গাঁজার বৈধকরণ ও ক্রমবর্ধমান গ্রহণযোগ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে এর বিভিন্ন প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Published : 20 May 2024, 06:12 PM
মানবদেহের ডিএনএ’তে বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটাতে পারে গাঁজা --এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
গাঁজা সাধারণত ধূমপান বা কেকজাতীয় খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, প্রায় ১৮ শতাংশ আমেরিকান জীবনে অন্তত একবার হলেও গাঁজা সেবনের চেষ্টা করেছেন, যা দেশটির সর্বাধিক ব্যবহৃত ড্রাগ বা নেশাদ্রব্য হিসাবে বিবেচিত।
এর বহুল ব্যবহার থাকার পরও স্বাস্থ্যের ওপর গাঁজার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনও পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয়ে ওঠেনি, যার ফলে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফাইনবার্গ স্কুল অফ মেডিসিন’-এর অনুমোদিত একটি অলাভজনক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ‘নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিন’-এর নতুন এক গবেষণায় গাঁজা ব্যবহার সম্পর্কিত মানবদেহের বিভিন্ন জেনেটিক পরিবর্তন পরীক্ষা করা হয়েছে।
এ গবেষণায় নয়শ জনেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করেছে ক্যান্সার গবেষণা বিশেষজ্ঞ ড. লিফাং হাউ’র নেতৃত্বাধীন গবেষণা দলটি, যারা এর আগে একটি ‘হার্ট হেলথ’ গবেষণার অংশ ছিলেন। এইসব নমুনা সংগৃহিত হয়েছে পাঁচ বছরের ব্যবধানে, যার ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানবদেহের বিভিন্ন পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ মিলেছে।
এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের সাম্প্রতিক ও জীবনব্যাপী গাঁজা ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, যা গবেষকদেরকে তাদের ডিএনএ থেকে প্রাপ্ত জেনেটিক ডেটার সঙ্গে ব্যবহারের মাত্রা মেলাতে সাহায্য করেছে।
এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফলে দেহের ‘ডিএনএ মেথিলেশন’-এ বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে বিভিন্ন ছোট রাসায়নিক গ্রুপ দেহের ডিএনএ’র সঙ্গে যুক্ত থাকে ও জিনকে সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় করতে পারে। গবেষকরা এতে গাঁজা ব্যবহার সংশ্লিষ্ট ১৬ থেকে ১৩২ ‘মেথিলেশন মার্কার’ চিহ্নিত করেছেন।
এইসব মার্কার মূলত পাওয়া গেছে দেহ কোষ বৃদ্ধি, হরমোন সংকেত, সংক্রমণ প্রতিক্রিয়া ও মানসিক রোগ যেমন– ‘সিজোফ্রেনিয়া’, ‘বাইপোলার ডিসঅর্ডার’ ও নেশাজাতীয় ব্যবহার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত ডিএনএ অঞ্চলে।
গাঁজা সরাসরি দেহে এইসব জিনগত পরিবর্তন ঘটায় বা স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে ধাবিত করে কি না, গবেষণায় তা নিশ্চিত করা না হলেও এর সঙ্গে গাঁজার সরাসরি সম্পর্ক থাকার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
গাঁজার বৈধকরণ ও এর ক্রমবর্ধমান গ্রহণযোগ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে এর বিভিন্ন প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে ব্যবহারকারী ও নীতিনির্ধারকরাও এর সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারবেন, এমনকি টেকসই বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণের ভিত্তিতে গাঁজার ব্যবহার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
‘মলিকুলার সাইকিয়াট্রি’ জার্নালে প্রকাশিত এ গবেষণাটি শুধু গাঁজার জৈবিক প্রভাব নিয়ে নতুন তথ্য দিচ্ছে না, বরং কারও বয়সের হিসাবে স্বাস্থ্যের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব খুঁজে দেখার ক্ষেত্রে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।