আর্থিক ক্ষমতায় (এবং সম্ভবত উদ্ভাবনী ক্ষেত্রেও) বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিটি নিজের সমকামী পরিচয় প্রকাশ করেছেন।
Published : 31 Oct 2014, 03:07 PM
বৃহষ্পতিবার ব্লুমবার্গ বিজনেস উইকে লেখা এক নিবন্ধে অ্যাপলের টিম কুক বলেছেন, ‘প্রাউড টু বি গে’।
“আমি যেমন কখনও আমার যৌন আচরণের বিষয়টি লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করিনি, ঠিক তেমনি এটা নিয়ে প্রকাশ্যে কখনও কথাও বলিনি। কাজেই বিষয়টি পরিষ্কার করাই ভালো, একজন সমকামী হিসেবে আমি গর্বিত।”-- বলেন কুক।
প্রযুক্তিবিষয়ক কোনো প্রকাশনায় কারো ব্যক্তিজীবন গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা নয়। তবে একজন শীর্ষ প্রভাবশালীর ব্যক্তিজীবন প্রকাশ্যে আসার ঢেউ ইন্ডাস্ট্রিতে কতটা নাড়া দেয়, সে বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে।
সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক সিইও স্টিভ জবস বেঁচে থাকতে প্রযুক্তি বা বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় অ্যাপলের এমন কোনো বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতেন না এবং চাইতেন না প্রতিষ্ঠানের কেউ বলুক। এ বিষয়ে বলা চলে স্বৈরাচারী ছিলেন তিনি। মিউজিক্যাল ব্যান্ড ইউটু’র দলনেতা বনো যখন আফ্রিকায় এইডসবিষয়ক সহায়তার জন্য ‘প্রোডাক্ট রেড’ নামের প্রচারণা শুরু করেন, তখন অ্যাপলের তৈরি লাল রঙের আইপডের লাভের পুরো অর্থ গিয়েছে বনোর সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের তহবিলে। সিএসআর বা কর্পোরেট সোশাল রেসপন্সিবিলিটির যুগে অ্যাপল ওই বিষয়ে টু শব্দটি করেনি, চায়নি কোনো প্রচারণা।
২০১১ সালে স্টিভের প্রয়াণের পর পত্রিকার পাতায় যখন প্রশ্ন ওঠে তার কোনো দাতব্য কর্মকাণ্ড ছিল না কেন, তখন মার্কিন সংবাদ সাময়িকী টাইমে এক নিবন্ধে বনো লেখেন, “অ্যাপল কত মিলিয়ন ডলার প্রোডাক্ট রেড তহবিলে দিয়েছে সেটি জানা থাকলে আজ এই প্রশ্ন উঠত না।”
টিম কুক অ্যাপলের প্রধান হওয়ার পর জবস আমলের অনেক কিছুই বদলে নিয়েছেন। অ্যাপল শেয়ারের মালিকরা ১৬ বছরের মধ্যে প্রথম লভ্যাংশ পেয়েছিলেন টিম কুক দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই।
বহু বছরের বাণিজ্যিক রেওয়াজ পাল্টে দেওয়ার মাধ্যমে অ্যাপলে যে পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন টিম, তার সর্বশেষ সংযোজন সম্ভবত নিজের ব্যক্তিজীবন উন্মোচন। এর আগে নিজের বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামায় এক বক্তৃতায় এলজিবিটিসহ সকল যৌনসম্পৃক্ততার মানুষদের জন্য সমান অধিকারের কথা বলে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন টিম কুক।
নতুন ঘোষণায় অবশ্য টিম বলেছেন তিনি অ্যাক্টিভিস্ট বা কোনো আন্দোলনের কর্মী নন। তিনি কেবল তাদের কথা ভেবে নিজের পরিচয়টি প্রকাশ করছেন যারা কেবল নিজ পরিচয়ের কারণেই সংগ্রামের মধ্যে আছেন। এই ঘোষণাটি হয়ত তাদের জানাবে যে তারা একা নন।
সাম্প্রতিক লেখায় টিম কুক বলেছেন, “আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি মার্টিন লুথার কিংয়ের কথায়, যিনি বলেছেন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে ‘তুমি অন্যের জন্য কী করছ?’ ওই একই প্রশ্নে আমি কখনও কখনও নিজেকেই চ্যালেঞ্জ করি।”
“সমকামী হওয়া আমাকে শিখিয়েছে সংখ্যালঘুদের একজন হওয়ার অনুভূতি কী।”
নিজেকে অ্যাক্টিভিস্ট না বললেও টিম কুক-এর নতুন ঘোষণার প্রভাবই সম্ভবত তাকে এবং তার প্রতিষ্ঠানকেও অ্যাক্টিভিস্টের কাতারে দাঁড় করায়। অনুমান করা যেতে পারে ভাবিষ্যতেও কেবল বাণিজ্য আর প্রযুক্তি নয়, সংস্কৃতি বা মূল্যবোধের মতো অন্যান্য বিষয়েও নিজের অবস্থান প্রকাশ করবে অ্যাপল বা এর নেতৃত্ব।