চীনের এআই প্রকল্পে ‘গভীরভাবে শঙ্কিত’ এফবিআই প্রধান

“এটি এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে আমরা গভীরভাবে শঙ্কিত। আর আমি মনে করি, এটি নিয়ে সকলেরই উদ্বেগ থাকা উচিৎ।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2023, 11:25 AM
Updated : 21 Jan 2023, 11:25 AM

চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক প্রকল্প নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই প্রধান ক্রিস্টোফার রে। তিনি বলছেন, প্রকল্পটি ‘আইনি উপায়ে নিয়ন্ত্রিত’ হচ্ছে না।

রে আরও বলেন, আগের চেয়ে বেশি হ্যাকিং কার্যক্রম পরিচালনা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরির পাশাপাশি চীনে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের উদ্দেশ্যে বেইজিংয়ের এটি ব্যবহার করার সম্ভাবনায় তিনি ‘গভীরভাবে শঙ্কিত’।

“এটি এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে আমরা গভীরভাবে শঙ্কিত। আর আমি মনে করি, এটি নিয়ে সকলেরই উদ্বেগ থাকা উচিৎ।” --সুইজারল্যান্ডের ডাভোস শহরে আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের’ আলোচনা পর্বে বলেন তিনি।

সেপ্টেম্বরে মার্কিন অলাভজনক সংস্থা ‘স্পেশাল কম্পিটেটিভ স্টাডিস প্রজেক্ট (এসসিএসপি)’র প্রকাশিত প্রতিবেদনেও এই শঙ্কার বিষয়টি উল্লেখ করেন রে। আর এতে সতর্কবার্তা রয়েছে, মাইক্রোইলেকট্রনিক্স, ৫জি ও এআই, এই তিনটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র হয়তো চীনের সঙ্গে টিকে থাকতে পারবে না।

চারটি পর্ষদ বৈঠক ও ২৬টি প্যানেল বৈঠকে উপস্থিত দুইশ ২৫ জনের বেশি বিশেষজ্ঞ, সরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও অন্যান্য ব্যক্তির পাশাপাশি চারশটি সম্পৃক্ত তথ্যের ফলাফল হিসেবে এসসিএসপি’র প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে।

এতে সতর্কবার্তা রয়েছে– মার্কিন প্রযুক্তিগত সুবিধায় বিনিয়োগ, শিল্প ভিত্তিকে শক্তিশালী করা এবং ‘গণতান্ত্রিক ও দায়িত্বশীল’ উপায়ে সর্বজনীনভাবে বিভিন্ন ‘নাড়িয়ে দেওয়া’ প্রযুক্তি স্থাপনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যেতে পারে।

২০২১ সালে বিভিন্ন শিক্ষা বিষয়ক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকের চীনা বিনিয়োগ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

এর আগের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইনটেল, এনভিডিয়া, এএমডি ও মাইক্রোসেমি’সহ অনেক মার্কিন চিপ নির্মাতা কোম্পানি চীনে উন্নতমানের প্রসেসর তৈরিতে সহায়তা করছে।

এর ফলে, চীনের কাছে সেমিকন্ডাক্টর চিপ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

গত কয়েক বছর ধরে চীন এইসব জায়গায় ভালোই অগ্রগতি দেখিয়েছে। এসসিএসপি’র প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ‘বিপজ্জনক ও অনিচ্ছাকৃতভাবেই কৌশলগত প্রযুক্তির সামগ্রিক ব্যবস্থার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ গঠনের ক্ষমতা ছাড়ার কাছাকাছি অবস্থানে চলে যাচ্ছে’।

“চীন হলো যুক্তরাষ্ট্রের মূল আদর্শিক প্রতিপক্ষ, সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে দক্ষ সমকক্ষ ও সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী। এই প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে রয়েছে প্রযুক্তি।” -- এসসিএসপি’র প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে বলেন পর্ষদের উপদেষ্টা সদস্য নাদিয়া শাডলো।

“আমরা ৫জি ও মাইক্রোইলেকট্রনিক্স সরবরাহ চেইনের মতো ‘নাগাল পেতে দেওয়ার’ খেলা চালিয়ে যেতে পারি না। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সংগঠিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কৌশলগত ও প্রযুক্তিগত বাজি ধরতে হবে। আর বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ও প্রযুক্তি খাতে প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহে সহায়তার পাশাপাশি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গেও মানিয়ে নিতে হবে।” --বলেন এসসিএসপি প্রধান ইল্লি বাজরাকটারি।

ওই প্রতিবেদনে চীনের বিশ্বব্যাপী নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপনে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে এআই খাতে বেইজিংয়ের চেয়ে ভালো ফলাফল দেখানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

“প্রযুক্তি খাত দ্রুতই বিকশিত হচ্ছে। আর চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেন হেরে না যাই, সেটি নিশ্চিত করতে আমাদের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।” --বলেন এসসিএসপি’র ‘বোর্ড অফ অ্যাডভাইজার’ মিশেল ফ্লাওয়ারনয়।