বিবিসি’র বর্ণনা অনুযায়ী, দ্বিতীয় পর্বে আছে ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম।
Published : 27 Jan 2023, 01:03 PM
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিয়ে বিবিসি’র তথ্যচিত্র সম্প্রচার বন্ধে দেশটির সরকারকে সহায়তার অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন টুইটারের মালিক ইলন মাস্ক।
ওই তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে ২০২২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় মোদীর ভূমিকার বিষয়টি। তথ্যচিত্রটির নাম ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’।
নিজেকে ‘বাক স্বাধীনতার ধারক’ হিসেবে দাবি করা মাস্ক ভারতে প্ল্যাটফর্মটির কার্যক্রম সম্পর্কিত দায়ভার নিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, নিজের অন্য দুই কোম্পানি টেসলা ও স্পেসএক্স পরিচালনার পাশাপাশি টুইটারের সকল বিষয় তার পক্ষে ‘রাতারাতি সমাধান করা’ সম্ভব নয়।
ব্যবহারকারীদের এই তথ্যচিত্র শেয়ার করা থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি ভারত সরকারের দাবি মেনে চলায় সমালোচনার মুখে পড়েছে গুগল মালিকানাধীন ইউটিউব ও মাস্কের টুইটার।
তথ্যচিত্রটি প্রথমবারের মতো গুজরাট দাঙ্গার পেছনে মোদীকে ‘সরাসরি দায়ী’ করেছে। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন হাজার হাজার মুসলমান ধর্মাবলম্বী হত্যার ঘটনা ঘটে সে সময়।
ভারতের বিশেষ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ব্যবহার করে ইউটিউব ও টুইটারকে দুই পর্বের এই তথ্যচিত্র সম্পর্কিত কনটেন্ট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। শনিবার টুইটারে বিষয়টি জানান দেশটির সরকারের পরামর্শক কাঞ্চান গুপ্তা।
ভারতের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যচিত্রের অনানুষ্ঠানিক স্ক্রিনিং বন্ধের প্রচেষ্টাও চালিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে দিল্লি’র ‘প্রিমিয়ার সোশাল সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও ‘জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি’তে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধের বিষয়টিও।
‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’ নামের বামপন্থী সংগঠন বুধবার দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটিতে এই তথ্যচিত্র দেখানোর প্রচেষ্টার পর বেশ কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
Heavy force deployed outside the #Jamia Millia Islamic after SFI has decided to screen the #BBC documentary at 6 PM today. pic.twitter.com/VfwZNzgSL4
— Meer Faisal (@meerfaisal01) January 25, 2023
এই তথ্যচিত্র সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় দেশটির বিরোধী দলগুলোর ব্যপক সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার।
“আপনারা সংবাদমাধ্যম দমাতে বা এতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন, আপনারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন…তবে সত্য আসলে সত্যই। এর খুব বাজে অভ্যাস যে এটি বেরিয়ে আসে।” --বলেন ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী।
তৃণমূল কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত এমপি মহুয়া মইত্রা তথ্যচিত্রের এক লিঙ্ক টুইট করেন, “ভালো, খারাপ বা বীভৎস – সিদ্ধান্ত আমরা নেব। সরকার বলে দিতে পারে না, আমাদের কী দেখতে হবে।”
যুক্তরাজ্যের দর্শকদের জন্য গত সপ্তাহে তথ্যচিত্রের প্রথম পর্ব প্রকাশ করেছে বিবিসি। আর দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ পেয়েছে গেল মঙ্গলবার। বিবিসি’র বর্ণনা অনুযায়ী, এতে ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম দেখানো হয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটিত এই দাঙ্গায় প্রায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন, যার বেশিরভাগই মুসলমান ধর্মাবলম্বী। সে সময় গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদী।
Here’s a new link that works.
— Mahua Moitra (@MahuaMoitra) January 24, 2023
Good, bad, or ugly - we decide. Govt doesn’t tell us what to watch.#BanCensorshiphttps://t.co/jYy57ymOyl
এই সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে গুজরাটের গোধরা স্টেশনের ‘সবরমতি এক্সপ্রেস’ নামের ট্রেনে আগুন দেওয়ায় ৫৯ জন নিহত হওয়ার একদিন পর। তাদের মধ্যে অনেকেই হিন্দু সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন।
গত সপ্তাহে এই তথ্যচিত্রকে ‘সাজানো প্রোপাগান্ডা পিস’ বলার পাশাপাশি একে ‘একতরফা’ ও ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতার ধারাবাহিকতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক বিবৃতিতে বিবিসি জানিয়েছে, এই তথ্যচিত্র ‘কঠোরভাবে গবেষণা’ করা ও এতে বিভিন্ন ধরনের মতামত উঠে এসেছে।
“আমরা ভারতীয় সরকারকে এই সিরিজ নিয়ে জবাব দেওয়ার সুযোগ দিয়েছি — তবে তারা প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।” --বিবৃতিতে বলেছে বিবিসি।