“আমার ক্যারিয়ারের একটি অংশ পূর্ণতা পায়নি। এবং হ্যাঁ, শেষ বয়সে এসে সেটি পূরণ করার একটি দুর্দান্ত সুযোগ এসেছে।”
Published : 21 May 2024, 06:36 PM
প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নভোচারী হতে চেয়েছিলেন এডোয়ার্ড ডোয়াইট। নিয়তি কি তখন বলেছে, “রোসো- তোমার জন্য অন্য পরিকল্পনা আছে?” তার সেই সপ্ন পূরণ হল আরেক ‘প্রথম’ হওয়ার মধ্য দিয়ে। এতো বয়সে মহাকাশে যাননি আর কেউ।
চার মাস পরেই বয়স ৯১ হবে ভাষ্কর ও মার্কিন বিমানবাহিনীর সাবেক এই পরীক্ষামূলক পাইলটের।
অবশেষে রোববার জেফ বেজোসের রকেট কোম্পানি ব্লু ওরিজিনের রকেটে চড়ে মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করলেন ডোয়াইট। পাশাপাশি, অর্জন করে নিলেন সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে মহাকাশে যাওয়ার রেকর্ড।
“আসলেই অসাধারণ!” – পৃথিবীতে অবতরণের পর চিৎকার করে বলেন ডোয়াইট।
“একটি জীবন পাল্টে দেওয়া অভিজ্ঞতা। প্রত্যেকের এ অভিজ্ঞতা নেওয়া উচিত।”
ব্লু অরিজিন কোম্পানির নিউ শেপার্ড ক্যাপসুলে করে পাঁচজন ক্রু সদস্যসহ মহাকাশে যান ডোয়াইট। অন্যান্য ক্রুর মধ্যে ছিলেন, একজন অবসরপ্রাপ্ত অ্যাকাউন্ট্যান্ট, একজন ভারতীয় পাইলট, একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী, একজন ফরাসি উদ্যোক্তা ও একজন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট।
রকেট কোম্পানিটির মালিক জেফ বেজোসের ওয়েস্ট টেক্সাস অঞ্চলের উৎক্ষেপণ ক্ষেত্র থেকে, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৩৫মিনিটে ক্যাপসুলটি পরিষ্কার আকাশে উড্ডয়ন করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিবিএস নিউজ।
দুই বছর আগে ‘বুস্টার ফেইলিয়র’-এর কারণে চালকবিহীন একটি পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন ব্যর্থ হওয়ার পরে, এটিই ছিল কোম্পানির নিউ শেপার্ড রকেটের যাত্রীসহ প্রথম উড্ডয়ন। গত বছরের শেষের দিকে রকেটে কোনো ক্রু ছাড়া, কোম্পানিটি ওই একই মিশনের সফল পুনরাবৃত্তি করলে, আবারও নভোচারীসহ উড্ডয়ন চালু করার পথ তৈরি হয়।
“আমার ক্যারিয়ারের একটি অংশ পূর্ণতা পায়নি। এবং হ্যাঁ, শেষ বয়সে এসে সেটি পূরণ করার একটি দুর্দান্ত সুযোগ এসেছে।” — উড্ডয়নের আগে এক সাক্ষাৎকারে সিবিএস নিউজকে বলেছিলেন ডোয়াইট।
রোববারের ১০ মিনিটের ওই উড্ডয়নের সময়, নিউ শেপার্ডের হাইড্রোজেন জ্বালানির রকেটটি ঘণ্টায় প্রায় ২১০০ মাইল গতিতে এক লাখ ৮৫ হাজার ফুট উচ্চতায় পৌঁছায়। এ উচ্চতা থেকেই ওজনহীন অবস্থায় পৌঁছান ক্রুরা। এরপর এটি আরও ৬৫ মাইল উঠে যায় ক্যাপসুলটি। সে সময় এটি অবস্থান করছিল মহাকাশের স্বীকৃত সীমা যেখান থেকে শুরু হয়, তারও কয়েক কিলোমিটার ওপরে।
বুস্টার বন্ধ হওয়া ও পৃথিবীতে রকেট ফিরে আসার সময়ের মধ্যে, ছয়জন ক্রু সদস্য ক্যাপসুলের সঙ্গে নিজেদের বাঁধন খুলে, প্রায় তিন মিনিটের জন্য ওজনহীনতা উপভোগ করতে পেরেছিলেন। পাশাপাশি, মহাকাশ থেকে নীচের পৃথিবীর দৃশ্যও দেখেছেন।
মহাকাশযানের তিনটি প্রধান প্যারাসুটের মধ্যে একটি পুরোপুরি খুলতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে, কেবল দুটি প্যারাসুট দিয়েই নিরাপদে অবতরণ করার জন্য নকশা করা হয়েছিল যানটি, এবং অবতণের সময় তেমন কোনো সমস্যা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সিবিএস নিউজ।
মহাকাশে উড়ে যাওয়া সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হওয়ার আগের রেকর্ড ছিল কানাডিয়ান অভিনেতা উইলিয়াম শ্যাটনারের দখলে। ২০২১ সালে তিনিও ৯০ বছর বয়সে, একটি নিউ শেপার্ড রকেটে করে মহাকাশ যাত্রা করেছিলেন। ডোয়াইট তার থেকে মাত্র কয়েক মাসের বড় বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।