সম্প্রতি এক ভিডিও’তে দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরা নীল চোখ ও সাদা চুলের এক ব্যক্তি ব্যালট পেপার চেক করছেন। একই ভিডিও’র অন্য দৃশ্যে একদল নারীকে রাস্তা দিয়ে হাটতে দেখা গেছে।
Published : 13 Oct 2024, 05:04 PM
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিকল্প বাস্তবতার বিভিন্ন এমন আবেগি কনটেন্ট বানাচ্ছে, যেগুলো মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেওয়ার পাশাপাশি ভীতিকর প্রেক্ষাপট নিয়েও ভয় দেখায়। তবে, তা কীভাবে মানুষকে প্রভাবিত করে, সেটাই বড় প্রশ্ন।
সম্প্রতি এক ভিডিও’তে দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরা নীল চোখ ও সাদা চুলের এক ব্যক্তি ব্যালট পেপার চেক করছেন। একই ভিডিও’র অন্য দৃশ্যে নেকাব পরা একদল নারীকে রাস্তা দিয়ে হাটতে দেখা গেছে।
পূর্ব জার্মানির অঙ্গরাজ্য ব্রান্ডেনবার্গে আসন্ন নির্বাচনের আগে এ ভিডিও’টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করেছে দেশটির ডানপন্থী দল ‘এএফডি’। এমনই আরেক ভিডিও’র ভিউ ছিল প্রায় নয় লাখের কাছাকাছি।
ইসলামোফোবিয়া উসকে দেওয়া এইসব ভিডিওর মাধ্যমে ভীতিকর ভবিষ্যৎ দেখিয়ে এরা মানুষের আবেগ নিয়ে খেলার চেষ্টা করে, যার সহজ সমাধানও পাওয়া যায় ভিডিওগুলোতে। তবে, এইসব কনটেন্টের কোনোটিই আসল নয়। এগুলো সম্ভবত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে এমএসএন ডটকম।
এ কনটেন্ট খুব দ্রুতই তৈরি করা সম্ভব। আর এগুলো বানানো সহজ ও সাশ্রয়ী। অন্যান্য বিস্তারিত এআই ভিডিও’র তুলনায় এ ধরনের ভিডিও আসল কি না, তা চিহ্নিত করা সহজ। তথাকথিত এইসব ‘সফট ফেইক’ ভিডিও খতিয়ে দেখেছে জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়েলচে ভেলে’র ফ্যাক্ট চেক বিভাগ।
ডিপফেইক ভিডিও, যা কণ্ঠস্বর, কথা বলার অঙ্গভঙ্গি নকল করে আসলের মতো দেখায়, বিভিন্ন এমন ভিডিও তৈরি করে থাকে। অন্যদিকে, সফট ফেইক ভিডিও কম্পিউটার থেকে তৈরি কি না, তা লুকানোর তেমন প্রয়োজনীয়তা দেখা যায় না।
নির্বাচনী প্রচারণায় ‘সফট ফেইক’
নির্বাচনী প্রচারণায় এমন সফট ফেইক ভিডিও ব্যবহার করার মাত্রা বেড়েছে। এদিকে, ইউরোপীয় নির্বাচনে এএফডি’র সাবেক প্রধান প্রার্থি ম্যাক্সিমিলান ক্রাহ নিজের টিকটক অ্যাকাউন্টে এমন হাজার হাজার এআইয়ের তৈরি ছবি পোস্ট করেছেন।
সেইসব ছবিতে যেসব অস্বাভাবিক চেহারা উঠে এসেছে, তাদের কেউই আসল নয়।
ইইউ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ফ্রান্সের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকেও এআই দিয়ে এমন ভুয়া ছবি তৈরি করতে দেখা গেছে, যেগুলোর লক্ষ্য ছিল, মানুষের মানসিক উত্তেজনা বাড়িয়ে দেওয়া।
এক গবেষণায় ফ্রান্সের সকল রাজনৈতিক দলের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা গেছে, এ ধরনের সফট ফেইক ভিডিও তৈরির প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায় ডানপন্থী দলগুলোর বেলায়। তবে, এদের কোনো ছবিতে ‘এআই দিয়ে তৈরি’, এমন লেবেল ছিল না। যদিও দেশটির সকল রাজনৈতিক দল ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে একটি ‘কোড অফ কনডাক্ট’ মেনে চলতে রাজি হয়েছিল।
কোন বিষয়গুলো মানুষের ধারণায় প্রভাব ফেলে?
তবে, এর আগে কনটেন্টের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে এআইয়ের তৈরি ভিডিও ও ছবিকে বিকল্প বাস্তবতা হিসেবে গ্রহণ করা উচিৎ কি না, সেটিই বড় প্রশ্ন।
৭০’র দশকে মানুষের মতো ও প্রায় মানুষের মতোই আচরণ করে, এমন রোবট সম্পর্কে মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
জাপানিজ রোবটিক প্রকৌশলী মাসাহিরো মরি এ বিষয়টিকে আখ্যা দিয়েছেন ‘আনক্যানি ভ্যালি’ বা অদ্ভুত উপত্যকা বলে। রোবট যত বেশি মানুষের মতো আচরণ করে, বিষয়টি ততই ভীতিকর মনে হতে থাকে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে এমএসএন।
“এইসব ক্ষেত্রে আমরা আরও অস্বস্তিতে পড়ি। কারণ মনের ভাবনা ও নিজেদের সামনে থাকা বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে আমরা এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা লক্ষ্য করেছি,” ডিডব্লিউ’কে বলেছেন ‘জার্নাল অফ মিডিয়া সাইকোলজি’র প্রধান সম্পাদক ও নিউ ইয়র্কের সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি’র ‘নিউহাউজ স্কুল অফ পাবলিক কমিউনিকেশনস’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিকোলাস ডেভিড বাউম্যান।