দ্রুতই এগোচ্ছে ইউক্রেইনের ‘আর্মি অফ ড্রোনস’

‘স্টার ওয়ার্স’ অভিনেতা মার্ক হ্যামিলের মতো বিভিন্ন তারকা সাড়া দেওয়ায় ‘আর্মি অফ ড্রোনস’ তহবিলে এরইমধ্যে ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বেশি জমা পড়েছে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2023, 04:49 AM
Updated : 28 April 2023, 04:49 AM

যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নিজেদের ড্রোন উৎপাদন জোরদার করেছে ইউক্রেইন।

দেশটির সরকার বলেছে, যুদ্ধকালীন সংকট মোকাবেলার জন্য তারা বিভিন্ন ড্রোন ও এর যন্ত্রাংশ আমদানির কর’সহ অন্যান্য নীতিমালা শিথিল করেছে।  

ড্রোনের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশটির সরকার ‘আর্মি অফ ড্রোনস’ নামে এক প্রচারণা চালিয়ে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

ওই প্রচারণায় জনপ্রিয় সিনেমা ফ্রাঞ্চাইজ ‘স্টার ওয়ার্স’ অভিনেতা মার্ক হ্যামিলের মতো বিভিন্ন তারকা সাড়া দেওয়ায় এরইমধ্যে ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বেশি জমা পড়েছে। নতুন ড্রোন তৈরির পাশাপাশি সেসবের চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই অর্থ খরচ করা হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

পাশাপাশি, ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভের কাছাকাছি এক গোপন ঘাঁটিতে ইউক্রেইনের ড্রোন চালকদের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সরাসরি দেখার আমন্ত্রণ জানানো হয় বিবিসি’র প্রতিনিধিদের।

এই দলের ডজনখানেক সদস্যকে জোড়ায় দল বেঁধে রিমোট হাতে অনুশীলনের মাঠে প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত ‘গোপন লক্ষ্যবস্তু’ খুঁজতে দেখা যায়।

গোটা অনুশীলন পর্যবেক্ষণ করেন প্রশিক্ষক স্ল্যাভা। আর সৈন্যরা কীভাবে বনের বিভিন্ন অস্থায়ী গর্তে লুকিয়ে থাকতে পারেন, সে সম্পর্কেও মন্তব্য করেন তিনি।

“এইসব ড্রোন আমাদের চোখ হিসেবে কাজ করে। এগুলোর মাধ্যমে আমরা ওপর থেকে দখলকারীদের খুব ভালোভাবে দেখতে পাবো। ফলে, নিজেদের অস্ত্র সামলে নেওয়ার পাশাপাশি শত্রুর আক্রমণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে পারবো আমরা।” --বলেন তিনি।

চলমান এই যুদ্ধে ইউক্রেইন ও রাশিয়া দুই দেশের সামরিক বাহিনীই সাধারণ ছবি তোলার উদ্দেশ্যে ড্রোনের ওপর ক্রমাগত নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ফ্রন্টলাইনে  এযাবতকালের বহুল ব্যবহৃত ড্রোনের নাম ‘ডিজেআই ম্যাভিক’, যেটির দাম দুই হাজার ডলারের চেয়েও কম।

“কেবল অসমারিক উপায়ে ব্যবহারযোগ্য” এই কারণ দেখিয়ে গত বছর থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেইন দুটি দেশেই পণ্যটির রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে এর চীনা উৎপাদকরা।

স্ল্যাভা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞায় সংকট তৈরির পরও হাজার হাজার ড্রোন কিনতে পেরেছে ইউক্রেইন।

তবে, তুলনামূলক উন্নত আধুনিক ড্রোনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন তিনি। প্রায়শই শত্রুপক্ষের বৈদ্যুতিক অস্ত্রের মাধ্যমে গুলি করে বা বৈদ্যুতিক জ্যামিং তৈরি করে ড্রোন ভূপাতিত করাকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে, অতিরিক্ত তিন হাজার তিনশ নতুন ড্রোন যন্ত্রাংশ কেনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ‘আর্মি অফ ড্রোনস’ তহবিলের আয়োজকরা। এরমধ্যেই আগ্রহী চারশ ব্যক্তি নিজেদের ব্যক্তিগত শখের ড্রোন এই তহবিলে জমা দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

দেশটির ড্রোনের বহর বাড়ানো ও এর চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে এই তহবিলের সূত্রপাত ঘটে গত বছরের জুলাইয়ে।

অভিনেতা মার্ক হ্যামিল এক ভিডিও বার্তায় নিজের ভক্তদের কাছে প্রকল্পটির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। ফলে, বিভিন্ন সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এটি।

ড্রোন সংগ্রহের জন্য গোটা ইউক্রেইনের বিভিন্ন বিপণন কেন্দ্র ও জনাকীর্ণ স্থানে আর্মি অফ ড্রোনসের প্রচারণা দেখা গেছে। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে জনগণকে নিজেদের কাছে থাকা ড্রোন জমা দিয়ে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার।

গেল সোমবার তীব্র লড়াইপূর্ণ বাখমুত অঞ্চলে প্রতিপক্ষের ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম এমন একশটি আত্মঘাতি ‘কামিকাজি’ (২য় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মঘাতী বিমান হামলার রীতি) ড্রোন পাঠিয়েছে ইউক্রেইন।

“ইউক্রেইনের ‘ইউএভি’ (ড্রোন) ব্যবসায় একটি বড় মাইলফলক অর্জিত হলো।” --গত মার্চে ড্রোনভিত্তিক পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া শিথিল ও সহজ করে তোলার বিষয়ে বলেন ইউক্রেইনের ডিজিটাল রূপান্তর মন্ত্রী মাইখাইলো ফেদোরভ।

এর আগের নিয়ম অনুযায়ী, জিপিএস ও থার্মাল ক্যামেরাজাত পণ্য আমদানির পেছনে অন্তত ১৫ দিন সময় লাগতো।

এর ফলে, নিজেদের কর ও অন্যান্য নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে ইউক্রেইন। পাশাপাশি, ড্রোন ও এই সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানিকে শুল্কমুক্ত হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।

“বর্তমান সময়ে ড্রোন একটি মৌলিক ও অবিচ্ছেদ্য প্রযুক্তি।”--এই নীতিমালা বদল সংশ্লিষ্ট আয়োজনে বলেন ফেদোরভ।

প্রথম থেকেই আর্মি অফ ড্রোনস তহবিলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন ফেদেরভ।  আর তিনি কিইভে অবস্থিত নিজস্ব কার্যালয়ে ইউক্রেইনে নির্মিত কামিকাজি ড্রোনের নমুনা গর্বের সঙ্গে দেখিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

কোন রাখঢাক না রেখেই শত্রুপক্ষের ট্যাংক ও অন্যান্য স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ার বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে কথা বলেন তিনি। তবে, রাশিয়ার মাটিতে ড্রোন হামলার বিষয়ে দেশটির সরকারের অন্যান্য সদস্যদের মতোই মুখ খোলেননি তিনি।

গত মাসে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানায়, ইউক্রেইন সীমান্ত থেকে চারশ কিলোমিটার দূরের কিরেয়েভস্ক শহরে এক ইউক্রেইনীয় ড্রোনের বিস্ফোরণে অন্তত তিনজন রুশ নাগরিক আহত হন।

ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মস্কোর কাছাকাছি একটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়, যা তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলার উদ্দেশ্যে এগোচ্ছিল।

ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে হাজারের বেশি ড্রোন স্থাপন করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এর সিংহভাগই ইরানের তৈরী ‘শাহেদ কামিকাজি’ ড্রোন।

তবে, ইউক্রেইন কখনোই রাশিয়ার মাটিতে ড্রোন হামলার কথা স্বীকার করেনি। “রাশিয়ার মাটিতে ড্রোন হামলাকে সমর্থন করেন কিনা” এমন প্রশ্নের জবাবে ইউক্রেইনীয় মন্ত্রী ফেদেরভ বলেন “রাশিয়াকে প্রতিহত করতে এবং নিজেদের জয় নিশ্চিত করা যে কোনো উদ্যোগে আমি সমর্থন জানাই।”

“এই ড্রোন কিইভ থেকে মস্কো উড়ে গিয়ে আবার ফিরে আসতে সক্ষম।” --নিজের ট্রেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে ইউক্রেইনের তৈরি ‘আর১৮’ নামের ড্রোন সম্পর্কে অনেকটা ‘বুক ফুলিয়েই’ বলেন তিনি।

ফেদেরভকে মস্কোর ড্রোন হামলায় নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। 

“এর জন্য আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী আছে, যারা বিভিন্ন অপারেশন পরিকল্পনা করে থাকে। আর আমাদের কাজ হলো, দেশের সামরিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ‘ইউএভি’ মজুদ আছে কি না, সেটি নিশ্চিত করা।” 

রাশিয়ার মাটিতে ড্রোন হামলার বিষয়ে বিবিসি ইউক্রেইনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের কাছ থেকে কোন মন্তব্য আসেনি।