এক বছরের বেশি সময় ধরে ধুঁকতে থাকা পুঁজিবাজারে লোকসানি ও দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদরে অস্বাভাবিক উত্থানের প্রবণতা অব্যাহত আছে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে যে ১০টি কোম্পানির শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, তার মধ্যে পাঁচটি লোকসানি।
বাকি পাঁচটির কোম্পানির মধ্যে একটি টানা চার বছর লোকসান দেওয়ার পর গত অর্থবছরে সামান্য মুনাফা করতে পেরেছে। চলতি অর্থবছরে কিছুটা বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলছে।
একটি কোম্পানি গত এক যুগে দুই বছর ‘নামমাত্র’ কিছু লভ্যাংশ দিয়েছে। আরেকটি কোম্পানি গত এক যুগেও কোনো বছরে শেয়ার প্রতি এক টাকার বেশি লভ্যাংশ নিতে পারেনি।
একটি কোম্পানি গত অর্থবছরে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কেবল একটি মৌলভিত্তির শক্তিশালী কোম্পানি।
এসব কোম্পানির প্রায় সবগুলোই স্বল্প মূলধনী, পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বারবার বলে আসছেন, শেয়ার সংখ্যা কম, কেবল এ কারণে লোকসানী হলেও শেয়ার নিয়ে প্রায়ই ‘কারসাজি’ করা যায়। নানা সময় এসব কোম্পানির শেয়ারের দর অনেকটাই বাড়ে, কিন্তু পরে কমে আসে।
এদিন ৩৬ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ৮৮টির দরপতন এবং ১৮৭টি কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে। দিন শেষে সূচক কমেছে ১২ পয়েন্ট। লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৬৯ কোটি ৪৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল প্রায় ৪৯৯ কোটি টাকা।
ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৩টি কোম্পানির মধ্যে এদিন হাতবদল হয়েছে ৩১১টি কোম্পানির শেয়ার। বাকি ৮২টির একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি। এর মধ্যে দুটির লেনদেন স্থগিত আছে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা
দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন হওয়া দুটি কোম্পানি হল বিচ হ্যাচারি ও বিডি ওয়েল্ডিং। দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৯.৮৬ এবং ৯.৬৯ শতাংশ।
২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত লোকসানের কারণ লভ্যাংশ দিতে না পারা বিচ হ্যাচারি ২০২১ সালে শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা এবং গত বছর ১৫ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে। চলতি বছর অর্ধবার্ষিকে শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা মুনাফা করার কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি।
আগের দিন শেয়ারদর ছিল ৩৬ টাকা ৫০ পয়সা, এক দিনে ৩ টাকা ৬০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকা ১০ পয়সা।
বিডিওয়েল্ডিংয়ের উৎপাদন বন্ধ। নতুন একটি কোম্পানি এটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার কিনে পর্ষদে এসেছে। ২০১৯ সালে সবশেষ শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও তা আর বিতরণ করা হয়নি।
তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা শ্যামপুর সুগারের দর বেড়েছে ৭.২৭ শতাংশ। গত দুই দশকেও কখনও লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ২৬ টাকা ৬৯ পয়সা।
অর্ধবার্ষিকে শেয়ার প্রতি ৭৯ পয়সা লোকসান দেয়া লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারদরে উত্থান অব্যাহত রয়েছে। গত ১৯ মার্চ শেয়ারদর ছিল ৪২ টাকা ৩০ পয়সা। এক মাসেরও কম সময়ে তা এদিন একশ টাকা ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে। দিন শেষে ৬.৮৯ শতাংশ বেড়ে দর দাঁড়িয়েছে ৯৭ টাকা ৭০ পয়সা।
২০০১ সাল তালিকাভুক্তির পর কখনও লভ্যাংশ দিতে না পারা মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে ৬.০২ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ২৯ টাকা ৯০ পয়সা। দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ৭০ পয়সা।
গত এক যুগের মধ্যে ২০১৯ সালে শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা এবং ২০২১ সালে ৫ পয়সা লভ্যাংশ দেওয়া সমতা লেদারের শেয়ারদর ৫.১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ টাকা ১০ পয়সা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি কেবল চার পয়সা মুনাফা করতে পেরেছে কোম্পানিটি।
দুই দশকে কখনও লভ্যাংশ দিতে না পার জিলবাংলা সুগার মিলসের শেয়ারদর বেড়েছে ৫.০৯ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ১২৯ টাকা ৫০ পয়সা, দিনের শেষ লেনদেন হয়েছে ১৩৬ টাকা ১০ পয়সা। অর্ধবার্ষিকে কোম্পানিটি ১০ টাকার শেয়ারে লোকসান দিয়েছে ৩২ টাকা ৮৪ পয়সা।
এছাড়া এপেক্স ফুটওয়্যারের দর ৬.৫৭ শতাংশ, গত বছর তালিকাভুক্ত বিডিথাই ফুডের দর ৫.৭৬ শতাংশ এবং সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে ৩.০৪ শতাংশ।
শীর্ষ দশের বাইরে আরও ছয়টি কোম্পানির দর এক শতাংশের বেশি, তিনটির দর বেড়েছে দুই শতাংশের বেশি।
থামল মিডল্যান্ডের চমক
পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর দিন ১০ শতাংশ দর হারিয়ে ফেলা মিডল্যান্ড ব্যাংক আগের তিন কর্মদিবসে ২৬ শতাংশের বেশি দর বেড়ে যে চমক দেখিয়েছিল, তা থেমেছে।
যদিও দিনের শুরুতে শেয়ারদর আরও প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে ১৪ টাকা ১০ পয়সায় উঠে গিয়েছিল। পরে আবার এক পর্যায়ে আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ দর হারিয়ে ফেলে। তবে দিন শেষে আগের দিনের ১২ টাকা ৯০ পয়সায় স্থির হয় দর।
দরপতনের শীর্ষে আগের দিনের মতই দেখা গেছে আলহাজ্ব টেক্সটাইলসকে। ৬.২১ শতাংশ দর হারিয়েছে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিটির। আগের দিনও দর কমেছিল প্রায় ছয় শতাংশ। এ কোম্পানিটির শেয়ারদর গত কয়েক মাসে বাড়ছিল অস্বাভাবিক হারে।
এই তালিকায় ছিল এমন কিছু কোম্পানি, যা আগের দিন ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায়।
সিএপিএম আইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর আগের দিন বেড়েছিল ৭ শতাংশ। পরের দিনই তা কমেছে ৫.৬০ শতাংশ।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা মুন্নু অ্যাগ্রো দর হারিয়েছ ৫.৩০ শতাংশ। গত মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর এক হাজার টাকা ছাড়িয়ে দুই বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌছে। দাম এখন নেমে এসেছে ৮৬০ টাকা ৭০ পয়সায়।
আগের দিন ৬.৪৫ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হওয়া কোহিনূর কেমিকেলস দর হারিয়েছ ৫.১৫ শতাংশ।
পঞ্চম অবস্থানে থাকা পেপার প্রসেসিং ৪.৯৭ শতাংশ, ষষ্ঠ স্থানে থাকা জিকিউ বলপেন ৪.০৫ শতাংশ এবং অষ্টম স্থানে থাকা জুট স্পিনার্স দর হারিয়েছে ৪ শতাংশ।
আগের দিন ৬.২৮ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হওয়া তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের দর হারিয়েছে ৩.৯২ শতাংশ। দশম স্থানে থাকা কে অ্যান্ড হকের দর কমেছে ৩.৭৮ শতাংশ।
আরও আটটি কোম্পানির দর ৩ শতাংশের বেশি, ২০টির দর ২ শতাংশের বেশি এবং ২৪টির দর এক থেকে দুই শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।