মাইক্রোসফটের অ্যাকটিভিশন-অধিগ্রহণ ঠেকাতে এফটিসির মামলা

বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার অভিযোগ, এই অধিগ্রহণ চুক্তি গেইমিং বাজারে সনি আর নিনটেন্ডোর মতো মাইক্রোসফট ‘প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষতি করবে’।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2022, 07:13 AM
Updated : 9 Dec 2022, 07:13 AM

কল অফ ডিউটি নির্মাতা ‘অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ড’ মাইক্রোসফটের অধীনে যাওয়া ঠেকাতে মামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)’। 

বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির বলছে, এই অধিগ্রহণ চুক্তি গেইমিং বাজারে সনি আর নিনটেন্ডোর মতো ‘প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষতি করবে’।

এক্সবক্স নির্মাতা মাইক্রোসফট জানুয়ারি মাসে ৬ হাজার ৮৭০ কোটি ডলারে অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ড কেনার প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনা চলছে এ চুক্তি নিয়ে।

গেইমারদের শঙ্কা, একাধিক প্ল্যাটফর্মের জন্য অ্যাকটিভিশনের তৈরি জনপ্রিয় গেইমগুলো কেবল নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধ করে ফেলবে মাইক্রোসফট। বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর অভিযোগ, অ্যাকটিভিশনের মালিকানা হাতে পেলে গেইমিং খাতে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ পাবে উইন্ডোজ নির্মাতা।

বাজারের শীর্ষ গেইম নির্মাতা কোম্পানিগুলোর একটি অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ড। কোম্পানির সবচেয়ে ব্যবসা সফল পণ্যের তালিকায় আছে কল অফ ডিউটি, ওভারওয়াচ, ডিয়াব্লো, গিটার হিরো, স্টারক্র্যাফট, ওয়ারক্র্যাফট এবং ক্যান্ডিক্র্যাশ সাগার মত জনপ্রিয় গেইমগুলো।

মামলার অভিযোগে এফটিসি বলেছে, এর আগের অধিগ্রহণ চুক্তিগুলোর মাধ্যমে বহুল আলোচিত বেশ কয়েকটি নতুন গেইম নিজস্ব সফটওয়্যার নির্ভর প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে মাইক্রোসফট। উদাহরণ হিসেবে আরেক আলোচিত গেইম নির্মাতা বেথেসডার মূল কোম্পানি জেনিম্যাক্স মিডিয়ার কথা জানায় এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

জেনিম্যাক্স মিডিয়া কেনার পর মহাকাশ অভিযানের ভিডিও গেইম স্টারফিল্ড আর ভ্যাম্পায়ার শুটিং গেইম রেডফল কেবল পিসি এবং এক্সবক্স প্ল্যাটফর্মে মুক্তি দেয় মাইক্রোসফট।

এক বিবৃতিতে এফটিসির বুরো অফ কম্পিটিশনের পরিচালক হোলি ভেদোভা বলেছেন, “কনটেন্ট গেইমিং বাজারের প্রতিযোগীদের নাগালের বাইরে রাখার ইচ্ছা ও সক্ষমতা দুটোই দেখিয়েছে মাইক্রোসফট। আজকে আমরা একটি শীর্ষস্থানীয় ও স্বাধীন গেইম স্টুডিওর ওপর মাইক্রোসফটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং এর মাধ্যমে দ্রুত বর্ধমান গেইমিং বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বীদের নানাভাগে ক্ষতি করার চেষ্টা প্রতিহত করতে চাইছি।”

গত কয়েক মাস ধরেই অ্যাকটিভিশন চুক্তির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন মাইক্রোসফটের কর্মকর্তারা। প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট লিখেছে, মাইক্রোসফট কার্যত গেইমার আর বাজারনিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে যে, বাজারের সবচেয়ে বড় গেইমিং কোম্পানিগুলোর একটি হিসেবে নিজেদের অবস্থানের অপব্যবহার করবে না তারা।

এফটিসি মামলার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মাইক্রোসফট প্রেসিডেন্ট ব্র্যাড স্মিথ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “প্রতিযোগিতা নিয়ে যে শঙ্কা বিরাজ করছে, তা নিরসনে প্রথম দিন থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আছি আমরা। নিজেদের অবস্থান নিয়ে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস আছে আমাদের। আদালতের আমাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ সাদরে গ্রহণ করছি।”

স্মিথের বিবৃতির বাইরে সিনেটের কাছে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি মাইক্রোসফট।

আর অ্যাকটিভিশন ব্লিজার্ডের প্রধান নির্বাহী ববি কোটিক বৃহস্পতিবারের এক বিবৃতিতে বলেছেন, চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে তিনি আত্মবিশ্বাসী।

সিনেট লিখেছে, এখন পর্যন্ত ‘বিগ টেক’ হিসেবে পরিচিত কোম্পানিগুলোর একটির বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের নেওয়া সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ এটি। বিশ্ববাজারে প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণেই ‘বিগ টেক’ তকমা পেয়েছে মাইক্রোসফট, অ্যাপল, অ্যামাজন, অ্যালফাবেট এবং মেটার মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।

এই কোম্পানিগুলো এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং নিজ নিজ খাতে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে বলে শঙ্কিত বাজার নিয়ন্ত্রক ও প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো।

মাইক্রোসফট অ্যাকটিভিশন কেনার উদ্যোগ নেওয়ার পরপরই সেই শঙ্কার কথা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে জানিয়েছিল সনি। মাইক্রোসফটের কল অফ ডিউটি প্লেস্টেশন প্ল্যাটফর্মের জন্য উন্মুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয় বলে সনির ভাষ্য।

অধিগ্রহণ চুক্তি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নেও বাজার নিয়ন্ত্রকদের হস্তক্ষেপের মুখে পড়েছে মাইক্রোসফট। অক্টোবর মাসে এ চুক্তি নিয়ে অন্যান্য গেইম নির্মাতা কোম্পানির মতামত জানতে চেয়েছিল ইউরোপীয় কমিশন। নভেম্বর মাস থেকে তদন্তে নেমেছেন কমিশনের কর্মকর্তারা।