এটি ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে সবচেয়ে বড় ধ্বংসাবশেষ মহাকাশে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা।
Published : 20 Apr 2024, 02:36 PM
নাসা’র এক ব্যাটারি প্যাকেজের টুকরো দেশটির ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের এক বাড়ির ছাদে ও মেঝেতে ভেঙে পড়েছে বলে সম্প্রতি নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।
মহাকাশ গবেষণার অংশ হিসেবে উপরে যা কিছুই পাঠানো হোক, তা অবশ্যই এক সময় নিচে নেমে আসবে। আর এসব কিছু নিচে নামার সময় যদি বায়ুমণ্ডলে পুড়ে না যায়, তবে তা পৃথিবীর কোথাও না কোথাও আঘাত করবে।
দেখা যাচ্ছে, এক্ষেত্রে কোনো জনপদই নিরাপদ নয়।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা আইএসএস থেকে বিভিন্ন মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ নিচে নামানোর ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করা হয়। এমনকি এসব জিনিসপত্রের ভর পরিমাপ ও হিসাব এমনভাবে করা হয়, যাতে এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের সময় এগুলো পুড়ে যায়। তবে, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে নাসা’র পরিকল্পনা অনুযায়ী এমনটা হয়নি।
এর শুরু হয় ২০২১ সালে, যখন মহাকাশচারীরা আইএসএস-এর বিভিন্ন ‘নিকেল হাইড্রাইড’ ব্যাটারিকে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করেছিলেন।
এটি মূলত নাসা’র একটি পাওয়ার সিস্টেম আপগ্রেডের অংশ ছিল, যেখানে প্রায় ২৬৩০ কেজির বিভিন্ন মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যাটারিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০২১ সালের ৮ মার্চ গ্রাউন্ড কন্ট্রোলার বা স্থল নিয়ন্ত্রকরা আইএসএস-এর রোবোটিক আর্ম ব্যবহার করে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ব্যাটারিতে পূর্ণ একটি প্যালেট মহাকাশে ছেড়ে দেন।
এটি ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে সবচেয়ে বড় পরিত্যাক্ত প্যাকেজ মহাকাশে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা। নাসা’র হিসাব মতে, ২০২৪ সালের ৮ মার্চ এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় পুড়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে, শেষপর্যন্ত যে সেটি হয়নি ফ্লোরিডার ঘটনাই তার প্রমাণ।
ফ্লোরিডা শহরের বাড়ির মালিক আলেহান্দ্রো ওটেরো নেপলস। ৮ মার্চ তার বাড়ির ছাদে বিকট শব্দে কিছু একটা বিধ্বস্ত হয়। ওটেরো সে সময় বাড়িতে ছিলেন না।
“বিকট শব্দে এটি বাড়িতে এসে পড়েছে। আঘাত থেকে আমার ছেলে কোনোরকমে বেঁচে গিয়েছে।” মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর অধিভুক্ত ‘উইঙ্ক’ নিউজকে বলেছেন ওটেরো।
“বাড়িকে একদম এফোরওফোর করে দিয়েছে। বাড়ির ছাদে বিশাল ফুটা ও মেঝেতে বড় গর্ত হয়েছে এর ফলে।” - বলেন ওটেরো।
“কপাল ভালো যে, হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
তবে, কেউ আহত না হলেও নাসা এ দুর্ঘটনাটিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট ‘ইউনিভার্স টুডে’।
এ বিষয়ে ওটেরো নাসা’কে সহযোগিতা করেন এবং ফ্লোরিডার ‘কেনেডি স্পেস সেন্টারে’ ওটেরোর বাড়িতে পতিত বস্তুটির পরীক্ষা করে নাসা। সংস্থাটি বলছে, ধ্বংসাবশেষটি একটি স্ট্যাঞ্চিয়ন বা কোনো কিছুকে তুলে ধরার জন্য খাড়া লম্বা খুঁটির অংশ ছিল, যেটি এক বিশেষ কার্গো প্যালেটে পুরানো বিভিন্ন ব্যাটারি মাউন্ট করতে ব্যবহৃত হয়েছিল।
স্টাঞ্চিয়নটি উচ্চ তাপসহ চরম পরিবেশে টিকে থাকার জন্য ‘সুপারঅ্যালয় ইনকোনেল’ দিয়ে তৈরি। এর ওজন প্রায় ৭২৫ গ্রাম, আর উচ্চতা ও ব্যাস যথাক্রমে প্রায় ১০ সেমি ও ৪ সেমি।
“আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তদন্ত করবে, পাশাপাশি এ ধ্বংসাবশেষটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় পুড়ে যাওয়ার পরিবর্তে অক্ষত থাকার কারণ বের করতে পুনরায় এর প্রবেশের বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে মডেলিং ও বিশ্লেষণও আপডেট করা হবে,” এক বিবৃতিতে বলেছে নাসা।
নাসার তদন্তকারীরা এখন বোঝার চেষ্টা করছেন, পুনঃপ্রবেশের সময় কীভাবে এ ধ্বংসাবশেষটি পুড়ে না গিয়েও অক্ষত ছিল। নাসার প্রকৌশলীরা মূলত বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করেন এটা বোঝার জন্য যে, এসব বস্তু কীভাবে পুনরায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় তাপে প্রতিক্রিয়া করে ও একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যায়। আর এ দুর্ঘটনাটি সেইসব মডেলকে পরিমার্জন করবে। প্রকৃতপক্ষে যখনই কোনো বস্তু ভূমিতে এসে পড়ে তখনই এসব মডেলকে আপডেট করা হয়।
তবে, ওটেরোর জন্য এ দুর্ঘটনাটি ছিল এক দুর্দান্ত গল্পের পাশাপাশি এক বীমা দাবির চেয়েও বড় কিছু। কারণ, এতে ক্ষতি অনেক বেশি হতে পারত।