“অ্যাপল গ্রাহকদেরকে আইফোন ব্যবহারে আসক্ত করে বাজার থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে, ” বলেন মার্কিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল লিসা মোনাকো।
Published : 23 Mar 2024, 01:39 PM
স্মার্টফোনের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে আইফোন নির্মাতা অ্যাপলের বিরুদ্ধে। মার্কিন বিচার বিভাগের সর্বশেষ দায়ের করা মামলায় উঠেছে এ অভিযোগ।
প্রযুক্তি ব্র্যান্ড হিসাবে অ্যাপলের অনন্য এক অবস্থান রয়েছে। আর যারা এটি পছন্দ করেন, তাদের কাছ থেকে প্রচুর সমর্থন পেয়ে থাকে কোম্পানিটি।
অ্যাপলের নতুন কোনও হার্ডওয়্যার পণ্য বিক্রি শুরু হলে কোম্পানির কর্মীরা দোকানের বাইরে ‘গার্ড অফ অনার’ দিয়ে প্রথম ক্রেতাদের সাধুবাদ ও সম্মান জানিয়ে থাকে, যেখানে অনেককেই হাজার হাজার ডলার খরচ করে কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার নজির মিলেছে।
“অ্যাপল এমন একটি অদ্ভুত মাদকের মতো, যা থেকে নিস্তার নেই।” – ২০০৬ সালে ‘দ্য কাল্ট অফ ম্যাক’ নামের বইতে লিখেছিলেন প্রযুক্তিবিষয়ক লেখক লিয়ান্ডার কাহনি।
এ “অদ্ভুত মাদক” বা ‘জাদুকরী অভিজ্ঞতাতেই’ আগুন লেগে গেছে বলে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে অ্যাপল।
এখন অবধি অ্যাপল বেশ কিছু সফল ব্যবসায়িক মডেল বানিয়েছে, যার ফলে দুই লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার বাজারমূল্যে অবস্থান করছে কোম্পানিটি।
বৃহস্পতিবার অ্যাপলের বিরুদ্ধে বড় পরিসরে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, যেখানে স্মার্টফোনের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে প্রতিযোগীদের গলা চেপে ধরার, নতুন উদ্ভাবনে নিরুৎসাহ দেওয়ার ও কৃত্রিম উপায়ে স্মার্টফোনের দাম উর্ধ্বমূখী রাখার অভিযোগ তোলা হয় কোম্পানিটির বিরুদ্ধে।
মামলাটি দায়ের হয়েছে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের ফেডারেল আদালতে। এতে বলা হয়, স্মার্টফোনের বাজারে আধিপত্য ও আইফোনের ওপর কোম্পানির নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নিয়ে ‘বিস্তৃত পরিসরে অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা’ করছে অ্যাপল।
“অ্যাপল গ্রাহকদেরকে আইফোন ব্যবহারে আসক্ত করে বাজার থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে, ” বলেন মার্কিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল লিসা মোনাকো।
তিনি আরও যোগ করেন, এতেকরে তারা সেই বাজারের অগ্রগতি আটকে রাখছে, যেখানে তারা এক সময় বিপ্লব ঘটিয়েছিল। আর এর প্রভাব পড়েছে ‘গোটা শিল্পের ওপর’।
তবে, মামলাটিকে ‘আইন ও যুক্তির হিসাবে ভুল’ বলে আখ্যা দিয়ে অ্যাপল বলেছে, তারা ‘বিচার বিভাগের এমন অবস্থানের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে’ লড়বে।
অ্যাপল কীভাবে নিজস্ব প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে ‘গ্রাহক, অ্যাপ নির্মাতা, কনটেন্ট নির্মাতা, শিল্পী, প্রকাশক, ছোট ব্যবসা, ব্যবসায়ী’সহ অনেকের কাছ থেকেই অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে, সে বিষয়গুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে এ মামলায়।
এর মধ্যে রয়েছে কোম্পানির বাইরের স্মার্টওয়াচগুলোর কার্যকারিতা বন্ধ করা, বিভিন্ন থার্ড পার্টি ডিজিটাল ওয়ালেটে যোগাযোগবিহীন অর্থ পরিশোধের সুযোগ সীমিত করা ও নিজেদের ‘আই-মেসেজ’ অ্যাপের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী সেবাগুলোর ‘এনক্রিপ্টেড মেসেজিং’ চালানোর সুবিধা দিতে না চাওয়ার মতো বিষয়াদিও।
মামলাটি দায়ের করেছেন ১৬টি মার্কিন অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা। এর আগে একই ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে গুগল, অ্যামাজন’সহ অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানির বিরুদ্ধেও। এর লক্ষ্য, ডিজিটাল জগৎকে আগের চেয়ে বেশি ন্যায্য, উদ্ভাবনী ও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা।
“ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও কঠোরভাবে একচেটিয়া রাজত্ব কোম্পানিগুলোর এমন অনুশীলন বন্ধ করার ক্ষেত্রে বিশেষ পরিচিতি আছে বিচার বিভাগের,” এক সংবাদ সম্মেলনে মামলাটি ঘোষণা করার সময় বলেন বিচার বিভাগের অ্যান্টিট্রাস্ট বিভাগ প্রধান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জনাথন কান্টার।
“আজ আমরা আবারও পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তির জন্য প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবনের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছি।”
অ্যান্টিট্রাস্ট গবেষক ও ইয়েল ইউনিভার্সিটির ফেলো ডিনা শ্রিনিভাসান এ মামলার গুরুত্বকে তুলনা করেছেন ২৫ বছর আগে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে নেওয়া সরকারি পদক্ষেপের সঙ্গে, যখন বিশ্বের সবচেয়ে উন্নয়নশীল কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ‘বড় এক লড়াইয়ে’ নেমেছিল মার্কিন সরকার।
“শারীরিক আঘাত বা বুলিয়িং করার পরও যদি কেউ ভান ধরে যে সে আসলে বুলি না, তা সত্যিই বড় একটি বিষয়,” বলেন তিনি।
এদিকে, বিচার বিভাগ ও ফেডারেল ট্রেড কমিশনকে কঠোরভাবে অ্যান্টিট্রাস্ট নীতিমালা প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এ ছাড়া, ‘কর্পোরেট মার্জার’ ও সন্দেহজনক ব্যবসায়িক অনুশীলনে ধাপে ধাপে পুলিশিংয়ের বিষয়টি কিছু ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে, যেখানে ডেমোক্র্যাটিক দলীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘অতিরিক্ত নাক গলানোর’ অভিযোগ উঠেছে। তবে, অনেকের কাছে ‘দায়িত্ব’ হিসেবেও প্রশংসা কুড়িয়েছে পদক্ষেপটি।
মামলাটির লক্ষ্য, আইফোন ও অন্যান্য জনপ্রিয় পণ্য যেমন আইপ্যাড, ম্যাক ও অ্যাপল ওয়াচ ঘিরে ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনো শহরভিত্তিক কোম্পানি অ্যাপল যে ‘প্রাচীরযুক্ত বাগান’ তৈরি করেছে, তাদের সেই ‘ডিজিটাল দুর্গে ফাটল সৃষ্টি করা’ যাতে কোম্পানির সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সদৃশ সুবিধাগুলো ব্যবহারবান্ধব হয়ে ওঠে।
এই কৌশল অবলম্বন করে বার্ষিক প্রায় ৪০ হাজার কোটি ডলার আয় করে অ্যাপল। আর সম্প্রতি তিন ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে কোম্পানির বাজারমূল্য।
তবে, বছরের শুরুতে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারমূল্য আকাশচুম্বী অবস্থানে পৌঁছালেও অ্যাপলের শেয়ারমূল্য কমেছে সাত শতাংশ। এমনকি দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক্রোসফটের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে দামী কোম্পানির খেতাবও হারাতে দেখা গেছে অ্যাপলকে।