গবেষণার জন্য ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৫ হাজার ৯৯৩টি প্রাইভেট প্লেনের এক কোটি ৮৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৯টি ফ্লাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে গবেষক দলটি।
Published : 11 Nov 2024, 05:33 PM
প্রাইভেট বা ব্যক্তিমালিকানাধীন প্লেনের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে, আর এতে বাড়ছে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন। প্রতি বছর লাখ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবেশে ছাড়ছে এসব প্রাইভেট জেট ও এ সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়ছে বলে উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এ। এতে দেখা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন জেট থেকে পরিবেশে কার্বন নির্গমন বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।
২০২৩ সালে অ্যারোপ্লেন থেকে পরিবেশে যোগ হয়েছে এক কোটি ৫৬ লাখ টন কার্বন ডাই অক্সাইড, যা নেপাল ও তানজানিয়ার মতো দেশের মোট কার্বন দুষণের সমান। এমনকি এক বছরে বাণিজ্যিক অ্যারোপ্লেন চলাচল থেকে মোট কার্বন নির্গমনের ১.৮ শতাংশের জন্যও দায়ী এটি।
গবেষকরা বলছেন, পরিবেশে এই কার্বন নির্গমন কমাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ব্যক্তিমালিকানাধীন অ্যারোপ্লেন খাতকে।
গবেষণার জন্য ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৫ হাজার ৯৯৩টি প্রাইভেট প্লেনের এক কোটি ৮৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৯টি ফ্লাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে গবেষক দলটি।
২০২৩ সালে প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৪৭.৪ শতাংশ ফ্লাইট ৫০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে যাত্রা করেছে, যেখানে ৪.৭ শতাংশ ফ্লাইট যাত্রা করেছে ৫০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে।
এক্ষেত্রে দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি অর্থাৎ ৬৮.৭ শতাংশ প্রাইভেট অ্যারোপ্লেন নিবন্ধিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আর এগুলোর বেশিরভাগ যাত্রা করেছে যুক্তরাষ্ট্রে ও তারপর ইউরোপে।
কিছু কিছু বৈশ্বিক ইভেন্টের কারণে ব্যক্তিগত অ্যারোপ্লেনের চলাচল আরও বেড়েছে বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। যার মধ্যে রয়েছে সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে অনুষ্টিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’, ‘কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলন’, কান চলচ্চিত্র উৎসব ও ফিফা বিশ্বকাপ।
“এ গবেষণায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া বিষয়ক দিকটিকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও একই ব্যক্তিগত অ্যারোপ্লেনে বারবার যাত্রার ঘটনা ঘন ঘনই ঘটেছে,” বলেছেন গবেষকরা।
গত পাঁচ বছরে ব্যক্তিগত অ্যারোপ্লেনে যাতায়াত বেড়েছে ২৮.৪ শতাংশ এবং এদের যাতায়াতের দূরত্ব বেড়েছে ৫৩.৫ শতাংশ। ফলে পরিবেশে কার্বন নির্গমন বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।
“টেকসই অ্যারোপ্লেন জ্বালানির ব্যবহার সীমিত থাকা ও বেশিরভাগ প্রাইভেট অ্যারোপ্লেনের মালিকরা অদূর ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের পরিকল্পনা না করায় এই শিল্প খাতটিকে দ্রুতই নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন,” বলেছেন গবেষকরা।
“গবেষণায় দেখা গেছে, গড় মানুষের চেয়েও যারা প্রাইভেট জেট ব্যবহার করেন তাদের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে কার্বন নির্গত হচ্ছে পরিবেশে।”
গবেষকরা আরও সতর্ক করে বলেছেন, ‘প্রাইভেসি আইসিএও অ্যাড্রেস’-এর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে ভবিষ্যতে প্রাইভেট জেট নিয়ে গবেষণা করা তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
‘প্রাইভেসি আইসিএও অ্যাড্রেস’ এক ধরনের মার্কিন প্রোগ্রাম, যা ব্যক্তিগত জেট ব্যবহারকারীদের নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে অ্যারোপ্লেনে যাতায়াত করতে সাহায্য করে।