লিখেছেন অনুষ্ঠিতব্য এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড আয়োজক জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা মশহুরুল আমিন।
Published : 02 Jul 2024, 04:38 PM
ঐযে দেখা যাচ্ছে! ত্রিভূজের আকৃতির তিনটি তারা জ্বলজ্বল করছে? সবচেয়ে বড় এবং উজ্জ্বল তারাটি হচ্ছে লিরা নক্ষত্রমণ্ডলির ভেগা, যার বাংলা নামকরণ ‘অভিজিৎ’।
আর পূর্ব-দক্ষিণ দিকের উজ্জ্বল তারাটা?
একুইলা নক্ষত্রমণ্ডলির আলতেয়ার। আর ঐযে দেখা যাচ্ছে, এদের দুজনের উত্তর-পূর্ব দিকের তারাটি, সিগনাস নক্ষত্রমণ্ডলির দেনেব। এই তিনটি নক্ষত্র নিয়ে কল্পিত ত্রিভুজটি পরিচিত সামার ট্রায়াঙ্গল নামে।
গ্রীষ্মকালে সামার ট্রায়াঙ্গল মধ্যরাতে মাথার ওপরে অবস্থান করে।
চলুন তারা দেখি
এ লেখা যারা পড়ছেন, যারা আকাশ দেখতে ভালোবাসেন, আজ সন্ধ্যায় খোলা আকাশের নিচে চলে আসুন। আকাশ পরিষ্কার থাকলে পূর্ব অথবা উত্তর-পূর্ব আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখুন। দিগন্তের কিছুটা ওপরে সামার ট্রায়াঙ্গলের দেখা পাবেন। সামার ট্রায়াঙ্গল এর পূর্ব-দক্ষিণ আকাশে ধীরে ধীরে দেখা পাবেন, পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ, ‘চাঁদ’ এর।
জ্যোতির্বিজ্ঞান
আমাদের নক্ষত্র সূর্য তার আটটি গ্রহ, কিছু ধূমকেতু, উল্কা বেস্টনীসহ আরো কিছু মহাজাগতিক বস্তুকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে রয়েছে। সূর্যের মতো আরও শত শত কোটি নক্ষত্র রয়েছে মিল্কিওয়েতে। আর এই গ্যালাক্সি অনন্ত মহাশূন্যে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে আরও কোটি কোটি গ্যালাক্সির সঙ্গে।
এভাবে আকাশের তারাদের দেখা, এমনকি কাছাকাছি থাকা গ্রহ এমনকি চাঁদকেও এভাবে দেখার বিষয়টি হচ্ছে পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞান।
বোঝাই যাচ্ছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের শুরু সেই আদিকাল থেকেই। যখন মানুষ অপার বিস্ময়ে সূর্যোদয় দেখতো- রাতের অনিশ্চিত অন্ধকার কাটিয়ে কখন সূর্য উঠবে। ভোর হবে কখন? এভাবেই জীবনের চলার পথের প্রয়োজনেই মানুষের আকাশের পানে ফিরে দেখা।
জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে আয়োজন
ফেলে আসা সময়ের মত আজও আকাশের প্রতি রয়েছে মানুষের এক অদম্য আকর্ষণ। সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ অথবা ধূমকেতুর আগমনে প্রচুর আগ্রহী মানুষদের দেখতে পাই। তবে বাংলাদেশ খুবই ব্যতিক্রমী একটি দেশ, যেখানে প্রবল আগ্রহ থাকার পরেও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়টি কোনো স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত নয়। আর এই, না থাকার প্রয়োজনেই আমাদের উদ্যোগ নিতে হয় বিকল্প ভাবনার। শুরু হয় জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে এক উৎসব মুখর আয়োজন, “অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড”।
১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য বার্ষিক আয়োজনটি শুরু হয় ২০০৬ সালে। জেলা শহরগুলোতে প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়ে আয়োজন করা হয় জাতীয় পর্যায়ের বা চুড়ান্ত প্রতিযোগিতার। সেই বিজয়ীরাই পরবর্তিতে অংশ নেয় আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডে।
প্রতিবছরের মত এ বছরও আয়োজন করা হচ্ছে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড এর। সিনিয়র এবং জুনিয়র গ্রুপে বিভক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বাংলা এবং ইংরেজী উভয় ভাষাতেই থাকবে প্রশ্নপত্র।
শুরু কবে থেকে?
আসছে ৫ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, বীর চট্টলায় শুরু হচ্ছে এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড এর বিভাগীয় বাছাই কার্যক্রম।
এরপর একে একে বাংলাদেশের মোট ৮টি বিভাগীয় শহর সহ ২টি জেলা শহরেও আয়োজন করা হবে এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড-এর বিভাগীয় বাছাই কার্যক্রম।
বিভাগীয় বাছাই কার্যক্রম থেকে মোট ৫০০ জন প্রতিযোগীকে নিয়ে ৩ আগস্ট ২০২৪, শনিবার ঢাকায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গনে আয়োজন করা হবে এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড এর চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা থেকে জুনিয়র গ্রুপের ১৫ জন এবং সিনিয়র গ্রুপের ১৫ জন, মোট ৩০ জনকে নিয়ে ৪দিনের আবাসিক ক্যাম্পের আয়োজন করা হবে।
আবাসিক ক্যাম্প
আবাসিক ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী ৩০ জন ছাত্র/ছাত্রীদেরকে গাণিতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান, পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিঃপদার্থ বিজ্ঞানসহ টেলিস্কোপ পরিচলানা এবং আকাশের তারা চেনানোর কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আবাসিক ক্যাম্পের শেষ দিনে অংশগ্রহণকারী ৩০জন ছাত্র/ছাত্রীদের একটি মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
এই মূল্যায়ন পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে জুনিয়র গ্রুপের তিন জন এবং সিনিয়র গ্রুপের দুই জনকে নির্বাচন করা হবে। নির্বাচিত এই পাঁচ জন ছাত্র/ছাত্রী আগামী নভেম্বর এ হতে যাওয়া ২৮ তম আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
এখানেই শেষ নয়। চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ী সিনিয়র গ্রুপের তৃতীয় থেকে দ্বাদশ স্থান অধিকারীদের মধ্যে থেকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নির্বাচিত ২ জন রুশ সরকারের বৃত্তি নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিঃপদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার জন্য রাশিয়া যাবে।
২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে যাদের জন্ম, শুধুমাত্র সে সকল ছাত্র-ছাত্রীই এই আয়োজনে আবেদন করতে ও অংশ নিতে পারবে।
অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াডে যোগ হয়েছে এপেক্সের নাম
বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন এর জন্য ২০২৪ সাল, এক সাফল্য আর আনন্দের বার্তা নিয়ে হাজির হয়। অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড আয়োজন করতে গিয়ে নিয়মিত স্পন্সর না পাওয়াটাই যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠছিলো। এমন বিষাদময় আধার কাটিয়ে ভোরের সূর্যের দেখা পাবার মতই আমাদের আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়, এপেক্স গ্রুপ। আর আমাদের আয়োজনের নামকরণ হয়ে যায় এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড।
এপেক্স এসেছে! সঙ্গে করে আনন্দের বার্তা এবং আরো কিছু প্রতিষ্ঠানকেও নিয়ে এসেছে। এদের মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় গার্ডিয়ান লাইফ ইন্সুরেন্স লি.- যাদের নামের আগে যুক্ত হয়েছে ‘পাওয়ার্ড বাই’ শিরোনামটি। শব্দটি দাড়ালো এপেক্স অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড - পাওয়ার্ড বাই: গার্ডিয়ান লাইফ ইন্সুরেন্স লি.।
আর কারা সঙ্গী হয়েছে!
তৃতীয় নামটি আমরা দেখতে পাই, পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স কোম্পানি লি.। একে একে চলে আসে, পোলার আইসক্রিম, ইন্টারনেট পরিষেবা প্রতিষ্ঠান লিঙ্কথ্রি, প্রথম আলো, সিটি ব্যাংক লি., ব্র্যাক ব্যাংক লি., রাশিয়ান হাউস ইন ঢাকা, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, দুরন্ত টেলিভিশন, একাত্তর টিভি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সঙ্গে আরো আছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান শো এন্ড টেল এবং ফ্লোরিয়া টেক।