সাড়ে ৬ মাস পর হাজার কোটির লেনদেনেও ‘স্বস্তির অভাব’

দর বৃদ্ধির শীর্ষে কোনো একক খাতের প্রাধান্য দেখা যায়নি। তবে শীর্ষ ১০ কোম্পানির ছয়টিই লোকসানি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 09:35 AM
Updated : 24 May 2023, 09:35 AM

দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বরূপে ফিরতে থাকা পুঁজিবাজারে অবশেষে লেনদেন ছাড়াল এক হাজার কোটি টাকা। প্রায় সাড়ে ছয় মাস পর এই চিত্র দেখা গেল।

তবে শেষ ঘণ্টার লেনদেনে বিক্রয়চাপে সূচক কমে যাওয়ায় পুরোপুরি স্বস্তি পায়নি বিনিয়োগকারীরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বুধবার সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স ১৯ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হলেও শেষ দুই ঘণ্টায় ২০ পয়েন্ট হারিয়ে যায়। দিন শেষে সূচক কমেছে ০ দশমিক ২১ পয়েন্ট।

ছয় মাসের বেশি সময় পর মঙ্গলবার সূচক ছয় হাজার ৩০০ পয়েন্টের বাধা পার হওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে প্রবল আগ্রহ দেখা দেয়, তাতে বুধবার লেনদেনের শুরুতে প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে যায়।

এক পর্যায়ে দেড়শর মতো কোম্পানি শেয়ারদর বেড়ে এবং ২৪টি হারিয়ে লেনদেন হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ৭৪টির দর বাড়ে, আর ৯৯টি দর কমে যায়।

আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ১৯১টি কোম্পানি, যেগুলোর প্রায় সবগুলোই ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হয়েছে। এসব কোম্পানির বেশিরভাগেরই ক্রেতা নেই বললেই চলে।

দিনভর হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ১০৮ কোটি ৭৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন ছিল ৯২০ কোটি টাকার বেশি।

গত ৯ নভেম্বরের পর এই প্রথম হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন দেখল পুঁজিবাজার। সেদিন লেনদেন ছিল ১ হজোর ১৮ কোটি টাকার কিছু বেশি।

গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় এদিনও লেনদেনের শীর্ষে ছিল বীমা খাত। তবে এই খাতের বেশিরভাগে কোম্পানি দর হারিয়েছে। নতুন করে আগ্রহ দেখা দিয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে। আর্থিক খাত তলানিতেই আছে।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে কোনো একক খাতের প্রাধান্য দেখা যায়নি। তবে শীর্ষ ১০ কোম্পানির ছয়টিই লোকসানি। 

লেনদেন বাড়ছে ধারাবাহিকভাবেই

ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরুর পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের মধ্যে জুলাইয়ের শেষে ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর লেনদেনের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিলেও তা স্থায়ী হয়নি।

বেক্সিমকো লিমিটেড, ওরিয়ন ফার্মাসহ কিছু কোম্পানির ওপর ভর করে অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও পরে তা দুইশ কোটির ঘরে নেমে আসে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে।

তবে এপ্রিলে রমজান মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে লেনদেন। ঈদের পর বাড়তি লেনদেন স্থায়ী হতে দেখা যায়।

কোনো দিন ছয়শ কোটি, কোনোদিন সাতশ কোটি, কোনো দিন আটশ কোটি, কখনও নয়শ কোটি টাকার ঘরে ছিল লেনদেন।

ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে শেয়ারদরও। শুরুতে তথ্য প্রযুক্তি, এরপর খাদ্য, পরে একদিন বস্ত্র খাত এবং গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বীমা খাতে আগ্রহ বাড়তে দেখা যায়। এর প্রভাব পড়ে লেনদেনও।

সাধারণ সূচক ছয় মাসের বেশি সময় পর মঙ্গলবার ছয় হাজার ৩০০ পয়েন্টের ঘর পেরিয়ে যায়। শেষ ঘণ্টায় ব্যাপক ক্রয়চাপও দেখা দেয়। ঈদের পর তৃতীয় দিনের মত লেনদেন ছাড়ায় নয়শ কোটি টাকা।

এতে নতুন আশায় সকাল থেকেই শেয়ার কেনার গতি ছিল বেশি। প্রথম এক ঘণ্টায় লেনদেন হয় প্রায় ৩৩০ কোটি টাকা। সূচক বাড়ে ১৮ পয়েন্ট।

সে সময় ১৪০টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল। দর হারিয়ে হাতবদল হতে থাকে ২৮টির দর।

দুই ঘণ্টার পর লেনদেন ছাড়ায় ছয়শ কোটি টাকা। পরের সোয়া দুই ঘণ্টায় শেয়ার কেনাবেচার গতি কমতে থাকে। বেড়ে যাওয়া শেয়ারগুলো দর হারাতে থাকলে ক্রেতাও কমে।

শীর্ষে বীমাই, তবে নতুন আগ্রহে ওষুধ খাত

এদিন খাতওয়ারী সবচেয়ে বেশি ২৪৯ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে বীমা খাতে। এর মধ্যে ১২৭ কোটি টাকা লেনদেন হয় জীবন বীমা খাতে, ১২২ কোটি টাকা লেনদেন হয় সাধারণ বীমা খাতে।

সাধারণ বীমার ১৬টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২১টির দর। চারটি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।

জীবন বীমায় বেড়েছে ৭টির দর, কমেছে ৫টির। দুটি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।

খাতওয়ারী লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। বেশ কয়েক মাস পর এই খাতের শেয়ারে ঝুঁকতে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের।

৩২টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১১৭ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে আটটির দর বেড়েছে, ৬টির কমেছে। আগের দিনের দরে ছিল ১৮টি কোম্পানি।

শত কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে খাদ্য খাতেও। ১০৫ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে এই খাতে।

তথ্যপ্রযুক্তি, বস্ত্র, প্রকৌশল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং বিবিধ খাতে লেনদেন ছিল ৫০ কোটি টাকার বেশি।

এমারেল্ড থামছে না

মার্চের শেষে শেয়ারদর ছিল ৩০ টাকা ৮০ পয়সা। বাড়তে বাড়তে এবার তা ছাড়িয়েছে একশ টাকার ঘর।

বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর কোম্পানিটি চালু হয়েছে। মুনাফার মুখ দেখেছে কি না, সেই তথ্য দেয়নি। এর মধ্যে শেয়ারদর দাঁড়াল ১০৭ টাকা ৮০ পয়সা। কোম্পানিটি যখন তালিকাভুক্ত হয়, তখনও এত দর হয়নি।

এমারেল্ডের মতই শীর্ষ দশে থাকা প্রায় সব কোম্পানি সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে বা কাছাকাছি থেকে লেনদেন শেষ করেছে।

এর মধ্যে এমারেল্ড ছাড়াও মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা মিল্ক, ইমাম বাটন, নর্দার্ন জুট ও ন্যাশনাল টি কোম্পানি লোকসানি।

শীর্ষ দশে ছিল প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, নাভানা ফার্মা, নতুন তালিকাভুক্ত ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স।

এর মধ্যে দর বৃদ্ধির দশম স্থানে থাকা ন্যাশনাল টি কোম্পানির দর বেড়েছে ৮.৭৩ শতাংশ।

আরও দুটি কোম্পানির দর ৮ শতাংশের বেশি, চারটির দর ৬ শতাংশের বেশি, একটির ৫ শতাংশের বেশি, চারটি করে কোম্পানির দর ৪ ও ৩ শতাংশের বেশি, ১২টির দর ২ শতাংশের বেশি, ২০টির দর এক শতাংশের বেশি বেড়েছে। 

সবচেয়ে বেশি দর হারানো কোম্পানিগুলো ছিল ওয়াইমেক্স ইলেকট্রোড, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, এপেক্স ফুট, মুন্নু এগ্রো, জিকিউ বলপেন, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, বঙ্গজ, প্রিমিয়ার সিমেন্ট ও হাক্কানি পাল্প। এগুলোর দর ৬.৯৮ শতাংশ থেকে ৩.৩৬ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

আরও সাতটি কোম্পানির দর তিন শতাংশের বেশি ২৪টির দর ২ শতাংশের বেশি এবং ৩০টির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি।