লভ্যাংশের সম্ভাবনা ক্ষীণ, শেয়ার দরে লাফ

দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা একটি কোম্পানি গত এক যুগেও লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তিনটির উৎপাদন বন্ধ, ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবেছে দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2023, 09:44 AM
Updated : 22 June 2023, 09:44 AM

মুদ্রানীতির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজার দরপতনের বৃত্তে পড়ার পর সেখান থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টার মধ্যে লোকসানি কোম্পানির বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে।

চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস থেকে শুরু করে শেষ দিন বৃহস্পতিবারও দর বৃদ্ধির শীর্ষে এসব দুর্বল কোম্পানির প্রাধান্য দেখা গেছে।

আগের দিন দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানির ৮টি ছিল লোকসানি। এর মধ্যে দুটি গত এক যুগের লভ্যাংশ দেয়নি, দুটির উৎপাদন বন্ধ দীর্ঘদিন ঘরে। একটি টানা ছয় বছর ধরে লোকসান দিচ্ছে। বাকি তিনটি প্রতি বছর লভ্যাংশ নিতে পারে না, আর দিলেও পরিমাণ খুবই কম।

পরের দিনও একই চিত্র। দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশের সাতটিই লোকসানি। এর মধ্যে একটি গত এক যুগেও লভ্যাংশ দিতে পারেনি, তিনটির উৎপাদন বন্ধ, ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অদূর ভবিষ্যতেও লভ্যাংশ বিতরণের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এদিন সূচক বেড়েছে ৯ পয়েন্ট। ৭৪টি কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ১০৩টির দর। আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ১৯০টি কোম্পানির শেয়ার।

সব মিলিয়ে তালিকাভুক্ত ৩৯৩ট কোম্পানির মধ্যে হাতবদল হয়েছে ৩৬৭টির শেয়ার। গত দুই সপ্তাহে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হল এদিন।

আগের সপ্তাহে মুদ্রানীতি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অস্থিরতায় ৭২ পয়েন্ট সূচক পতন হয়েছিল। মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারের জন্য ‘ক্ষতিকর’ কিছু না থাকার পর চলতি সপ্তাহে পুনরুদ্ধার হয়েছে ৩৯ পয়েন্ট।

লেনদেনও ধীরে ধীরে বাড়ছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন তা ৪১১ কোটি টাকায় নেমে এলেও পরের পাঁচ দিন টানা বেড়ে উঠেছে ৭৮৫ কোটি ৮৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকায়। ঈদের আগে আগে অনেকেই নতুন বিনিয়োগে না গিয়ে বাজার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

বৃহস্পতিবারের লেনদেনে যথারীতি সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বীমা খাত। দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে সাধারণ বীমায় আগ্রহ বেশি। তবে শেয়ারদরে পতন হয়েছে। লেনদেন কম হলেও দর বেড়েছে সাধারণ বীমার।

দুই ধরনের বীমা কোম্পানি মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ১২৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ২১ শতাংশের বেশি।

পরের স্থানে ছিল যথাক্রমে খাদ্য, বস্ত্র ও প্রকৌশল খাত। তিনটিতেই লেনদেন ছিল ৬০ কোটি টাকার বেশি। পঞ্চম স্থানে থাকা তথ্য প্রযুক্তি খাতে লেনদেন হয়েছে ৫৬ কোটি টাকার বেশি।

লোকসানি কোম্পানির রমরমা

টানা দ্বিতীয় দিন ১০ শতাংশ করে বেড়ে দর বৃদ্ধির শীর্ষে অবস্থান নিয়েছে অলিম্পিক একসেসোরিজ।

১০ টাকার শেয়ারে তিন প্রান্তিকে ১ টাকা ১১ পয়সা লোকসান দেওয়া কোম্পানিটি গত বছর লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তার আগে শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল।

ফ্লোর প্রাইসে যে কোম্পানির শেয়ারে ক্রেতা ছিল না, আগের দিন ১০ শতাংশ বাড়ার পর তার লেনদেন হয় ২৮ লাখ ৯০ হাজারটি শেয়ার। বৃহস্পতিবার তা আরও বেড়ে হয়েছে ৯৩ লাখ ৬১ হাজারের বেশি।

টানা চার বছর লোকসানের বৃত্তে থাকা খান ব্রাদার্স পিপিওভেনের দর বেড়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯.৫৫ শতাংশ। আগের দিন বেড়েছিল ৪.৭০ শতাংশ।

ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া মাইডাস ফাইনান্সিংয়ের দর ৭.৪৭ শতাংশ, উৎপাদনে না থাকা এবং অস্তিত্ব সংকটে ভোগা অ্যাপোলো ইস্পাতের দর ৬.০৯ শতাংশ, চার বছর ধরে মূলধনের চেয়ে বেশি লোকসান দেওয়া ইউনিয়ন ক্যাপিটালের দর ৬.০২ শতাংশ, উৎপাদনে না থাকা খুলনা পেপার মিলসের দর ৫.৩৮ শতাংশ এবং উৎপাদনে না থাকা এবং গত এক যুগেও লভ্যাংশ দিতে না পারা দুলামিয়া কটনের দর বেড়েছে ৫.৩৮ শতাংশ।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হল তিন বছর লোকসান শেষে মুনাফায় ফেরা জাহিন স্পিনিং মিলস, চলতি বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিডল্যান্ড ব্যাংক, এবং মেট্রো স্পিনিং মিলস।

খাত হিসেবে দিন অবশ্য সবচেয়ে ভালো গেছে তথ্য প্রযুক্তির। এই খাতের ১১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৯টির। বাকি দুটির দর ছিল অপরিবর্তিত।

সাধারণ বীমার ৪২টি কোম্পানির মধ্যে লেনদেন হয়েছে ৪১টির। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৬টির, কমেছে ৮টির, সাতটি আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে।

জীবন বীমার ১৫টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ১২টি। একটি আগের দিনের দরে এবং দুটি দর বেড়ে লেনদেন শেষ করেছে।

প্রকৌশল খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৩টির, দমেছে ৮টির দর। আগের দিনের দরে ছিল ১৮টি কোম্পানি। বাকি তিনটির লেনদেন হয়নি।

বস্ত্র খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৪টির, দর হারিয়েছে ৭টি। ৩৩টি ছিল আগের দিনের দরে। বাকি চারটির লেনদেন হয়নি।

গত কয়েক মাস দরে চাঙ্গা থাকা খাদ্য খাতের ২১টি কোম্পানির মধ্যে সমান সংখ্যক সাতটির দর বেড়েছে, কমেছে আর অপরিবর্তিত রয়েছে।

ব্যাংক, জ্বালানি, আর্থিক, টেলিকমিউনিকেশনস, সিমেন্ট ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডে আগ্রহ নেই যথারীতি।

পতনের শীর্ষে যারা

১৩ কর্মদিবসে ৫০ শতাংশ দর বেড়ে যাওয়ার পর লোকসানি জিকিউ বলপেনের দর টানা দ্বিতীয় দিন কমল। ৫.৬৬ শতাংশ হারিয়ে এই কোম্পানিটিই ছিল দর পতনের শীর্ষে।

নতুন তালিকাভুক্ত জীবন বীমা কোম্পানি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের দর কমেছে ৪ শতাংশের বেশি। চার শতাংশের কাছাকাছি দর হারিয়েছে ন্যাশনাল টি কোম্পানি।

বিডিঅটোকার, সোনলী লাইফ, মেঘনা লাইফ, বিডিওয়েল্ডিংয়ের দর ৩ শতাংশের বেশি, পেপার প্রসেসিং. বঙ্গজ ও পপুলার লাইফের দর কমেছে ২ শতাংশের বেশি।