“ওয়াইন তৈরির ক্ষেত্রে এআই আসলে বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়।”
Published : 18 Apr 2024, 06:28 PM
বিশালাকারের এক আঙ্গুর ক্ষেতের দায়িত্বে আছেন মার্কিন ওয়াইন ফার্ম ‘ফোলি ফ্যামিলি ফার্মস’-এর পরিচালক কারা ম্যারাডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও ওরেগন শহরের এক হাজার কিলোমিটারের বেশি জায়গায় ছড়িয়ে থাকা ৫২০০ একর আঙ্গুর ক্ষেতের মালিক তিনি। ওয়াইন উৎপাদনে তিনি এমন এক টুল ব্যবহার করছেন যেটি আগে কেউ করেনি।
সেই টুলটির নাম এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।
ব্যস্ততার কারণে স্পষ্টতই একইসঙ্গে সব জায়গায় থাকতে পারেন না তিনি। তবে, এআই প্রযুক্তির সহায়তায় এখন ল্যাপটপ থেকেই নিজের প্রতিটি আঙ্গুর ক্ষেতের পানি সংক্রান্ত গতিবিধির ওপর নজর রাখতে পারেন ম্যারাডেন।
“আমি এখন অনলাইনেই দেখতে পারি যে, ৪৮২ কিলোমিটার দূরের সান্তা বারবারা এলাকায় কী প্রয়োজন,” বলেন সান ফ্রান্সিসকোর উত্তর-পশ্চিমের এলাকা নাপার বাসিন্দা মারাডেন।
“ওয়াইন তৈরির ক্ষেত্রে এআই আসলে বিজ্ঞানভিত্তিক সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়।”
এর আগে আঙ্গুর ক্ষেতে সেচের প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণের জন্য মানুষের বিচার ও গণনার ওপর নির্ভর করা হতো। তবে, এখন ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সেচ ফার্ম ‘টিউল টেকনোলজিস’এর তৈরি সেন্সর ব্যবহার করছে ‘ফোলি ফ্যামিলি ফার্মস’।
এ ধরনের সেন্সরগুলো দেখতে ছোট আবহাওয়া স্টেশনের মতো, যেগুলো পুরো আঙ্গুর ক্ষেতজুড়ে বসানো হয়। এর মাধ্যমে ক্ষেতে আর্দ্রতার মাত্রা, তাপমাত্রা, বাতাসের গতি ও অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন হিসাব করা যায়।
এর পর সে তথ্য যায় ‘টিউল টেকনোলজিস’-এর এআই সফটওয়্যার সিস্টেমে, যা বিভিন্ন আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে মাটি ও আঙ্গুর গাছ থেকে কতটা আর্দ্রতা বাষ্পীভূত হবে তা গণনা করার জন্য প্রশিক্ষিত। এরইপ্রেক্ষিতে, আঙ্গুর গাছে কতটা সেচ প্রয়োজন ও কখন পানি দেওয়া লাগবে, সে বিষয়গুলো নির্ধারণের পাশাপাশি এক অ্যাপের মাধ্যমে আঙ্গুর ক্ষেতের পরিচালকদের তা জানাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে এআই প্রযুক্তি।
“আমরা এ বিষয়ে সর্বদাই সক্রিয়,” বলেছেন মিসেস ম্যারাডেন।
“তবে এই ডেটা আমাদেরকে বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এদিকে, বিবেচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় মন্দ না হলেও আমরা ডেটা ব্যবহার করতেই পছন্দ করি।”
‘ফোলি ফ্যামিলি ফার্মস’-এর আরেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হল ‘ফোলি ফ্যামিলি ওয়াইনস’, যারা একসঙ্গে ২৩টি ভিন্ন ব্র্যান্ডের ওয়াইন উৎপাদন করে থাকে। ম্যারাডেন বলছেন, ‘আঙ্গুরের গুণমান ও ধারাবাহিকতা উন্নত করার’ ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে এআইয়ের বিভিন্ন সেচভিত্তিক সেন্সর।
‘টিউল টেকনোলজিস’-এর প্রধান নির্বাহী টম শ্যাপল্যান্ড বলেছেন, এ ধরনের সেন্সরের আরেক সুবিধা হল, এরা শ্রমের ঘাটতি কাটাতেও সহায়ক হতে পারে।
“এআই আঙ্গুর ক্ষেতে ২৪ ঘণ্টাই নজর রাখে।”
এজন্য ‘টিউল ভিশন’ নামে একটি এআই-চালিত অ্যাপও তৈরি করেছে ‘টিউল টেকনোলজিস’, যেখানে মানুষ আঙ্গুর ক্ষেতের কয়েক মিনিটের ভিডিও রেকর্ড করলেই এটি সেচ দেওয়ার সময় বলে দেয়। আর এ এআই প্রযুক্তিটি প্রশিক্ষিত হয়েছে পানির ঘাটতিতে থাকা আঙ্গুরের শত শত ছবি দেখার মাধ্যমে।
আঙ্গুর গাছ পর্যবেক্ষণে এআইভিত্তিক টুলের অন্যান্য সরবরাহকারীদের মধ্যে রয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট ‘সিসকো’, স্টার্টআপ কোম্পানি ‘সেরেস ইমেজিং’ ও ‘ব্লুমফিল্ড এআই’।
ওয়াইন তৈরির আঙ্গুর সংগ্রহের পর সেগুলো প্রক্রিয়াকরণের জন্য ওয়াইনারিতে নেওয়া হয়। তবে, এখন সে জায়গাতেও এআই প্রযুক্তিকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
একই ধরনের এআই চালিত অ্যাপ বানিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি ‘টেস্ট্রি’। আর তারা ওয়াইন প্রস্তুতকারকদের এমন ওয়াইন তৈরিতে সহায়তা করছে, যা বিপুল সংখ্যক গ্রাহকদের পছন্দ হবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এজন্য ওয়াইনের রাসায়নিক দিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি ২৪ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ওয়াইন পানকারীর পছন্দের স্বাদের তালিকাওয়ালা এক ডেটাবেসের সঙ্গে তা তুলনা করে থাকে সফটওয়্যারটি।