এবার লেনদেনের শীর্ষে বীমা, এমারেল্ড বাড়ছেই, জিবিবির পতন

যানবাহনের তৃতীয় পক্ষের বাধ্যতামূলক বীমা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করার সম্ভাবনায় বীমা খাতে বাড়ছে আগ্রহ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 10:43 AM
Updated : 14 May 2023, 10:43 AM

মাসের পর মাস ধরে লেনদেনের তলানিতে থাকা বীমা খাত আড়মোড়া ভাঙার পর দিন উঠে এল লেনদেনের শীর্ষে।

রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের লেনদেন এই খাতের বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের হতাশা দূর হওয়ার ইঙ্গিত আরও জোরাল হয়েছে।

আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে খাতওয়ারি লেনদেনের হিসাবে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছিল এই খাত। গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে এই প্রথম এই চিত্র চোখে পড়ে।

সেদিন লেনদেন বেশি ছিল সাধারণ বীমা খাতে। তবে রোববার বেশি লেনদেন হয়েছে জীবন বীমা খাতে। বেশিরভাগ কোম্পানির দরও বেড়েছে।

তবে দর বৃদ্ধির শীর্ষে এই খাতের কোম্পানিতে সেভাবে দেখা যায়নি। এই তালিকার শীর্ষে নতুন তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি ছাড়া ছিল তুমুল আলোচিত এমারেল্ড অয়েল, যে কোম্পানির দর গত দেড় মাসে ৩০ টাকা থেকে ছাড়িয়ে গেল ৭৫ টাকা।

মূলত দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে জিবিবি পাওয়ার, যেটির বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি শেষ হচ্ছে জুনের মাঝামাঝি। কিন্তু গত সপ্তাহে হঠাৎ করে লেনদেন ও দামে দেখা দেয় উত্থান।

সব মিলিয়ে সপ্তাহের শুরুটা পুঁজিবাজারে ভালো যায়নি। ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৫৪টি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির মধ্যে দর হারায় ১০৩টি। ১৮৬টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয় আগের দিনের দরে।

বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকার মধ্যেও ৯ পয়েন্ট সূচক কমেছে। তবে লেনদেনের দিক দিয়ে পতন হয়েছে আরও বেশি।

দিনভর হাতবদল হয়েছে ৬৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকার শেয়ার, আগের দিন যা ছিল আট শ কোটি ছুঁই ছুঁই।

বীমায় বাড়ছে আগ্রহ

যানবাহনের তৃতীয় পক্ষের বাধ্যতামূলক বীমা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গঠন করা হয়েছে কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর সায় পেলেই তা এগোবে।

২০১৮ সালে এ বিষয়টি ঐচ্ছিক ঘোষণা করার পর বীমা কোম্পানির আয় কমে যায়। এটি ফিরিয়ে আনলে আবার আয় বাড়বে। এ বিষয়টি এই খাতের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার এই খাত আড়মোড়া ভাঙার দিন লেনদন হয় প্রায় ৬৭ কোটি টাকা। সেখান থেকে আরও খানিকটা বেড়ে ছাড়িয়েছে ৮২ কোটি টাকা।

তবে বৃহস্পতিবারের তুলনায় কমেছে সাধারণ বীমার লেনদেন, বেড়েছে জীবন বীমায়।

সেদিন সাধারণ বীমা খাতে লেনদেন ছিল ৩৮ কোটি টাকা, কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ কেটি। জীবন বীমা খাতে লেনদেন ২৯ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৫২ কোটি টাকা।

সাধারণ বীমা খাতে বেড়েছে ১৭টি কোম্পানির দর, হারিয়েছে ১০টি, ১৩টি ছিল আগের দিনের দরে। একটির লেনদেন বন্ধ ছিল লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে।

জীবন বীমা খাতে বেড়েছে ৭টি কোম্পানির দর, হারিয়েছে একটি আর আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে একটি কোম্পানি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে, হাতবদল হয়েছে ৭২ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে ছিল তথ্য প্রযুক্তি, লেনদেন হয়েছে ৬৬ কোটি ৭১ লাখ টাকার বেশি। চতুর্থ স্থানে উঠে আসে বস্ত্র খাত, যেটি গত সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে হঠাৎ ‘ঘুম ভেঙে’ জেগে উঠে। এই খাতে লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি টাকার বেশি।

বিদ্যুৎ জ্বালানি, প্রকৌশল খাতেও কিছুটা আগ্রহ ফিরতে দেখা যাচ্ছে। তবে ব্যাংক খাত এখনও তলানিতে। ৩৫টি কোম্পানি মিলিয়ে লেনদেন দেড় কোটি টাকা ছাড়াতে পারছে না। আরও করুণ আর্থিক খাত, যাতে লেনদেন কোটি টাকাও ছাড়াতে পারেনি। সবার নীচে মিউচ্যুয়াল ফান্ড, যার ৩৬টিতে লেনদেন হয়েছে কেবল ১০ লাখ টাকা।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা

নতুন তালিকাভুক্ত ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লেনদেন শুরুর পর টানা দ্বিতীয় দিন ১০ শতাংশ করে দর বেড়েছে। তবে শেয়ারের বিক্রেতা নেই। সারা দিনে হাতবদল হয়েছে কেবল ৯০৯টি শেয়ার।

মার্চের শেষে ৩০ টাকায় লেনদেন হওয়া এমারেল্ড অয়েলের দর আবার সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে হাতবদল হয়েছে ৭৬ টাকা ১০ পয়সায়। শেয়ারদর ৫০ টাকা ছাড়ানোর পরই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এর দর বৃদ্ধি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল।

বস্ত্র খাতের তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দরও বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি।

স্বল্প মূলধনী ইস্টার্ন কেবলস, জুন স্পিনার্স, পেপার প্রসেসিংয়ের দরও সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়েছে। এগুলোর শেয়ারদর ২০০ টাকার বেশি হওয়ায় ৮.৭৫ শতাংশের বেশি বাড়ার সুযোগ ছিল না।

শীর্ষ দশের বাকি দুই কোম্পানি হলো ওয়াইমেক্স ও কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স।

শীর্ষ দশের বাইরে আরও তিনটি কোম্পানির দর ৫ শতাংশের বেশি, দুটির ৪ শতাংশের বেশি, তিনটির দর বাড়ে ৩ শতাংশের বেশি।

আরও ১০টি করে কোম্পানির দর ১ ও দুই শতাংশের বেশি বেড়েছে।

জিবিবি এবার তলানিতে

আগামী ১৭ জুন মেয়াদ শেষ হতে থাকা জিবিবি পাওয়ারের শেয়ারদর ও লেনদেন গত দুই সপ্তাহে বাড়তে থাকে।

এই সময়ে শেয়ারদর বাড়ে ২০ শতাংশেরও বেশি, লেনদেন বাড়ে বহুগুণ। এর আগে কোনো কোনো দিন দুই হাজার শেয়ারের ক্রেতাও মিলত না। অথচ গত সপ্তাহে এক দিনে সাড়ে ২৪ লাখ শেয়ারও হাতবদল হয়।

কয়েকজন বিশ্লেষক এই কোম্পানির শেয়ার লেনদেন নিয়ে সতর্কও করেছিলেন। তার বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর রোববার এক দিনে যতটা কমা সম্ভব, ততটাই হারিয়েছে শেয়ারদর।

আগের দিন দর ছিল ১৭ টাকা ৮০ পয়সা। কমার সুযোগ ছিল ১৬ টাকা ১০ পয়সা পর্যন্ত। ততটাই কমেছে দর।

দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল এক বছরের ব্যবধানে ৪০ টাকা থেকে ৩২৮ টাকায় উঠে যাওয়া সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা। যেভাবে উঠেছিল, শেয়ারদরের পতনও হচ্ছে এখন সেই গতিতেই।

গত ২৫ এপ্রিল দর ছিল ৩০৩ টাকার বেশি। ১১ কর্মদিবসেই তা ১১০ টাকার মতে কমে দাঁড়িয়েছে ১৯২ টাকা ৯০ পয়সায়।

২৮ মার্চ থেকে ৭ মের মধ্যে ৪৫৬ টাকা থেকে ৯৬১ টাকায় উঠে যাওয়া জেমিনি সি ফুডের দর কমেছে ৭.৪৯ শতাংশ। সার্কিট ব্রেকারের কারণে এর চেয়ে বেশি করার সুযোগ ছিল না। দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ৮৪৩ টাকা ৭০ পয়সায়।

গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে লোকসান দিলেও প্রথম প্রান্তিক শেয়ারপ্রতি প্রায় সাত টাকা আয়ের তথ্য দিয়েছে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। এতে শেয়ারদর ১৭৯ টাকা থেকে পাঁচ দিনেই প্রায় সাড়ে তিন শ টাকা হয়ে গিয়েছিল। এখন উল্টো স্রোতে।

এক দিনেই প্রায় সাত শতাংশ কমে দর দাঁড়িয়েছে ২৮৩ টাকা ৩০ পয়সা।

এছাড়া বিডি ওয়েল্ডিংয়ের দর ৬ শতাংশের বেশি, এক মাসেরও কম সময়ে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া এপেক্স ফুডস ও ইমাম বাটনের দর ৫ শতাংশের বেশি, সমতা লেদার, মুন্নু অ্যাগ্রো ও হা ওয়েল টেক্সটাইলের দর কমেছে ৪ শতাংশে বেশি।

আরও দুটি কোম্পানি দর ৪ শতাংশের বেশি, নয়টি ৩ শতাংশের বেশি, ২০টি দুই শতাংশের বেশি এবং ২৬টি কোম্পানি এক শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে।