Published : 06 Mar 2025, 03:53 PM
১২ জন চীনা নাগরিককে হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের দাবি, চীনা সরকারের কাছে চীন সরকারবিরোধী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের তথ্য বিক্রি করেছিলেন তারা।
মার্কিন বিচার বিভাগ বা ডিওজে বলছে, ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়’ পরিচালিত এই অভিযানে তারা টার্গেট করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি’সহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকেও।
সংস্থাটি আরও বলেছে, এ হ্যাকিংয়ে আমেরিকার একটি ধর্মীয় সংগঠন ও হংকংয়ের একটি সংবাদপত্রকেও টার্গেট করেছিল তারা।
এ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কোনও জবাব দেয়নি চীন। তবে অতীতে এ ধরনের অন্যান্য অভিযোগকে চীন বরাবরই দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
ডিসেম্বরে চীনা মদদপুষ্ট হ্যাকারদের একটি ‘বড়’ আক্রমণের কথা বলেছিল মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই সময় তারা বলেছে, মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের ওয়ার্কস্টেশন ও কিছু ফাইলে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রবেশ করেছে হ্যাকাররা।
ওই সময় এর সঙ্গে কোনও ধরনের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে বর্ণনা করেছিল চীন এবং বলেছিল, ‘সব ধরনের হ্যাকিং কার্যক্রমের বিরোধিতা করে’ তারা।
বিবিসি লিখেছে, চীনা নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এসব অভিযোগ কবে থেকে তা স্পষ্ট নয়। তবে বুধবার ম্যানহাটনের একটি ফেডারেল আদালতে এ অভিযোগ দায়ের হতে পারে।
কাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে?
অভিযুক্তদের মধ্যে চীনের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা রয়েছেন।
ডিওজে বলেছে, ‘আই সুন’ নামের একটি বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করে এ সাইবার আক্রমণের সঙ্গে জড়িত হ্যাকাররা। প্রতিটি ‘কাজে লাগানো’ ইমেইল ইনবক্সের জন্য বিভিন্ন চীনা সংস্থাকে ১০ থেকে ৭৫ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা করেছে ডিওজে।
হ্যাকাররা চীনা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ও উদ্যোগে ‘কম্পিউটারে অনুপ্রবেশ চালিয়েছে’ এবং ‘চুরি করা তথ্যের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ পেয়েছে’ বলে অভিযোগ রয়েছে।
ডিওজে’র জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান সু জে বাই বলেছেন, “আজ আমরা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কম্পিউটার ও নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে নির্বিচারে এবং বেপরোয়া আক্রমণ চালানো চীনা সরকারের এজেন্টদের মুখোশ উন্মোচন করছি।”
“ভাড়াটে সাইবার হ্যাকারদের এই বাস্তুতন্ত্র ভেঙে দিতে ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এ লড়াই চালিয়ে যাব আমরা।”
কাদের টার্গেট করা হয়েছিল?
এ হ্যাকিং কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চীন সরকারবিরোধীদের টার্গেট করা হয়েছিল। তবে সুনিদিষ্টভাবে কাদের সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ডিওজে।
হ্যাকিং আক্রমণের শিকার আমেরিকার এ ধর্মীয় সংগঠনটি ‘আগে চীনে মিশনারি পাঠিয়েছে এবং তারা চীন সরকারের প্রকাশ্য সমালোচক ছিল’ বলে বর্ণনা করেছে সংস্থাটি।
এ তালিকায় রয়েছে হংকংয়ের একটি সংবাদপত্রও। নাম প্রকাশ না করলেও ডিওজে’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চীন সরকারবিরোধী বলে বিবেচিত’ এ সংবাদপত্রটি।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও তাইওয়ান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও টার্গেট করেছিল হ্যাকাররা।
গত অক্টোবরে এফবিআই ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি’ বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রধান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণাকে টার্গেট করে এ হ্যাকিং চালিয়েছে ‘চীন সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা’।
এর আগে গত বছরের শুরুতে সাতজন চীনা নাগরিকের বিরুদ্ধে ১৪ বছর ধরে চলা হ্যাকিং অভিযান চালানোর অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র। ওই অভিযান বিদেশী সমালোচকদের টার্গেট করে চীন চালিয়েছিল বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের।