“আমাদের এ বস্তুটির ওপর কড়া নজর রাখতে হবে। কারণ মহাকাশের সবচেয়ে বিপজ্জনক জিনিস হতে পারে এটি।”
Published : 08 Feb 2025, 03:51 PM
পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণুকে ঠেকাতে মহাকাশে পরমাণু অস্ত্র পাঠানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
ব্রিটিশ বিজ্ঞান লেখক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. ডেভিড হোয়াইটহাউস বলেছেন, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা বা ইএসএ-এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ফুটবল মাঠের আকারের সমান গ্রহাণুটিকে। এর বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, যার সাত বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে পৃথিবীতে আঘাত হানার কথা রয়েছে।
১০০ মিটার প্রস্থ ও ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের ‘২০২৪ ওয়াইআর৪’ নামের গ্রহাণুটি বর্তমানে পৃথিবী থেকে প্রায় চার কোটি ৩৫ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এবং ক্রমাগত এটি দূরে সরে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ।
গ্রহাণুটি ২০৩২ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবীর কক্ষপথ পেরোবে এবং শুরুতে অনুমান ছিল, পৃথিবীতে গ্রহাণুটির সরাসরি আঘাত হানার ঝুঁকি ৮৩ বারের মধ্যে একবার।
তবে এ ঝুঁকি এখন ৬৭ টির মধ্যে একটিতে নেমে এসেছে, যা “এড়িয়ে যাওয়া সহজ নয়” বলে স্কাই নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছেন ড. হোয়াইটহাউস। তিনি বলেন, “আমার ধারণা পৃথিবীর ওপর গ্রহাণুটির প্রভাব গুরুতর হতে পারে।
“আমাদের এ বস্তুটির ওপর কড়া নজর রাখতে হবে। কারণ মহাকাশের সবচেয়ে বিপজ্জনক জিনিস হতে পারে এটি।”
তিনি বলেছেন, গ্রহাণুটির ‘কক্ষপথের পরিবর্তন ঘটবে’ যা এর পৃথিবীতে আঘাত আনার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তবে ২০২৮ সালে এটি দৃষ্টিসীমার আড়ালে চলে যাওয়ার আগে গ্রহাণুটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য কেবল ‘কয়েক মাস’ সময় পাবেন বিশেষজ্ঞরা।
“আর এ সময়ের মধ্যে এটিকে ঠেকানোর জন্য আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই আমাদের কিছু গুরুতর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা কোনোভাবেই এটিকে উপেক্ষা করতে পারি না।”
আগামী সপ্তাহে ভিয়েনায় একটি সভায় গ্রহাণুটির সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবে ইএসএ-র সভাপতিত্বে থাকা ‘স্পেস মিশন প্ল্যানিং অ্যাডভাইজরি গ্রুপ’।
ইএসএ এক বিবৃতিতে বলেছে, গ্রহাণুটির আঘাতের ঝুঁকি নিশ্চিত হলে জাতিসংঘের কাছে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক সুপারিশ করবে তারা। পাশাপাশি ‘এর সম্ভাব্য বিপদ ঠেকাতে মহাকাশযানের বাইরে অন্যান্য বিকল্প’ নিয়ে কাজ শুরুর কথা রয়েছে তাদের।
কেবল দুই বছর আগে এক মহাকাশযানের ধাক্কায় ‘ডিমরফোস’ নামের ১৬০ মিটার চওড়া গ্রহাণুর কক্ষপথ সফলভাবে পরিবর্তন করে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
ড. হোয়াইট হাউস বলেছেন, “গ্রহাণুটির কক্ষপথ পরিবর্তনের জন্য এ গ্রহাণুর পৃষ্ঠে পারমাণবিক অস্ত্র পাঠানোর মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বিবেচনা করতে হতে পারে আমাদের।”
গড়ে প্রতি কয়েক হাজার বছরে একবার এই আকারের গ্রহাণু সরাসরি আঘাত হানে পৃথিবীতে।
১৯০৮ সালে ৬০ মিটার আকারের ছোট একটি গ্রহাণু বিস্ফোরিত হয় সাইবেরিয়ায়। অঞ্চলটির আটশ ৩০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ৮ কোটি গাছ উপড়ে ফেলে এই বিস্ফোরণ।
ড. হোয়াইটহাউস বলেছেন, “আমি জোর দিয়ে বলতে পারছি না যে এটি এমন ধরনের হুমকি তৈরি করবে, যা জ্যোতির্বিদ্যায় একটুও মজার বিষয় নয়। আসলে আমাদের পৃথিবীর জন্য গুরুতর হুমকির হতে পারে এটি।”