দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় ১০টি কোম্পানির মধ্যে আটটিই লোকসানি। দুর্বল মৌলভিত্তি থাকার পরও এসব কোম্পানির শেয়ারদর গত কয়েকদিনে অনেকটাই বেড়েছিল।
Published : 18 Oct 2023, 04:15 PM
সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবেস পুঁজিবাজারে একই সঙ্গে স্বল্প মূলধনী ও সাধারণ বীমার শেয়ারের পালে হাওয়া দেখা গেছে। অন্যদিকে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসগুলোতে যেসব লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর লাফ দিয়েছিল, সেগুলোর অনেকগুলোই দর হারিয়েছে।
গত ২ অক্টোবরের পর টানা দুই দিন পাঁচশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন দেখা গেছে। তবে আগের দিনের তুলনায় কমে গেছে হাতবদল হওয়া শেয়ারের পরিমাণ।
সব মিলিয়ে এদিন লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৫১২ কোটি ২১ লাখ ৬২ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৫৭২ কোটি টাকারও বেশি।
বেড়েছে ৮৫টি কোম্পানির শেয়ারদর, হারিয়েছে ৬৩টির, ১৫৩টি কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হয়েছে আগের দিনের দরে, যার সিংহভাগ হাতবদল হয়েছে ফ্লোর প্রাইসে।
৮৮টি কোম্পানির একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি। শতাধিক কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে নগণ্য পরিমাণে।
কমপক্ষে এক লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ছিল একশটি। তবে এসব কোম্পানির অনেকগুলোর আরও কয়েক লাখ শেয়ার বিক্রির জন্য বসানো থাকলেও ক্রেতার দেখা মেলেনি। কেবল ১৭টি কোম্পানির ১০ লাখের বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
খাতওয়ারী লেনদেনে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। মোট লেনদেনের ১৭.৫৮ শতাংশ হয়েছে এই খাতে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সাধারণ বীমায় লেনদেন হয়েছে ১৭.০৪ শতাংশ।
অনেক দিন পর কাগজ ও প্রকাশনা খাতের শেয়ারে আগ্রহ দেখা গেছে। মোট লেনদেনের ১২.১০ শতাংশ হয়েছে এই খাতে। ওষুধ ও রসায়ন খাতে প্রায় ১০ শতাংশ লেনদেন দেখা গেছে।
ব্যাংক, জীবন বীমা, বস্ত্র, জ্বালানি খাতের শেয়ারে আগ্রহ নেই বললেই চলে। তবে নতুন তালিকাভুক্ত একটি মিউচুয়াল ফান্ডসহ কয়েকটির দর বেড়েছে অনেকটাই।
সাধারণ বীমা ফের চাঙা
এই খাতে দর বেড়েছে ৩৭টি কোম্পানির, দুটি আগের দিনের দরে এবং তিনটি দর হারিয়ে লেনদেন শেষ করেছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮.১০ শতাংশ দর বেড়ে ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর আবার একশ টাকার ঘর ছাড়িয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭.৪৩ শতাংশ বেড়েছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের দর। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬.৫২ শতাংশ দর বেড়েছে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের।
আরও একটির দর ৫ শতাংশের বেশি, একটির ৪ শতাংশের বেশি, সাতটির দর ৩ শতাংশের বেশি, তিনটির বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি।
এই খাতটিতে লেনদেন হয়েছে ৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
স্বল্প মূলধনীর দরে লাফ
সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে চারটিই স্বল্প মূলধনী। এর মধ্যে একটি লোকসানে এবং তিনটি মুনাফায় থাকলেও তার পরিমাণ কখনও বেশি থাকে না।
এর মধ্যে ৮ কেটি ৯২ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের লোকসানি জিকিউ বলপেনের দর বেড়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯.৭৪ শতাংশ। দর স্থির হয়েছে ১২৭ টাকা ৩০ পয়সায়।
কোম্পানিটি মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ার প্রতি ৩ টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে। গত ১০ বছরেও কোম্পানিটি মুনাফার মুখ দেখতে পারেনি। তবে এখনও শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য এর শেয়ারদরের চেয়ে বেশি আছে।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮.৭৪ শতাংশ দর বেড়েছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কে অ্যান্ড কিউয়ের। শেয়ার প্রতি ৭৫ টাকার সম্পদমূল্য থাকা কোম্পানিটির দর স্থির হয়েছে ২২২ টাকা ৭০ পয়সায়।
৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের সোনালী আঁশের শেয়ারদর ৭.৪৬ শতাংশ বেড়ে স্থির হয়েছে ৬৯৮ টাকা ১০ পয়সায়। এর শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য আছে ২২৮ টাকার কিছুটা বেশি।
লভ্যাংশ ঘোষণার আগে আগে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের শেয়ারদর বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির দর ৬.২৪ শতাংশ বেড়ে স্থির হয়েছে ২ হাজার ৬২ টাকা ৩০ পয়সা। এক মাসের ব্যবধানে দর বেড়েছে ৪০০ টাকারও বেশি।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল আগের দিন তালিকাভুক্ত হওয়া মিউচুয়াল ফান্ড গ্রামীণ ক্যাপিটেক। টাকা দুই দিন ১০ শতাংশ বেড়ে ১০ টাকার ইউনিট দর স্থির হয়েছে ১২ টাকা ১০ পয়সায়।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় ছিল সিএপিএম আইবিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড, যেটির ইউনিট দর বেড়েছে ৭.০৭ শতাংশ।
সাধারণ বীমার তিন কোম্পানি ক্রিস্টাল, ইস্টার্ন ও ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স ছিলও দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে। অন্য কোম্পানিটি হলো হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, যেটির দর বেড়েছে ৬.৫৮ শতাংশ।
স্বল্প মূলধনী লিবরা ইনফিউশন, এমবি ফার্মা, রংপুর ফাউন্ড্রি, আনলিমা ইয়ার্ন, কোহিনূর ক্যামিকেলস, অ্যাপেক্স ফুডসের দরও বেড়েছে।
পতনের শীর্ষে লোকসানী কোম্পানি
তবে দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় ১০টি কোম্পানির মধ্যে আটটিই লোকসানি। দুর্বল মৌলভিত্তি থাকার পরও এসব কোম্পানির শেয়ারদর গত কয়েকদিনে অনেকটাই বেড়েছিল।
সবচেয়ে বেশি ৫.৯৬ শতাংশ দর হারিয়েছে আলোচিত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল। এই কোম্পানিটি পাঁচ বছর পর উৎপাদনে ফেরার আগে শেয়ারদর পরে ৩০ টাকা থেকে ১৮৭ টাকায় উঠে গিয়েছিল। এখন দর স্থির হয়েছে ১১৫ টাকায়।
লোকসানি শ্যামপুর সুগার, ইমাম বাটন, খুলনা পেপার মিলস, ওয়াইমেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, স্টাইলক্র্যাফট, জুট স্পিনার্স, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ও সেন্ট্রাল ফার্মা ছিল দরপতনের শীর্ষ তালিকায়। এগুলোর দর ৩.৩৮ শতাংশ থেকে ২.৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
দরপতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা একমাত্র ন্যাশনাল ফিড মিলস লোকসানে নেই। কোম্পানিটির দর কমেছে ৪.৪৫ শতাংশ। এটি মার্চে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ারপ্রতি ৪ পয়সা মুনাফার তথ্য দিয়েছে।