প্রথম আধা ঘণ্টাতেই প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে লেনদেন হয় ১৯৭ কোটি টাকা।
Published : 23 Jan 2024, 06:29 PM
দ্বিতীয় ধাপে ২৩ কোম্পানির বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন শেয়ারদর বা ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে দেওয়ার পর সকালের ধাক্কা কাটিয়ে আগের দিনের মতো দিন শেষে সূচক ঊর্ধ্বমুখীই ছিল; লেনদেনও বেড়ে হয়েছে প্রায় আট মাসে সর্বোচ্চ।
মঙ্গলবার দিনের শুরুর প্রথম কয়েক মিনিটে সূচক কমে যায় ২৫ পয়েন্টের মতো, পরে অনেক শেয়ার হারানো দর ফিরে পেতে শুরু করলে সূচক ঘুরতে থাকে। শেয়ার কেনার পরিমাণ বাড়তে থাকলে লেনদেনেও গতি আসে। প্রথম আধা ঘণ্টায় প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে লেনদেন হয় ১৯৭ কোটি টাকা।
পরের পৌনে এক ঘণ্টাতেও সূচক ও লেনদেন বাড়তে থাকে সমানতালে। সোয়া এক ঘণ্টা পর সূচকের সেই ধারা বজায় থাকেনি। অনেকেই মুনাফা তুলে নেওয়া শুরু করলে বিক্রি চাপে সূচক কমে যায়। তবে ওঠানামার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষে আগের দিনের মতোই ইতিবাচক ছিল সূচক।
এদিন প্রধান বাজার ডিএসইতে সোমবারের চেয়ে লেনদেনের পরিমাণ বাড়লেও দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির চেয়ে দর হারানোর সংখ্যা ছিল বেশি।
মঙ্গলবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে লেনদেন; শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে এক হাজার ১৭৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার। এর আগে ২০২৩ সালের ৫ জুন এক হাজার ২৫৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। সে হিসাবে এ দিনের লেনদেন সাত মাস ২০ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৬ পয়েন্ট।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বিতীয় ধাপে খুলে দেওয়া ফ্লোর প্রাইসের ২৩ কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন লেনদেন করতে পারেননি। অনেকেই শেয়ার বিক্রি করে নতুন শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। বেশি দামের শেয়ার ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামের শেয়ার কিনেছেন।
আবার যেসব কোম্পানি হিসাব বছরের প্রথমার্ধ শেষে ভালো ব্যবসা করতে পারেনি সেগুলোর শেয়ারও হাতবদল হয়েছে। এতে বাজার মিশ্র ধারার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে।
ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্ট নিয়ে লেনদেন শুরু করে। পুরোটা সময় ৬ হাজার ২০০ থেকে ৩০০ পয়েন্টের মধ্যে প্রধান সূচকটি ওঠানামা করে।
লেনদেন শুরুর প্রথম আধা ঘণ্টাতে সূচক ওঠে ৬ হাজার ২৫৮ পয়েন্টে। শুরুর দিকে প্রথম ছয় মিনিটে সূচকের পতন হলেও পুনরায় উঠতে থাকে, বেলা ১১টায় তা ৬ হাজার ২৮৮ পয়েন্টে ওঠে। পরের কয়েক ঘণ্টায় ওঠানামার মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয় ৬ হাজার ২৭০ পয়েন্টে।
এদিন ৩৯৩ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বাড়ে ১২৬টির বা ৩২ শতাংশে, সোমবার দর বেড়েছিল ১৮৮টির।
অন্যদিকে দর কমে যায় ২২৭টির বা ৫৮ শতাংশের, সোমবার কমেছিল ১৪৯টির। শেয়ার দর অপরিবর্তিত ছিল ৪০টির।
ফ্লোরপ্রাইস তোলা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভিন্নমুখী আলোচনার মধ্যে এদিনের সূচকের উত্থান-পতন ও বাজার লেনদেনকে কিছুটা ‘সংশোধন’ বলছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘দুই দিন বাজার ভালো যাওয়ার পরে আজকে (মঙ্গলবার) সূচক কিছুটা পড়েছে শেষ বেলায়। এটি অনেকটা কারেকশন (সংশোধন) হলো। এটিই বাজারের মূল আচরণ। কখনও অনেক ভালো যাবে আবার পাল্টাবে। দেড় বছর পর পুঁজিবাজার সেই আচরণের দিকে যাচ্ছে।’’
১২টি ছাড়া আর কোনোটিতে ফ্লোর প্রাইস নেই না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন আটকে থাকা বিনিয়োগকারীরা পোর্টফলিও বিন্যাস করছেন নতুন করে। কেউ দামি শেয়ার ছেড়ে দিয়ে কম দামি বেছে নিচ্ছেন। আবার যারা ব্যবসা ভালো করেনি তাদের শেয়ারও ছেড়ে দিতে শুরু করেছেন অনেকে।’’
সাধারণ বিনিয়োগকারী আশরাফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘দুই দিন ভালো গেছে এখনতো সবাই ভাবতে শুরু করছে-এটি টিকবে কি না। আজকে কারেকশন হলো কিছুটা। আমি মনে করি, ঠিকই আছে। বাজার বুঝতে আরও কিছুদিন লাগবে।’’
সূচকের বড় ধরনের পতন হতে পারে এমন শঙ্কার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় ৩৫টি রেখে বাকি সবগুলোর উপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয় দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এরপর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়েগাকারীদের বিনিয়োগ বাড়ায় বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। দুই দিনের বাজার পর্যালোচনা করে দ্বিতীয় দফায় আরও ২৩ কোম্পানির উপর থেকে ফ্লোর তুলে দিলে সেগুলো স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরেছে; দাম কমে সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন সীমায় নামলেও বেশির ভাগেরই ক্রেতা ছিল না এদিন।
বাজারের এমন প্রবণতার মধ্যে বিএসইসির নির্দেশনায় নতুন বিনিয়োগে এনেছে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল-সিএমএসএফ। তারল্য যোগ করার এ চেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন বিএসইসির মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে এখন শুধু ১২টিতে ফ্লোর প্রাইস রাখা হয়েছে।