জাহাজটির রেলিংও ক্ষতির মুখে পড়েছে, যাকে জেমস ক্যামেরুন পরিচালিত বিখ্যাত সিনেমা টাইটানিকে অমর করেছেন এর দুই মূল চরিত্র জ্যাক ও রোজ।
Published : 03 Sep 2024, 04:08 PM
এটা সেই ছবি, যা থেকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ নিমিষেই চিনে ফেলা যায়। আর এতে দেখা যাচ্ছে, আটলান্টিকের গভীর অন্ধকারে উঁকি দিচ্ছে এক শতাব্দি আগে ডুবে যাওয়া বহুল আলোচিত জাহাজটির সামনের অংশ।
তবে নতুন এক অভিযানে জাহাজটির ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যাওয়ার প্রভাব ফুটে উঠেছে, যেখানে এর সিংহভাগই এখন সমুদ্রের তলদেশের নিচে।
জাহাজটির রেলিংও ক্ষতির মুখে পড়েছে, যাকে জেমস ক্যামেরন পরিচালিত বিখ্যাত সিনেমা টাইটানিকে অমর করেছেন এর দুই মূল চরিত্র জ্যাক ও রোজ। এবারের গ্রীষ্মে বিভিন্ন ডুবো রোবট দিয়ে চালানো অভিযানে রেলিংটি আবারও খুঁজে পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
রোবটগুলোর ধারণ করা ছবিতে দেখা গেছে, এ ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রের ঢেউয়ের নিচে গত শতাব্দিজুড়ে কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে।
জাহাজটি ডুবেছিল ১৯১২ সালের এপ্রিলে, যার আগে এটি একটি হিমশৈল বা আইসবার্গে আঘাত হেনেছিল। আর এ ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন দেড় হাজার মানুষ।
“টাইটানিকের সামনের অংশটি খুবই আইকনিক। এমনকি পপ কালচারেও আপনি এমন বিভিন্ন মূহুর্ত খুঁজে পাবেন। আর জাহাজডুবির কথা বিবেচনায় নিলে এর কথাই সবার আগে মনে পড়ে। তবে এখন আর আগের মতো নেই এটি,” বলেন এ অভিযান পরিচালনা করা কোম্পানি ‘আরএমএস টাইটানিক ইনকর্পোরেটেড’-এর ‘ডাইরেক্টর অফ কালেকশনস’ টমাসিনা রায়।
“এটা স্রেফ জাহাজের দৈনিক ক্ষয়ক্ষতির আরেকটি অশনিসংকেত। লোকজন সবসময়ই জিজ্ঞেস করে থাকেন, “সেখানে টাইটানিক আর কতদিন থাকবে?’ আমরা এখনও তা জানি না। তবে, যা ঘটছে তা আমরা রিয়েল টাইমেই দেখছি।”
অভিযান চালানো দলটির ধারণা বলছে, জাহাজের রেলিংয়ের অংশ, যা প্রায় সাড়ে চার মিটার (১৪ দশমিক সাত ফুট) লম্বা, তা গত দুই বছরের কোনো এক সময় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।
এদিকে, ২০২২ সালে ‘ডিপ-সি ম্যাপিং’ কোম্পানি ম্যাজেলান ও আটলান্টিক প্রোডাকশনসের তথ্যচিত্র নির্মাতাদের পরিচালিত এক অভিযানে পাওয়া ছবি এবং ডিজিটাল স্ক্যানিংয়ে দেখা গেছে, রেলিংটি তখনও জাহাজের সঙ্গে লেগে থাকলেও তা এরইমধ্যে বাঁকা হতে শুরু করেছে।
“এক সময় এর ধাতু দূর্বল হয়ে যাওয়ায় এটি পড়ে যায়,” বলেন টমাসিনা রায়।
বিবিসি বলছে, সমুদ্রের তিন হাজার আটশ মিটার গভীরে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এমন জাহাজটির এটা একমাত্র অংশ নয়। এর বিভিন্ন ধাতব কাঠামো খেয়ে ফেলছে জীবাণু। এমনকি সেগুলোতে মরিচাও ধরছে।
এর আগের বিভিন্ন অভিযানে ইঙ্গিত মিলেছে, টাইটানিকের বিভিন্ন অংশ ক্ষয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে মার্কিন অভিযাত্রী ভিক্টর ভেস্কোভো’র নেতৃত্বে অংশ নেওয়া ডুবুরি অভিযানে দেখা গেছে, এর অফিসার্স কোয়ার্টারের স্টারবোর্ডের দিকটি ভেঙে পড়ছে, এমনকি জাহাজের স্টেট রুমের পাশাপাশি এর ক্যাপ্টেনের স্নান করার কক্ষটিও ধ্বংস হয়ে গেছে।
এ গ্রীষ্মের অভিযানটি ঘটেছে জুলাই ও অগাস্ট মাসে, যেখানে দুটি ‘রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকল (আরওভি)’ ২০ লাখের বেশি ছবি ও ২৪ ঘণ্টা জাহাজের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া উভয় ধ্বংসাবশেষের এইচডি ফুটেজ ধারণ করেছে, যেগুলো এর সামনের অংশ ডুবে যাওয়ার সময় আলাদা হয়েছিল। এদের অবস্থান একে অপর থেকে আটশ মিটার দূরে। আর এদের চারপাশে ধ্বংসাবশেষের টুকরো পড়ে আছে।
কোম্পানিটি এখন সতর্কতার সঙ্গে ফুটেজটি পর্যালোচনা করে দেখছে যাতে এর বিভিন্ন অনুসন্ধান থেকে পরবর্তীতে জাহাজের গোটা ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশের একটি বিস্তারিত ডিজিটাল ৩ডি স্ক্যানিং করা যায়।
আসন্ন মাসগুলোয় এর আরও বেশ কিছু ছবি প্রকাশ পাবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।