ভারতকে এখন তার প্রযুক্তিগত ইকোসিস্টেমকে পুনরায় তৈরি করতে এই মুহূর্তটি কাজে লাগাতে হবে অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার ঝুঁকি নিতে হবে।
Published : 23 Feb 2025, 07:25 PM
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এআই দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সেক্টরে নিজের উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভারত এখনও লড়াই করছে বলে উঠে এসেছে এক প্রতিবেদনে।
কয়েক দশক ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি কোড ও ‘ট্যালেন্ট’ তৈরি করে আসছে, যা বিশ্বের প্রযুক্তিগত বিপ্লবকে ইন্ধন জোগাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে চীনের সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যখন সফটওয়্যার পরিষেবার ভিত্তিকে ধ্বংস করে দিতে প্রস্তুত তখন কি বিশ্বের অন্যতম বড় আউটসোর্সিং হাব অর্থাৎ ভারত খুব দেরি হওয়ার আগেই একটি এআইচালিত ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হতে পারবে?
এ চ্যালেঞ্জটা নেওয়া ভারতের জন্য জরুরি উল্লেখ করে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট লিখেছে, নিজেদের সাশ্রয়ী ও কার্যকর বিভিন্ন ওপেনসোর্স এআই মডেলের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের প্রযুক্তির বাজারে আধিপত্য করার জন্য এক শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে চীনা স্টার্টআপ ডিপসিক।
শিল্প মহল বলছে, ভারতকে এখন তার প্রযুক্তিগত ইকোসিস্টেমকে পুনরায় তৈরি করতে এই মুহূর্তটি কাজে লাগাতে হবে অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার ঝুঁকি নিতে হবে।
ভারতের ‘ব্লকচেইন অ্যালায়েন্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান রাজ কাপুর বলেছেন, “বিভিন্ন সফটওয়্যার পরিষেবা দীর্ঘদিন ধরে ডিজিটাল রূপান্তরের মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়টিই বিভিন্ন জটিল প্রক্রিয়াকে স্বয়ংক্রিয় করার, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার ও নতুন রাজস্ব তৈরিতে এআইয়ের সক্ষমতা ও অন্যান্য অনেক সুবিধার মধ্যে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে এমন কোম্পানিকে তাদের মনোযোগ পরিবর্তন করতে বাধ্য করছে।”
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছে, গোটা বিশ্বে প্রায় ৪০ শতাংশ চাকরি এআইয়ের কারণে হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এদিকে, নয়াদিল্লি বলেছে, বিশ্বজুড়ে সফটওয়্যার পরিষেবা বাজারে ভারতের শেয়ার রয়েছে ৪৪ শতাংশ, যার প্রবৃদ্ধি সম্প্রতি কমেছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০২৮ সাল পর্যন্ত দিল্লীর বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ১১.৯ শতাংশ নেমে আসতে পারে।
অন্যদিকে, রাজ কাপুরের ভাষ্য মতে, ২০২৪ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৩৭.৩ শতাংশ হারে বাড়বে এআই।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট লিখেছে, ভারতের নেতারা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল। গত মার্চ মাসে দেশটির বিভিন্ন স্টার্টআপের দেখভাল ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য একশ ২৫ কোটি ডলারের ‘ইন্ডিয়াএআই মিশন’ চালু করেছে ভারত সরকার।
দেশটির সর্বশেষ ফেডারেল বাজেটে এআইয়ের জন্য পৌনে ছয় লাখ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে ভারত, যার লক্ষ্য গবেষণার ওপর নজর দিয়ে তিনটি এআই শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানুয়ারিতে বলেছিলেন, ভারতের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কাস্টমাইজড এআই মডেল কয়েক মাসের মধ্যেই প্রস্তুত হতে পারে।
ডিপসিকের ওপেন সোর্স এআই মডেলের প্রশংসা করে বৈষ্ণব বলেছেন, চীনা কোম্পানিটি দেখিয়ে দিয়েছে, কম খরচে কার্যকর ও শক্তিশালী এক এআই তৈরি করা যেতে পারে।
মাইক্রোসফটের সাবেক নির্বাহী অভিজিৎ ভাদুড়ি বলেছেন, “ভারতকে তাদের সফটওয়্যার পরিষেবার শক্তি ছাড়তে হবে না। তবে এআইচালিত মান তৈরির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অবশ্যই বিকশিত হতে হবে।”
প্রযুক্তি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতের বিশাল ও বৈচিত্র্যময় ডেটা সেট রয়েছে, যা এআই তৈরিতে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ও আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা দেবে। বৈশ্বিক বাজারের উপযোগী মালিকানাধীন এআই সমাধান তৈরিতেও এগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে, বলেন ভাদুরি।
তবে সাফল্য কেবল ডেটার উপর নির্ভর করে না। এআইচালিত ভবিষ্যতের চাহিদা মেটাতে ভারতকে অবশ্যই এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করার পাশাপাশি যুবসমাজকেও একসঙ্গে করতে হবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে পোস্ট।