবনের শক্তি কার্যকারিতাও উন্নত হয়।
ইউসিএল’-এর বায়ো-ইন্টিগ্রেটেড ডিজাইন প্রোগ্রামের সহ-পরিচালক অধ্যাপক মার্কোস ক্রুজের দাবি, এই জৈব উপাদানটি বড় সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। আর একে বড় পরিসরে উৎপাদন করে এর বহুল ব্যবহারের প্রচলন শুরু করা গেলে সেটি নির্মাণ শিল্প থেকে সৃষ্ট কার্বনের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনতে পারে।