স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিন শহরের এ চিকিৎসক এমন এক প্রচলিত কৌশল গ্রহণ করেছেন, যার মাধ্যমে টিউমারের বৃদ্ধি ঠেকানো গেছে। আর এ অস্ত্রোপচারের পর রোগীর চোখে শুধু একটি কালো রঙের ছোট দাগ থেকে যায়।
Published : 26 Oct 2024, 03:18 PM
রোগীর চোখের ভ্রু দিয়ে মস্তিষ্কের টিউমার সরাতে নতুন এক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন স্কটিশ এক নিউরোসার্জন। আকারে ‘বড় আপেলের সমান’ ওই টিউমার অপরেশন করে ইতিহাসে নাম লেখালেন আনাস্তাসিওস গিয়ামোরিয়াদিস নামের ওই চিকিৎসক।
স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিন শহরের এ চিকিৎসক এমন এক প্রচলিত কৌশল গ্রহণ করেছেন, যার মাধ্যমে টিউমারের বৃদ্ধি ঠেকানো গেছে। আর এ অস্ত্রোপচারের পর রোগীর চোখে শুধু একটি কালো রঙের ছোট দাগ রয়ে গেছে।
তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে করা এ অপরেশনের পর কোনো কোনো রোগী অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টা পরই হাসপাতাল ছেড়ে দিতে পারবে বলে উঠে এসেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে। এমনকি কয়েক দিনের মধ্যে তারা কাজেও যোগ দিতে পারেন বলে দাবি করেছেন চিকিৎসক গিয়ামোরিয়াদিস।
“এ অপারেশনের পর রোগী সঙ্গে সঙ্গেই উঠে দাঁড়াতে এমনকি কখনও কখনও অপারেশনের পরের দিনই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, যারা আমাদের বিবেচনায়, দ্রুত ও ভালোভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন,” বলেন গিয়ামোরিয়াদিস।
মস্তিষ্কের অগ্রভাগ দিয়ে টিউমার বের করার প্রক্রিয়া, যা ‘ক্র্যানিওটমি’ নামেও পরিচিত, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সাধারণত মাথার খুলির বড় অংশ সরিয়ে ফেলতে হয়। ফলে, মস্তিষ্কের সুস্থ সবল অংশগুলো উন্মুক্ত হয়ে যায়।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা ‘এনএইচএস’-এর গ্রাম্পিয়ান (স্কটল্যান্ডের মাঝামাঝি অবস্থিত পর্বতমালা) অংশে কাজ করা গিয়ামোরিয়াদিস বলেছেন, তার কাছে এ ধরনের সার্জারি নতুন কিছু নয়। কিন্তু তিনি এ পদ্ধতির মধ্যে সামান্য পরিবর্তন এনেছেন যাতে ‘চোখের ভ্রু দিয়ে বড় বড় টিউমার বের করে আনার মতো যথেষ্ঠ জায়গা’ মেলে।
এই প্রক্রিয়াকে ‘গেইম-চেঞ্জার ও তুলনামূলক কম ঝুঁকির’ বলেও আখ্যা দেন তিনি।
“প্রচলিত উপায়ে রোগীদের পুরো কপালজুড়ে দাগ থেকে যায়। কিন্তু এ পদ্ধতিতে সেটা এড়ানো সম্ভব।”
“এর আগে ক্র্যানিওটমি’র জন্য আমাদেরকে গোটা মাথার খুলি ঘেঁটে দেখতে হতো, যা খুবই সময়সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে টিউমারের কাছাকাছি যেতেই তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। আর এর সম্পূর্ণ অপারেশনে সময় লেগে যায় আট থেকে ১০ ঘণ্টা।”
চোখের ভ্রু দিয়ে টিউমার বের করে আনার এই পদ্ধতি ‘মডিফাইড আইব্রো কিহোল সুপ্রাঅরবিটাল অ্যাপ্রোচ ফর ব্রেইন টিউমার্স’ নামে পরিচিত। গত বছর বিদেশ থেকে ক্র্যানিওটমি করিয়েছিলেন ৭৫ বছর বয়সী ডরিন অ্যাডামস।
“ক্র্যানিওটমি’র পর সুস্থ হয়ে ওঠা খুবই জটিল। এর পরপরই আমি সেপসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক সপ্তাহ অসুস্থ ছিলাম। সুস্থ হয়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছিল আমার। দূর্ভাগ্যবশত, ওই সার্জারিতে কাজ হয়নি,” বলেন তিনি।
“আমার কাছে, এ দুই অস্ত্রোপচারের মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। দ্বিতীয় বারে আমি আগের চেয়ে অনেক দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছি। অস্ত্রোপচারের দুই দিন পরই আমি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাই এবং প্রায় তাৎক্ষণিকভাবেই নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পেরেছি।”
এখন পর্যন্ত ৪৮ জন রোগীর ওপর নতুন এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করেছেন গিয়ামোরিয়াদিস ও তার দল।
মডিফাই করা এ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “এ প্রক্রিয়ায় যে বড় বড় টিউমার অপসারণ করা যায়, এর নজির বিশ্বের অন্য কোথাও আছে কি না, তা আমাদের জানা নেই।”
গিয়ামোরিয়াদিস আশা করছেন, এ নতুন উন্নত পদ্ধতি কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি’র সহায়তায় একসময় তা অন্যান্য সার্জনকে শেখাতে পারবেন তিনি।