বড় প্রশ্ন হল, অধিগ্রহণের মতো পরিস্থিতি তৈরি না করেও মাইক্রোসফট কীভাবে ওপেনএআইয়ের সিদ্ধান্ত বদলানোর ক্ষেত্রে এমন কার্যকর ভূমিকা রাখল।
Published : 23 Nov 2023, 01:25 PM
হঠাৎ করেই চাকরি থেকে ছাঁটাই। আর এর পাঁচ দিনের মধ্যেই নিজের পুরনো পদে ফিরে ইতিহাস লিখলেন চ্যাটজিপিটি’র নির্মাতা কোম্পানি ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যান। কেবল অল্টম্যান নন, এ ইতিহাসে অক্ষর-শব্দ-লাইন জুড়ে দিয়েছেন কোম্পানির প্রত্যেক কর্মী।
বিবিসি বলছে, এই নাটকীয় ঘটনাকে সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যায় ‘বিস্ফোরিত মাথার ইমোজি’ দিয়ে।
তবে, অল্টম্যানকে কেন ছাঁটাই করা হয়েছিল, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। বিবিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, অল্টম্যান সম্ভবত কোম্পানির পর্ষদ সদস্যদের এমন পরিস্থিতির মুখে ফেলেছিলেন, যার ফলে কাউকে না জানিয়েই তারা নীরবে ও দ্রুততম সময়ে ছাঁটাই করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পর্ষদের দেওয়া বিবৃতি অনুসারে, অল্টম্যান তাদের সঙ্গে যোগাযোগের বেলায় ‘যথেষ্ট স্বচ্ছ’ ছিলেন না।
আর দুই দিনের মধ্যেই পরপর দুইজন নতুন সিইও নিয়োগ দেওয়ার পর অল্টম্যানের প্রতি কোম্পানির কর্মীদের আনুগত্য আরও স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে, যা পরবর্তীতে তার চাকরি পুনর্বহালের ক্ষেত্রেও সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।
কোডওয়ালা বার্তা, রং বেরঙের হার্ট ইমোজি
কোম্পানির কর্মীদের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে প্রায় সকল স্বাক্ষরদাতাই দাবি করেন, অল্টম্যানকে না ফেরালে তারা পদত্যাগ করবেন। এর মধ্যে ছিলেন ওপেনএআইয়ের প্রধান বিজ্ঞানী ইলায়া সুটসকেভারও, যিনি ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া পর্ষদ সদস্যদের একজন ছিলেন। পরে অবশ্য সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ তিনি লেখেন, এ ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখায় তিনি লজ্জিত।
“কর্মীদের ছাড়া ওপেনএআই অচল।” -- কোম্পানির অনেক কর্মীই সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ এমন পোস্ট করেন, যার মধ্যে ছিলেন অল্টম্যানের ছাঁটাইয়ের পর অন্তর্বর্তীকালীন সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মিরা মুরাটিও।
এ ছাড়া, বেশ কয়েক রঙের হার্ট ইমোজিও শেয়ার করেছেন কর্মীরা। বিবিসি বলছে, এর মাধ্যমে গত বছর সিলিকন ভ্যালি’তে ঘটে যাওয়া অপর এক অবিস্মরণীয় ঘটনার ইঙ্গিত মেলে, যখন সামাজিক মাধ্যম টুইটার (বর্তমানে এক্স) অধিগ্রহণ করেন ইলন মাস্ক।
সে সময় টুইটার থেকে ছাঁটাই হওয়া কর্মীরাও একটি কোডওয়ালা বার্তা পোস্ট করেন সামাজিক মাধ্যমে, যা ছিল ‘স্যালুট দেওয়ার’ ইমোজি।
অন্যদিকে, বসে ছিলেন না অল্টম্যান নিজেও। গেল সোমবার ওপেনএআইয়ের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী কোম্পানি মাইক্রোসফটের কাছ থেকে নতুন এক নিয়োগ পান তিনি।
বড় প্রশ্ন হল, অধিগ্রহণের মতো পরিস্থিতি তৈরি না করেও মাইক্রোসফট কীভাবে ওপেনএআইয়ের সিদ্ধান্ত বদলানোর ক্ষেত্রে এমন কার্যকর ভূমিকা রাখল। ছাঁটাইয়ের দুই দিনের মাথায় অল্টম্যান ও ওপেনএআইয়ের আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা গ্রেগ ব্রকম্যানকে নিয়োগ দেয় সিয়াটলভিত্তিক সফটওয়্যার জায়ান্ট কোম্পানিটি।
এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে মাইক্রোসফটের প্রযুক্তি প্রধান কেভিন স্কট বলেন, ওপেনএআইয়ের কোনো কর্মী যদি মাইক্রোসফটের এআই দলে যোগ দিতে চান, তবে তাকে সাদরে গ্রহণ করা হবে।
তবে, এখন চাকরীতে ফিরে এসে অল্টম্যান ‘মেট্রিক্স ধাঁচের’ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
মূল ঘটনা কী ছিল?
প্রশ্ন হল, এ নাটকীয় ঘটনার এত গুরুত্ব কেন?
এখানে যুগান্তকারী এক প্রযুক্তির উদ্ভাবকদের নিয়ে কথা বলা হলেও কোম্পানির এ সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করেছে দুটি খুবই প্রচলিত কারণ। সেগুলো হল, অর্থ ও ক্ষমতা।
অর্থ নিয়ে কথা বললে, গত মাসে ওপেনএআইয়ের বাজারমূল্য ছিল আট হাজার কোটি ডলার। আর কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীরাও অর্থ ঢেলে যাচ্ছেন। তবে, কোম্পানির খরচও বেশি। কেউ কেউ বলছেন, চ্যাটজিপিটি’কে যখনই প্রশ্ন করা হয়, তখনই ওই উত্তর তৈরি করতে কাজে লাগানো কম্পিউটিং সক্ষমতার পেছনে কোম্পানির ‘কয়েক পেনি’ খরচ হয়।
অক্টোবরে নেদারল্যান্ডসের এক গবেষক বিবিসি’কে বলেন, গুগল সার্চেও যদি একই ধরনের খরচ পড়ত, তবে এতোদিনে গুগল ফতুর হয়ে যেত।
ওপেনএআই যে বিনিয়গকারীদের হাতে রেখে লাভের মুখ দেখতে চায়, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
এ ছাড়া, অর্থের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতাও হাতে চলে আসে। আর কোম্পানিতে এমন বিভ্রান্তি ঘটার পরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ওপেনএআই এমন এক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, যা গোটা বিশ্বের চেহারা পাল্টে দিতে পারে।
ভজঘট লাগানোর ক্ষমতা
এআই প্রযুক্তি দ্রুতই বিবর্তিত হচ্ছে। এর সক্ষমতাও দিন দিন বাড়ছে। ফলে, এ প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগও বাড়তে দেখা গেছে। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে অল্টম্যান নিজেই বলেছেন, আগামী বছর ওপেনএআই যে ধরনের প্রযুক্তি আনবে তাতে চ্যাটজিপিটি’কে ‘নেহাতই শিশু’ মনে হবে, যেখানে প্রচলিত চ্যাটবট মডেলকেই আইন বিভাগের পরীক্ষায় পাশ করতে দেখা গেছে।
এ যুগান্তকারী প্রযুক্তি নিয়ে খুব কম লোকজনই কাজ করছেন। আর অল্টম্যান তাদের মধ্যে অন্যতম। সব ঠিকমতো এগোলে, এআই প্রযুক্তি আরও বুদ্ধিমান ও কার্যকর ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। আর সেটি না ঘটলে মানবতার জন্য একটি ধ্বংসাত্মক ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।
তবে গত পাঁচ দিনে দেখা গেছে, এখনও উদ্ভাবন খাতে মূল উদ্দীপক হিসেবে কাজ করছে মানুষের ক্ষমতা। তবে, এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ক্ষমতাও রয়েছে মানুষের হাতে।
“কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা তিন দিন আগেও অনুমান করতে পারেননি যে, তাদের সিদ্ধান্তের ফলাফল কেমন হতে পারে।” --এ নাটকীয় ঘটনা সম্পর্কে এক্স-এ লেখেন কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক আন্দ্রেজ ড্রাগান।