কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান আইনগুলো ব্যবহারের কথা বলেছেন মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘এফটিসি’র চেয়ারপার্সন লিনা খান।
“আমাদের অবশ্যই এআই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।” --গেল বুধবার মার্কিন প্রকাশনা নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রকাশিত এক মন্তব্য কলামে বলেন খান।
ওই প্রতিবেদনে তিনি ২০০০’দশকের মাঝামাঝিতে ‘ওয়েব ২.০’ যুগের উত্থানকে এআই’র বিস্তৃতি ঘটানোর এক সতর্কতামূলক গল্প হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির বিকাশ আমাদের নিয়ে গেছে কঠোর নজরদারি ও প্রাইভেসি হারানোর মতো ঝুঁকির দিকে। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট আর্স টেকনিকার প্রতিবেদন বলছে, খান মনে করেন, এআই’র সঙ্গে যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, তা এখনই দেশটির সরকারী কর্মকর্তাদের নিশ্চিত করতে হবে। তবে, কোনো উদ্ভাবনে অযথা সীমাবদ্ধতা না দিয়ে।
“এইসব প্রযুক্তির বিবর্তনের সঙ্গে বিভিন্ন উন্মুক্ত, ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার এবং যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্যকে ধরে রাখার উদ্দেশ্যে আমরা নিজেদের ভূমিকা পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” – লেখেন তিনি।
“এটা বিভিন্ন যুগান্তকারী উদ্ভাবন ও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সাফল্য দুটো বিষয়েরই ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। আর এমনটি ঘটেছে অনেক সময়ই কোনো ব্যবসায়িক মডেল বা ব্যবহারকারীকে শোষণ না করার বিষয়ে কোনো অনুশীলন না মেনেই।”
খানের পরিকল্পনা কেবল জেনারেটিভ এআই’র মাধ্যমে তৈরি জনপ্রিয় চ্যাটবটগুলোই নয়, তিনি একে ‘অটোমেশন’ ও ‘অ্যালগরিদমভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের’ মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে চান। এই সংশ্লিষ্ট উদ্বেগের অন্তত চারটি মূল জায়গার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি।
ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা: শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বন্ধের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রেক্ষাপটে তাদের বিভিন্ন উদ্ভাবন ও তুলনামূলক ছোট প্রতিযোগী দমনের পরিকল্পনা প্রতিরোধ করবে।
গ্রাহকের সুরক্ষা জোরদার করা: ‘ফিশিং’ জালিয়াতি, ডিপফেইক ভিডিও ও ‘ভয়েস ক্লোনিংয়ের’ মতো এআই চালিত প্রতারণামূলক অনুশীলন থেকে ব্যবহারকারীকে সুরক্ষা দেবে।
ডেটা প্রাইভেসির প্রচারণা: কোম্পানিগুলো যেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেটা সুরক্ষা আইন মেনে চলে এবং কোনো শোষণমূলক ডেটা সংগ্রহ ও ব্যবহার থেকে বিরত থেকে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যে সুরক্ষা দেয়, সেটি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন এআই ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে।
বৈষম্যমূলক অনুশীলনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ: এআই ব্যবস্থা যেন স্থায়ীভাবে বিভিন্ন এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ বা বৈষম্যের প্রসার না ঘটায়, যেগুলো কর্মসংস্থান, আবাসন বা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরিষেবাকে অন্যায় আচরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে।
অক্টোবরে বাইডেন প্রশাসনের প্রকাশিত ‘এআই বিল অফ রাইটস’ নামের নির্দেশিকাতেও এমন কয়েকটি বিষয় উল্লেখ ছিল। ওই নির্দেশিকার আইনী ক্ষমতা না থাকলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার বিদ্যমান আইনগুলোতে এগুলোর প্রয়োগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করার সুযোগ রয়েছে এফটিসি’র।
“দ্রুতগতিতে উন্নয়ন ঘটা এআই খাতের সমস্যাগুলো পরিচালনার বেলায় এফটিসি বিভিন্ন আইনি এখতিয়ারে সজ্জিত।” --বলেন খান।
এই খাত নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বেলায় খানের সর্বশেষ প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ‘রেস-টু-বটম-বিজনেস-মডেল’ বা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মুনাফায় নজর দেওয়া এবং ‘একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ’ (যা উচ্চমানের পণ্য উদ্ভাবনের অন্তরায়) নিরোধ করে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়া প্রযুক্তির বিকাশ চালিয়ে যেতে পারে কি না। তবে এর জবাব দিয়েছেন তিনি নিজেই।
“হ্যাঁ- আমরা যদি সঠিক নীতি বেছে নেই, তাহলে সম্ভব।”