সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক সমীক্ষায় ইঙ্গিত মিলেছে, ২০২৫ সাল নাগাদ দৈনিক সাত কোটি ৮০ লাখ ব্যাটারি বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হবে।
Published : 01 Feb 2024, 02:52 PM
বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন এক নতুন সেন্সর উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে লাখ লাখ ব্যাটারির যন্ত্রণা থেকে গ্রাহকদের এবং এই পৃথিবীর মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক সমীক্ষায় ইঙ্গিত মিলেছে, ২০২৫ সাল নাগাদ দৈনিক সাত কোটি ৮০ লাখ ব্যাটারি বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হবে। আর এদের সবকটিই বিভিন্ন এমন উপাদানের ওপর নির্ভরশীল, যেগুলো সংগ্রহ করা কঠিন। আর এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়াও সম্ভব নয়।
গবেষকরা বলছেন, তারা যে যান্ত্রিক সেন্সর বানিয়েছেন তাতে কোনও শক্তির প্রয়োজন নেই। ফলে, এটি ব্যাটারির অপচয় রোধেও সহায়ক হতে পারে।
নির্মাতাদের দাবি, সেন্সরটি পুরোপরি যান্ত্রিকভাবে কাজ করে।
“কেবল শব্দ তরঙ্গে থাকা কম্পনের মাধ্যমেই চলে এটি,” বলেন সুইজারল্যাণ্ডের গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইটিএইচ জুরিখ’-এর অধ্যাপক জোহান রবার্টসননতুন যিনি এ গবেষণায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের একজন।
সেন্সরটি কোনো সুনির্দিষ্ট শব্দের প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম। এমনকি এই ব্যবস্থা শব্দের মধ্যেও পার্থক্য করতে পারে। এর নির্মাতাদের দাবি, শাব্দিক শক্তির মাধ্যমে ‘তিন’ ও ‘চার’ সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য বলতে পারে এটি।
ভবিষ্যতে সেন্সরটিতে এর চেয়েও জটিল সক্ষমতা যোগ করতে চান এর নির্মাতারা। এর মধ্যে থাকতে পারে, ১২টি ভিন্ন শব্দের মধ্যে পার্থক্য শনাক্ত করা, যেগুলোতে ‘অন’ বা ‘অফ’-এর মতো কমান্ড থাকবে। আর যে কোনো মেশিন বা যন্ত্র নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে এটি।
এ যুগান্তকারী উদ্ভাবনটিকে বলা হচ্ছে ‘মেটাম্যাটিরিয়াল’, যার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এর উপাদান থেকে নয় বরং এগুলো সাজানোর কাঠামো থেকে আসে। সেন্সরটির বিভিন্ন উপকরণ খুঁজে পাওয়া সহজ। আর এগুলো পুরোপুরি সিলিকন দিয়ে বানানোর কারণে এর টেকসই হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।
এই সেন্সরগুলোকে ভূমিকম্প বা ভবন নিরীক্ষণের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিপজ্জনক কোনো ভবনের ফাটল শনাক্তে এটি সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। এমনকি তেলের খনিতেও ব্যবহার করা যেতে পারে এটি। বিশেষ করে, খনিতে কোনো বিপদ ঘটানো গ্যাস আছে কি না, তা জানার ক্ষেত্রে।
গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন, বিভিন্ন স্বাস্থ্য ডিভাইসের জন্য উপকারী হতে পারে সেন্সরটি। এ মুহুর্তে, রোগীর ‘ককলিয়ার ইমপ্লান্টের (কানের সার্জারি)’ জন্য দৈনিক একাধিকবার ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হয়, যা এই সেন্সরের মাধ্যমে এড়ানো সম্ভব। এমনকি পরবর্তীতে এমন ছোট আকারের সেন্সর তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যেগুলোতে ব্যাটারির প্রয়োজন পড়বে না। এমনকি চোখের চাপ পরিমাপের মতো কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে সেগুলো।
বর্তমানে গোটা বিশ্বে নানারকম জটিল কাজে সেন্সর প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে থাকে। আর এগুলো সাধারণত বিভিন্ন বিপজ্জনক শব্দ বা সংকেত পর্যবেক্ষণ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে যারা কানে কম শোনেন তাদের সহায়ক যন্ত্র হিয়ারিং এইডের কথা। তবে এগুলো চালাতে যে শক্তি প্রয়োজন, তা নির্ভর করে ব্যাটারির ওপর। এমনকি নিয়মিত ব্যাটারিও পাল্টাতে হয় এসব যন্ত্রে। এর ফলে অনেক ই-বর্জ্য তৈরি হয়।
সেন্সরটির গঠন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে ‘ইন-সেন্সর প্যাসিভ স্পিচ ক্লাসিফিকেশন উইথ ফোনোনিক মেটামেটেরিয়ালস’ শীর্ষক নতুন গবেষণাপত্রে, যা প্রকাশ পেয়েছে ‘অ্যাডভান্সড ফাংশনাল ম্যাটেরিয়ালস’ জার্নালে।