‘সুখবরের’ খবরেও থামছে না ‘এক শতাংশের পতন’

গত ১৬ নভেম্বর থেকে টানা দর হারাচ্ছে, এমন কোম্পানির সংখ্যা কম নয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2023, 11:50 AM
Updated : 28 Feb 2023, 11:50 AM

মার্চে ‘সুখবর আসছে’ বলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন চারশ কোটি টাকার ঘর ছাড়াল।

বেশ কিছুদিন পর এক দিনে শতাধিক কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির চিত্র দেখা গেল মঙ্গলবার। শতকরা হিসেবে দর বৃদ্ধির হারও ছিল ভালো।

এর মধ্যেও ফ্লোর প্রাইস তুলে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা এক শতাংশ নির্ধারণ করে দেওয়া বহু কোম্পানি এদিনও ওই হারে দর হারিয়েছে। গত ১৬ নভেম্বর থেকে টানা একই হারে ৪৭ কর্মদিবস দর হারাচ্ছে এমন কোম্পানিও আছে।

সূচক বেড়েছে আগের দিনের মতই ১৭ পয়েন্ট। টানা পতনের মধ্যে থাকা পুঁজিবাজারে পরপর দুই দিন সূচক বৃদ্ধির এই চিত্র গত ২ ফেব্রুয়ারির পর প্রথমবারের মত দেখা গেল।

১৬৯টি কোম্পানির মত বাকিগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে বলে ছড়িয়ে পড়া গুজবের প্রভাব কাটতে শুরু করে সোমবার। আগের দিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে ‘বার্তা’ আসে, এ বিষয়ে কোনো চিন্তা ভাবনা নেই তাদের।

এরপর সোম ও মঙ্গলবার দুই দিনই সূচক বাড়ল ১৭ পয়েন্ট করে। প্রথম দিন দরবৃদ্ধির তুলনায় দর হারানো কোম্পানির সংখ্যা বেশি হলেও পরের দিন বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির দর।

১০৬টি কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা এদিন লাভবান হয়েছে। বিপরীতে দর হারিয়েছে ৫৬টি। এর মধ্যে প্রায় সবগুলোর ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ঠিক করা হয়েছে এক শতাংশ।

তবে দর বাড়েওনি, কমেওনি- এমন কোম্পানির সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি। ১৫৬টি শেয়ার আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে, যেগুলোর সবগুলোই ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছে। তবে পরিমাণে খুবই কম।

৭২টি কোম্পানির একটিও শেয়ার হাতবদল হয়নি এদিন। এসব কোম্পানিও ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছে।

সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ৪২০ কোটি ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকার শেয়ার যা গত সপ্তাহের শেষে এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে নেমে এসেছিল দুইশ কোটির ঘরে।

সবশেষ ১৫ ফেব্রুয়ারি লেনদেন হয় চারশ কোটি টাকার বেশি। সেদিন হাতবদল হয়েছিল ৪৩১ কোটি ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

‘সুখবর আসছে’

এদিন রাজধানীতে এক আয়োজনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, মার্চে তাদের জন্য ‘সুখবর আসছে’।

ব্রোকারেজ হাউজ ট্রাস্ট রিজিওনাল ইকুইটি লিমিটেডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “মার্চ থেকে মে জুনের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ডিভিডেন্ড চলে আসবে। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের হাজার হাজার কোটি টাকার সক্ষমতা বেড়ে যাবে। ঠিক কত হাজার কোটি টাকা বাড়বে এর সংখ্যাটা না বলতে পারলেও এটা অনেক বড় হবে। মার্চে অনেক সুখবর আসা শুরু হবে।”

তার এই বক্তব্য আসে লেনদেন চলার সময়ই। সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুই হয় সূচক বেড়ে। মাঝে কমলেও শেষ আধা ঘণ্টায় তা আরও বেড়ে যায়।

যাদের দর সবচেয়ে বাড়ল

সবচেয়ে বেশি ৯.৮৬ শতাংশ বেড়েছে সাধারণ বিমা খাতের বিজিআইসির দর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮.৯৯ শতাংশ বেড়েছে এমারেল্ড অয়েলের দর। অথচ কোম্পানি বন্ধ থাকার সময় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছর লোকসানের কারণে লভ্যাংশ না দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রোববার শেয়ারদর ১০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছিল।

আরও দুটি কোম্পানির দর ৮ শতাংশের বেশি, একটির দর ৭ শতাংশের বেশি, চারটির ৬ শতাংশের বেশি, একটির দর ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

আরও পাঁচটির দর ৪ শতাংশের বেশি, ১১টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১৭টির দর ২ শতাংশের বেশি এবং ৩৯টির দর বেড়েছে এক থেকে দুই শতাংশের মধ্যে বেড়েছে।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশের কোম্পানির মধ্যে আছে সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেট্রো স্পিনিং, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এডিএন টেলিকম, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স।

এক শতাংশের পতন থামেনি

বিপরীতে সবচেয় বেশি ১.৫৯ শতাংশ দর হারিয়েছে আলহাজ্ব টেক্সটাইল। দরপতনে শীর্ষ দশে থাকা বাকিগুলোর দর এক শতাংশের বেশি কমার সুযোগ ছিল না। কারণ এই সীমাই বেঁধে দেওয়া আছে।

বাকি নয়টি কোম্পানি হলো মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, সাভার রিফ্রাক্টরিজ, ফাইন ফুডস, ইমাম বাটন, এপেক্স স্পিনিং, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, শ্যামপুর সুগার, রেনউইক যগেশ্বর এবং আরামিট ইন্ডাস্ট্রিজ।

এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর টানা ৪৭ কর্মদিবস প্রায় এক শতাংশ হারে দর হারানো মেঘনা ইন্সুরেন্সের শেয়ারদর নেমেছে ২৯ টাকা ৮০ পয়সায়। ফ্লোর প্রাইস তোলার আগে দর ছিল ৪৪ টাকা ৮০ পয়সা। কমেছে ১৫ টাকা বা ৩৩.৪৮ শতাংশ।

২৬১ টাকা ১০ পয়সা থেকে ২১৪ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছে সাভার রিফ্রাকটরিজের দর। ১২৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৮২ টাকা ৪০ পয়সায় নেমেছে ইমাম বাটনের দর।

ফ্লোর প্রাইস ৯৮ টাকা ২০ পয়সা থেকে টানা ৪৭ কর্মদিবস দর হারিয়ে শ্যামপুর সুগারের দর নেমেছে ৬৩ টাকা ৫০ পয়সায়। যদিও দিনের শুরুতে এক পর্যায়ে দর বেড়ে ৬৯ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছিল।

রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের দর ৯৭৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে নেমেছে ৭৪৫ টাকা ১০ পয়সায়।

টানা ৪৭ কর্মদিবস দর হারানো কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরও আছে জিলবাংলা সুগার মিলস, আরামিট সিমেন্ট, সোনারগাঁও টেক্সটাইল মিলস, সুহৃদ ইন্ডাস্টিজ, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, জিবিবি পাওয়ার, ডোমিনেজ স্টিল মিলস।

মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, ন্যাশনাল ফিড মিলস, লিগাসি ফুটওয়্যার, ঢাকা ডায়িং, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক এবং মিথুন নিটিংয়ের দর ফ্লোর তোলার পর কোনো এক দিন বেড়েছিল বা আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছিল; বাকি প্রতিদিনই কমেছে।