যুক্তরাজ্যের অনলাইন সুরক্ষা আইন নিয়ে ‘শঙ্কায়’ উইকিপিডিয়া

নতুন এই ‘কঠোর’ জরিমানার হুমকির প্রভাব কেবল বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানি নয়, বরং উইকিপিডিয়ার মতো জনস্বার্থ বিষয়ক সাইটগুলোর ওপরও এসে পড়বে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2023, 12:54 PM
Updated : 17 Jan 2023, 12:54 PM

যুক্তরাজ্যের অনলাইন সুরক্ষা আইনে শীর্ষস্থানীয় সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোর তুলনায় উইকিপিডিয়াকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা ও আচরণ করা উচিৎ – এমনই দাবি করেছেন বিশ্বকোষ সাইটটির শীর্ষ এক সদস্য।

বিশ্বের হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক এই বিশ্বকোষ লিখেন ও সম্পাদনা করেন।

উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেবেকা ম্যাককিনন আরও যোগ করেন, সুরক্ষা আইনে প্রস্তাবিত একটি পরিবর্তন ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করে’ ফেলবে।

অনলাইনে থাকা ক্ষতিকারক কনটেন্ট থেকে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষিত রাখতে এই সুরক্ষা আইন তৈরি হয়েছে। 

উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক সংস্থা, যারা অনলাইন বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া পরিচালনার কাজ করে।

ম্যাককিনন বলছেন, স্বেচ্ছাসেবক চালিত বিভিন্ন সাইটে এই সুরক্ষা আইনের প্রভাব নিয়ে তারা শঙ্কিত।

তিনি বিবিসিকে বলেন, প্রযুক্তি জায়ান্টদের ওপর নতুন এই ‘কঠোর’ জরিমানার হুমকির প্রভাব কেবল বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানি নয়, বরং উইকিপিডিয়ার মতো জনস্বার্থ বিষয়ক সাইটগুলোর ওপরও এসে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট’ নামের আইনটি মাথায় রেখে নতুন এই আইন কার্যকর করা উচিৎ।

তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, ওই আইনে কর্মীর মাধ্যমে পরিচালিত কেন্দ্রীভূত কনটেন্ট মডারেশন ব্যবস্থা ও কমিউনিটির স্বেচ্ছাসেবক পরিচালিত উইকিপিডিয়া-ধাঁচের মডারেশন ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের সরকারী সূত্র বিবিসিকে বলেছে, তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর ওপর অপ্রয়োজনীয় বোঝা চাপিয়ে না দিয়ে, বরং সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় ভারসাম্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে এই আইন নকশা করা হয়েছে।

“এই আইনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা পরিষেবাগুলোর ওপর আইনে বর্ণিত বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োগের বেলায় যুক্তিসঙ্গত ও আনুপাতিক পন্থা অবলম্বন করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘অফকম’।”

মাল্টি-প্লেয়ার গেইম

কোনো সাইট সুরক্ষা আইনে কী ধরনের আচরণ পাবে, তা নির্ভর করে সাইটের আকারের ওপর।

আইনজীবিরা চিহ্নিত করেছেন, বিলের কিছু সংখ্যক নিয়ম জারি হয়েছে শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর লাগাম টেনে ধরার উদ্দেশ্যে। এর প্রভাব পড়তে পারে তুলনামূলক ছোট বিভিন্ন এমন সাইটে, যেখানে ব্যবহারকারী অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব সাইট শিশুদের জন্য ক্ষতিকারক কনটেন্ট দেখা বন্ধ করতে ব্যর্থ হবে, তাদের জন্য দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান তৈরি করে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৫০জন পার্লামেন্ট সদস্য এই সুরক্ষা আইন সংশোধন করতে চেয়েছেন।

ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ আইনজীবী নিল ব্রাউন বিবিসিকে বলেন, “এই বিল ও সংশোধনী এমন কারো ওপর দায়িত্ব আরোপ করতে পারে, যিনি স্রেফ মজার উদ্দেশ্যে নিজস্ব সোশাল মিডিয়া বা বিভিন্ন ফটো/ভিডিও শেয়ারিং সার্ভার চালান বা এমন মাল্টি-প্লেয়ার গেইম উপস্থাপন করেন, যেখানে গেইমাররা একে অপরের কনটেন্ট বা সৃষ্টি দেখতে চ্যাটিংয়ের সহায়তা নেন।”

সফটওয়্যার কোম্পানি সিমিলারওয়েবের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের অষ্টম বহুল ব্যবহৃত সাইট হলো উইকিপিডিয়া। তবে, এর সকল তথ্যই স্বেচ্ছাসেবকরা দিয়ে থাকেন। আর কমিউনিটি সিদ্ধান্ত নেয়, কোন তথ্যগুলো গ্রহণযোগ্য।

ম্যাককিনন বলেন, আইনটি ফেইসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে, যেখানে কোম্পানির শীর্ষ ব্যক্তিরা বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফাউন্ডেশনের কমিউনিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশ্বাস করে ও বিভিন্ন নিবন্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে না। তিনি বলেন, তবে আইনটি এই ব্যবস্থা হস্তক্ষেপে বাধ্য করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, কোনো স্বেচ্ছাসেবক যদি এমন কোনো নিবন্ধ লেখেন, যা যুক্তরাজ্যের আইন পরিপন্থী।

“বিভিন্ন তথ্য সক্রিয়ভাবে সরিয়ে ফাউন্ডেশনের কমিউনিটি মডেল ভাঙতে বাধ্য করবে এটি।” --বলেন তিনি।