দেশটির কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, নারী ও পুরুষ কর্মী নিয়োগে কোনো ধরনের বৈষম্য করা যাবে না।
Published : 29 Jun 2024, 02:16 PM
আইফোন কারখানায় ‘বিবাহিত নারীদের নিয়োগ না দেওয়ার’ অভিযোগে সম্প্রতি অ্যাপলের আইফোন সরবরাহক কোম্পানি ফক্সকনের কাছে জবাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছে ভারত।
‘ফক্সকন’ আইফোন তৈরির চাকরির জন্য বিবাহিত নারীদের নিয়োগ দিচ্ছে না– এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পরপরই তামিলনাড়ু অঙ্গরাজ্যের কাছে এর বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছে ভারত সরকার।
এর আগে রয়টার্সের প্রতিবেদনে অভিযোগ উঠে এসেছে, অবিবাহিত নারীদের তুলনায় বিবাহিত নারীদের পারিবারিক দায়িত্ব বেশি থাকায় চেন্নাইয়ের কাছাকাছি যে আইফোনের কারখানা আছে, সেখানে বিবাহিত নারীদের চাকরি দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে ফক্সকন।
দেশটির কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, নারী ও পুরুষ কর্মী নিয়োগে কোনো ধরনের বৈষম্য করা যাবে না।
এর বিপরীতে ফক্সকন এক বিবৃতিতে বলেছে, “কারো বৈবাহিক অবস্থার ভিত্তিতে কর্মসংস্থান বৈষম্যে”র অভিযোগটি তারা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।
তবে অ্যাপল বা তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার কেউই এ বিষয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। এমনকি তামিলনাড়ুর শ্রম দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়া পায়নি বিবিসিও।
২০১৭ সালে অ্যাপলের সবচেয়ে বড় আইফোন উৎপাদক কোম্পানি ফক্সকন তামিলনাড়ুতে নিজেদের প্রথম কারখানা নির্মাণ করেছিল। তখন থেকেই ভারতে আগ্রাসীভাবে নিজেদের কার্যক্রম বাড়িয়ে আসছে কোম্পানিটি।
২০২৩ সালে তামিলনাড়ু রাজ্যে আইফোন ১৫ বানানোর কাজ শুরু করে ফক্সকন। পাশাপাশি এই বছরের শুরুতে তামিলনাড়ুতে পিক্সেল স্মার্টফোন তৈরির জন্য গুগলের সঙ্গেও চুক্তি করেছে কোম্পানিটি।
ফক্সকন বলেছে, তারা নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করে না। এমনকি তাদের নিয়োগের সাম্প্রতিক ফলাফলে নিয়োগপ্রাপ্ত নারীদের ২৫ শতাংশই বিবাহিত।
তবে কোম্পানিটি স্বীকার করেছে, বিভিন্ন নিয়োগকারী কোম্পানির মাধ্যমে পোস্ট করা এমন ২০টি চাকরির বিজ্ঞাপন ২০২২ সালে সরানো হয়েছে। কারণ সেগুলো ‘কোম্পানির নিয়োগের মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি’।
রয়টার্সের তদন্তে যে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে, সেটি ২০২৩ ও ২০২৪ সালের বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
“আমরা যখন কোনো সমস্যা দেখি তখন আমরা সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করি। এমনকি নিয়োগকারী কোম্পানিকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি সংশোধনমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপও নিই,” বলেছে ফক্সকন।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ভারতে কোম্পানির নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে এ ধরনের প্রতিবেদন খুবই উদ্বেগজনক। কারণ হাজার হাজার মানুষ চাকরির সুযোগ পেতে কোম্পানিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন।
রয়টার্স বলছে, এ প্রতিবেদনের জন্য তারা অনেক কর্মী ও ফক্সকনে নিয়োগে মধ্যস্ততা করে এমন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছে।
ওই প্রতিবেদন অনুসারে, বিবাহিত নারীদের পারিবারিক দায়িত্ব, গর্ভাবস্থা এবং অনুপস্থিতির হার বেশি হওয়াকে ফক্সকন কারখানায় তাদের নিয়োগ না দেওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ফক্সকনের নিয়োগকারী এজেন্ট ও মানব সম্পদ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র।
তবে নিজেদের শ্রম চর্চা নিয়ে এবারই প্রথম ফক্সকন তদন্তের মুখে পড়েছে, বিষয়টি এমন নয়।
২০১৮ সালে, চীনে অ্যামাজনের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করা ফক্সকন কারখানায় অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করানোর পাশাপাশি তাদেরকে কম বেতন দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক মানবাধিকার সংস্থা।
এ ছাড়া, নির্দিষ্ট বকেয়া পরিশোধ না করার অভিযোগে ২০২২ সালে চীনে অবস্থিত ফক্সকনের আইফোন কারখানায় বিক্ষোভ করতেও দেখা গিয়েছে কর্মীদের।