স্ক্রিনএজার! এই আসক্তি সামলানোর উপায় কী?

ইন্টারনেটের মতো প্রযুক্তি থেকে তো শিশুদের দূরে রাখা সম্ভব নয়। এমন বাস্তবতায় নিজ সন্তানকে যোগ্য ও নিরাপদ করে শিশুদের গড়ে তুলতে মা-বাবারা কী করতে পারেন?

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2023, 01:02 PM
Updated : 3 June 2023, 01:02 PM

নতুন শব্দ যোগ হয়েছে ইংরেজি শব্দভাণ্ডারে - ‘স্ক্রিনএজার’। মানে হচ্ছে স্ক্রিন থেকে টেনে সরানো যায় না এমন টিনএজার।

এই স্ক্রিনএজারদের মনোদৈহিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে সম্প্রতি সতর্কতা প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। ইনস্টাগ্রাম, টিকটক বা স্ন্যাপচ্যাটের মতো বিভিন্ন অ্যাপের ফলে শিশুকিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। 

এই সামাজিক মাধ্যম অ্যাপগুলোর কিছু ভালো দিক যে নেই তা নয়- এগুলোর মাধ্যমে যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ে। তবে, ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে সাইবার বুলিয়িং, খাদ্যে অনীহা, আত্মক্ষতি সহ বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক আচরণের মতো বিষয়। এর পাশাপাশি খাওয়া, ঘুম ও খেলাসহ জীবনের স্বভাবিক বেড়ে উঠা  বাধাগ্রস্থ হওয়ার কথাও ১৯ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল ভিভেক এইচ মুর্থি।

কিন্তু ইন্টারনেটের মতো প্রযুক্তি থেকে তো শিশুদের দূরে রাখা সম্ভব নয়। এমন বাস্তবতায় নিজ সন্তানকে যোগ্য ও নিরাপদ করে শিশুদের গড়ে তুলতে মা-বাবারা কী করতে পারেন? তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস।

সমাধানের উপায় কী? মিলবে কোথায়?

বিশ্বের প্রায় সব মোবাইল ফোনই চলে হয় গুগল নয়তো অ্যাপলের তৈরি অপারেটিং সিস্টেমে। এই দুই প্রযুক্তি নির্মাতা তাদের অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যেই সন্তানদের অনলাইনে যাপিত সময় দেখভালের জন্য বিনামূল্যে একটি সেবা দিতে শুরু করেছে। এর সাহায্যে মা-বাবারা শিশুর ‘স্ক্রিনকাল’ বা স্ক্রিনের সামনে কাটানো সময় নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন।

অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য গুগল প্লে স্টোর থেকে নামানো যাবে ‘ফ্যামিলি লিংক’ অ্যাপটি যার সঙ্গে শিশুর গুগল অ্যাকাউন্ট যুক্ত করে পর্যবেক্ষণ করা যাবে তার ইন্টারনেট অভিজ্ঞতা। আইফোন ব্যবহারকারী অভিভাবকরা সন্তানের অ্যান্ডয়েড ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত থাকতে আইওএস থেকে ফ্যামিলি লিংক অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

কাজ হয় এগুলোয়?

আছে ভালো আর মন্দ দুটো দিকই।

গুগল ফ্যামিলি লিংকের বেশ কিছু উপকারী দিক রয়েছে। চাইলে এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ডিভাইসটি ‘অকার্যকর’ করে রাখা যাবে। যেমন, ধরা যাক রাত ১০টা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত শিশুর ঘুমের সময়। চাইলে কেবল ওই সময়ের জন্য শিশুর ফোন বা ট্যাবলেটটিকে লক করে রাখা সম্ভব।

কিন্তু ফ্যামিলি লিংক অ্যাপটির বড় একটা ফোকড় রয়েছে। শিশুর বয়স ১৩ বছরে পৌঁছালেই সে নিজেকে “বড় হয়ে গেছি” দাবি করে মা-বাবার ডিজিটাল শাসনকে অগ্রাহ্য করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বয়স ১৩ হলেই যে কেউ মা-বাবার সম্মতি ছাড়াই গুগল অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে। নিয়মটি করে দিয়েছে গুগল।

তাহলে কী করা? বুদ্ধি বাতলে দিয়েছে প্রতিবেদনটি - সন্তানের বয়স কমিয়ে দিন! 

অ্যাপলের ‘স্ক্রিন টাইম’ ফিচারটি নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখেছেন টাইমসের কর্মীরা। এর মাধ্যমে অভিভাবক চাইলে শিশুর আইফোনে নির্দিষ্ট অ্যাপ বা নির্দিষ্ট ধরনের অ্যাপের সময়সীমা বেঁধে দিতে পারবেন। সেই বরাদ্দকৃত সময় শেষ হয়ে গেলে যদি বাড়তি সময়ের আব্দার থাকে, মা-বাবাকে রাজী করিয়ে তবেই তা মিলবে।

যদি মা-বাবা নিজেরাই স্ক্রিনে আসক্ত হন?

এর একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে মা-বাবারা নিজেরাই যদি ‘স্ক্রিন-আসক্ত’ হন তাহলে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে খোদ নিজেদের স্ক্রিন-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণকে উপেক্ষা করার ঝুঁকি থেকেই যায়। 

অন্যকোনো উপায়?

আছে।

শিশুর স্ক্রিনটাইম নিয়ন্ত্রণে  কিছু থার্ড-পার্টি অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওস অ্যাপ পাওয়া যায় স্টোরগুলোতে। কিন্তু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেগুলো সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। অপরিচিত কোম্পানির বানানো সেই অ্যাপগুলো দিয়ে সাইবার অপরাধীরা সাধারণ ব্যবহারকারীরদের গতিবিধি অনুসরণ বা স্টক করতে পারে। ‘স্টকওয়্যার’ নাম দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো দিয়ে ব্যবহারকারীর অবস্থান এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে মাইক্রোফোনের মাধ্যমেও নজরদারি সম্ভব।

তবে  শিশুদের ডিজিটাল যাপন সুরক্ষিত করতে মা-বাবার পর্যবেক্ষণের জন্য বাজারে বেশকিছু নামকরা কোম্পানির পণ্য রয়েছে, সেসব কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইল মাধ্যমেও কাজ করে। বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্য ও সেবার রিভিউ দেওয়ার অলাভজনক সংস্থা ‘কমন সেন্স মিডিয়া’ বলেছে ‘কিউইউস্টুডিও’ (Qustodio ) এবং ‘নেটন্যানি’ শিশুর ডিজিটাল সুরক্ষায় মা-বাবাকে বৃহৎ পারিসরে সন্তানের ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের সুযোগ করে দেয়।

সামাজিক মাধ্যমেও রয়েছে উপায়

সামাজিক মাধ্যমের আসক্তি নিয়ন্ত্রণে কোম্পানিগুলো স্ক্রলিং বন্ধ করতে মনে করিয়ে দেয়। ইনস্টাগ্রামে চাইলে “টেইক এ ব্রেক” অপশন চালু করে রাখা যায়, যা ব্যবহারকারীকে মনে করিয়ে দেবে কখন থামতে হবে। টিকটকেও এ বছর থেকে ব্যবহার সীমা নিয়ন্ত্রণের উপায় এনেছে। তবে, বিতর্ক রয়েছে এই অপশন গুলোর কার্যকারিতা নিয়েও। অপশনগুলো চালু থাকার পরেও অনেকেই বিশেষ করে স্ক্রিন-এজাররা দেদারসে সেসব সতর্কবার্তাকে থোড়াই পারোয়া করছে।