নাসার ‘কিউরিওসিটি’ ও পারসিভ্যারেন্স রোভারে বহন করা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এখন পর্যন্ত কেবল নিম্নস্তরের সাধারণ জৈব অনু শনাক্ত করতে পেরেছে।
Published : 22 Feb 2023, 03:12 PM
নিজ গ্রহের বিভিন্ন উপাদানের সহায়তায় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা এড়াতে পারে মঙ্গলগ্রহের জীবন কাঠামো। এমনই সতর্কবার্তা দিলেন বিজ্ঞানীরা।
নতুন এক গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে, বর্তমানে এলিয়েন অনুসন্ধানে ব্যবহৃত উপাদানগুলো ‘ওই ধরনের জীব’ শনাক্তে যথেষ্ট সংবেদনশীল নাও হতে পারে।
চিলির মরুভূমি থেকে নেওয়া উপাদান পরীক্ষা করে গবেষকরা এমন সতর্কবার্তা দেন। মঙ্গল গ্রহের যে অঞ্চলে মহাকাশযান ‘পারসিভ্যারেন্স রোভার’ গবেষণা চালাচ্ছে, তার সঙ্গে এই এলাকার পরিবেশের খানিকটা মিল আছে।
চিলির মরু অঞ্চলে বিজ্ঞানীরা আদি প্রাণের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হলেও, ওই রোভার মহাকাশযানের বহন করা বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে সেগুলো শনাক্ত করা সম্ভব নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’।
৭০’র দশকে পরিচালিত একাধিক ‘ভাইকিং’ অভিযানের পর থেকে লাল রঙের এই গ্রহে জীবাণুর জীবন অনুসন্ধানে বেশ কিছু সংখ্যক প্রমাণাদি পাঠানো হয়েছে।
নাসার ‘কিউরিওসিটি’ ও পারসিভ্যারেন্স রোভারে বহন করা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এখন পর্যন্ত কেবল নিম্নস্তরের সাধারণ জৈব অনু শনাক্ত করতে পেরেছে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, এইসব ফলাফল বিদ্যমান বৈজ্ঞানিক উপাদানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
এখন মঙ্গল গ্রহে আছে বা অদূর ভবিষ্যতে পাঠানো হবে, এমন উপাদানগুলোর বিভিন্ন সংস্করণ পরীক্ষা করেছে স্পেনের ‘অ্যাস্ট্রোবায়োলজি সেন্টারের’ গবেষক ডক্টর আরমান্দো আজুয়া-বুস্টোসের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক গবেষণা দল।
চিলির উত্তরাংশে অবস্থিত আতাকামা মরুভূমির ‘রেড স্টোন’ নামের এলাকায় এইসব যন্ত্রের পরীক্ষা হয়েছে।
অনেকের বিবেচনায় মঙ্গল গ্রহের পরিস্থিতির সঙ্গে এই অঞ্চলের ব্যপক মিল আছে। আর এতে প্রচুর হেমাটাইট রয়েছে। এটি লোহার ‘অক্সিডাইজড’ রূপ, যা মঙ্গল গ্রহকে নিজের সেই বিখ্যাত লাল রঙ দেয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর জন্য গবেষকরা মরুভূমির এক নদীর ব-দ্বীপে থাকা পাললিক জীবাশ্ম থেকে সংগৃহিত নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন।
অনেকেই বলছেন, এইসব জমা পড়া নমুনা গঠিত হয়েছে অত্যন্ত শুষ্ক পরিস্থিতিতে, ১৬ থেকে ১০ কোটি বছর আগে। ভূতাত্ত্বিকভাবে এর মিল রয়েছে মঙ্গল গ্রহের ‘জেজিরো’ নামের গর্তের উপাদানের সঙ্গে, যেখানে এখন গবেষণা চালাচ্ছে পারসিভ্যারেন্স।
ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বিশ্লেষণে বেশ কিছু সংখ্যক জৈব চিহ্ন এবং অণু মিলেছে, যেগুলো অতীত বা বর্তমান জীবনের প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন, রেড স্টোনের নমুনায় এমন অসংখ্য অনুজীব রয়েছে, যেগুলো শনাক্ত করা খুব জটিল। এগুলোকে তারা ডাকছেন ‘ডার্ক মাইক্রোবায়োম’ নামে।
“আমরা খুঁজে পেয়েছি, রেড স্টোনে এমন বেশ কয়েক ধরনের অনুজীব আছে, যেগুলো শনাক্ত করা খুবই জটিল। তাই আমরা ‘ডার্ক মাইক্রোবায়োম’ নামটি প্রস্তাব করছি। এটি অনেকটা ‘ডার্ক ম্যাটারের’ মতো, যা মহাবিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ তৈরি করে। আমরা জানি, এগুলোর অস্তিত্ব থাকলেও, তারা এখনও শনাক্ত হতে চাচ্ছে না।” --বলেন ড. আজুয়া-বুস্টোস।
“মঙ্গলে এরইমধ্যে আছে বা পাঠানো হবে, এমন বিভিন্ন যন্ত্রের বিশ্লেষণ থেকে আমরা জেনেছি, ওই লাল গ্রহে শনাক্ত করা বিভিন্ন স্থলভিত্তিক উপাদানের সঙ্গে রেড স্টোনের উপাদানগুলোর মিল আছে। একইভাবে ব্যবহৃত উপাদান ও কৌশলের ওপর নির্ভর করে মঙ্গলগ্রহের শিলায় নিম্ন স্তরের বিভিন্ন জৈব পদার্থ শনাক্ত করা অসম্ভব না হলেও বেশ কঠিনই হবে।” --বৈজ্ঞানিক জার্নাল ‘নেচার কমিউনিকেশন্স’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলেন গবেষকরা।
তাদের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে, বিজ্ঞানীরা বলেন, মঙ্গলগ্রহে তুলনামূলক বেশি স্পর্শকাতর যন্ত্রের প্রয়োজন। আর রেড স্টোনের মতো বিভিন্ন জায়গায় এগুলোর অগ্রিম পরীক্ষা চালানো যেতে পারে।
তারা আরও যোগ করেন, ওই লাল গ্রহে জীবনের অস্তিত্ব ছিল কি না, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নমুনাগুলো পৃথিবীতে ফেরত আনতে হবে।
“আমাদের প্রতিবেদনে বিভিন্ন ‘অ্যানালগ’ জায়গার গুরুত্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কারণ, এগুলোই মঙ্গলগ্রহে পরবর্তী প্রজন্মের যন্ত্রপাতি পাঠানোর পরীক্ষামূলক জায়গা হিসেবে বিবেচিত।” --বলেন ড. আজুয়া-বুস্টোস।
“এখনও শনাক্ত করা যায়নি এমন অনুজীবগুলো আসলে কী অথবা রেড স্টোনের মতো জায়গাগুলো কীভাবে বোঝা সম্ভব, আরও অনেক বিষয়ের মতো এগুলোও আমাদের সমাধান করতে হবে।”