প্রাকৃতিক গ্যাসে পাওয়া হাইড্রোজেনের তুলনায় পানির মধ্যে থাকা হাইড্রোজেন বের করে আনতে খরচ পড়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
Published : 23 Jun 2024, 04:29 PM
ভবিষ্যতে শক্তির জন্য ‘গেইম-চেঞ্জার’ হিসেবে দেখা হচ্ছে ‘গ্রিন’ বা পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেনকে।
উপাদানটি বেশ কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। যেমন– শক্তি সঞ্চয়ের জন্য ‘ব্যাটারি’ হিসাবে কাজ করা ও রাসায়নিক শিল্পে এর সম্ভাব্য ব্যবহার। আর এর থেকে শুধু জলীয় বাষ্পই নির্গত হয়ে থাকে।
তবে, এত সম্ভাবনা থাকার পরও গ্রিন হাইড্রোজেনের বিস্তৃত ব্যবহার এখনও শুরু হয়নি। কারণ, এর তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে ‘গ্রে হাইড্রোজেন’ উৎপাদন করা আরও সাশ্রয়ী।
হাইড্রোজেন সংরক্ষণ করার কাজ বেশ চ্যালেঞ্জিং। আর পরোক্ষভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস হওয়ায় এটি পরিবেশবান্ধবও নয়। তাই এর বিভিন্ন বাধা কাটিয়ে উঠতে ‘ইউনিভার্সিটি অফ গ্রোনিনজেন’র গবেষকরা কঠোর পরিশ্রম করছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ ও ক্ষুদ্রতম মৌল হল হাইড্রোজেন। আর বিগ ব্যাংয়ের পর গঠিত প্রথম উপাদানগুলোর একটি এটি। আর পানি (H2O), প্রাকৃতিক গ্যাস (বেশিরভাগ মিথেন CH4) ও অ্যামোনিয়ার (NH3) মতো বেশ কিছু উপাদানে এর অস্তিত্ব রয়েছে।
তবে, বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন (এইচ ২) প্রকৃতিতে মেলা ভার। আর সাধারণত অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে জুড়ে থাকে এটি।
এইসব উপাদান থেকে হাইড্রোজেন আলাদা করার জন্য শক্তি প্রয়োজন। আর হাইড্রোজেন যখন পুনরায় কোনো মৌলের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন সে শক্তি ছেড়ে দেয়, যার ফলে এর থেকে খানিকটা শক্তি কমেও যায়।
মানুষ কীভাবে ‘গ্রিন হাইড্রোজেন’-এর ধারণায় হাইড্রোজেনকে ব্যবহার করতে চায়, তার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে নবায়ণযোগ্য শক্তির মাধ্যমে পানি থেকে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন আলাদা করার বিষয়টির।
এই প্রক্রিয়ায় সৌর প্যানেল ও বায়ু টারবাইন থেকে বাড়তি শক্তি সঞ্চয় করা যায়, যেখান থেকে কার্যকর উপায়ে ‘গ্রিন ব্যাটারি’ তৈরি হয়। আর হাইড্রোজেন যখন আবারও অক্সিজেনের সঙ্গে আবদ্ধ হয়, তখন তা পানি উৎপন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে শক্তিও ছেড়ে দেয়।
হাইড্রোজেনের কোনো বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার এ অনন্য বৈশিষ্ট্য অনেক ক্ষেত্রেই কাজে লাগতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, কৃষকদের অ্যামোনিয়াভিত্তিক (NH3) সার ব্যবহার করা ও চুল ব্লিচ করার জন্য হেয়ারড্রেসারদের ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড (H2O2)’ ব্যবহারের বিষয়টি।
বর্তমানে এইসব পণ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে পাওয়া ‘গ্রে হাইড্রোজেন’, যেখানে উপজাত হিসেবে তৈরি হয় কার্বন ডাইঅক্সাইড। এর কারণ, প্রাকৃতিক গ্যাসে পাওয়া হাইড্রোজেনের তুলনায় পানির মধ্যে থাকা হাইড্রোজেন বের করে আনতে খরচ পড়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
এর ফলে, আরও দক্ষ ও সাশ্রয়ী উপায়ে পানি থেকে হাইড্রোজেন বের করে আনার পদ্ধতি বের করার লক্ষ্যে কাজ করছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ গ্রোনিনজেন’-এর গবেষকরা। এমনকি পরিবহন ও রাসায়নিক খাতে এর সম্ভাব্য প্রয়োগও খুঁজে দেখছেন তারা।
কীভাবে সাশ্রয়ী ও দক্ষ উপায়ে ‘গ্রিন হাইড্রোজেন’ উৎপাদন করাই সমস্যার সমাধান নয়। হাইড্রোজেন সংরক্ষণ করাও মোটেই সহজ কাজ নয়। তাই একে শুধু প্রয়োজন মতোই সংরক্ষণ বা পরিবহন করা উচিৎ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
প্রচলিত উপায়ে হাইড্রোজেন গ্যাসকে প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো করে পরিবহন ও সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন পাইপলাইন ও ভূগর্ভস্থ সংরক্ষাণাগার ব্যবহার করা হয়।
তবে, এটি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। কারণ হাইড্রোজেনের অণু প্রাকৃতিক গ্যাসের অণুর চেয়ে আকারে অনেক ছোট, যে কারণে বিভিন্ন পাইপলাইনের ক্ষুদ্র ফাটল দিয়ে সহজেই হাইড্রোজেন বেরিয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকি দেখা দেয়। এর চেয়েও বাজে বিষয় হল, হাইড্রোজেন বিভিন্ন ধাতুকে ভঙ্গুর করে তোলে, যার ফলে সেগুলো কাঁচের মতোই ভেঙে যেতে পারে।
এমন সমস্যার কারণে, সংরক্ষণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণে হাইড্রোজেনের নানা প্রভাব খতিয়ে দেখছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ গ্রোনিনজেন’র গবেষকরা।
তাদের লক্ষ্য, ছিদ্র দিয়ে হাইড্রোজেন বেরিয়ে যাওয়ার এ প্রবণতা ঠেকানো ও বিভিন্ন ধাতু যেন টেকসই ও নিরাপদ থাকে, তা নিশ্চিত করা।