দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ এ ছয়টি লোকসানি, তদন্তেও ছুটছে এমারেল্ড

গত ২ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের দর ছিল ৩০ টাকা ৮০ পয়সা, এখন দাঁড়িয়েছে ৭১ টাকা ৯০ পয়সা। এই কয় দিনেই বেড়েছে ৪১ টাকা ১০ পয়সা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2023, 09:26 AM
Updated : 7 May 2023, 09:26 AM

তিন দিন বিরতির পর পুঁজিবাজারে লেনদেন শেষ হল সূচকে সামান্য বৃদ্ধি এবং লেনদেনে কিছুটা পতনের মধ্য দিয়ে।

তবে রোববার সকালের চিত্রটা ছিল উল্টো। সূচক বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছিল শুরুতেই। লেনদেনের গতিও ছিল ভালো। বেলা গড়ানোর পরপর চিত্রটা পাল্টায়।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে চলছিল লেনদেন। তবে এরপর এর পুরোটাই হারিয়ে শেষ হয় লেনদেন।

দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে যতগুলো কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে, কমেছে তার চেয়ে বেশি। প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান দিন শেষে আগের দিনের কাছাকাছিই। বেড়েছে ০.১৮ পয়েন্ট। অন্যদিকে লেনদেন কমেছে কোটি বিশেষ টাকা।

শেষ পর্যন্ত হাতবদল হয়েছ ৮৪৬ কোটি ২১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, গত বুধবার আগের কর্মদিবসে ছিল ৮৬৩ কোটি ৫০ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

দিন শেষে বেড়েছে ৬১ কোম্পানির দর, অন্যদিকে কমেছে ৭৬টির। আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে ২১০টি কোম্পানি। এর প্রায় সবগুলোই ফ্লোর প্রাইসে আছে।

টাকার হিসাবে লেনদেনের শীর্ষে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত, এই খাদের ২১টি কোম্পানিত হাতদবল হয়েছে ১১৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। লেনদেনের শীর্ষ ২০ কোম্পানির মধ্যে এ খাতেরই দেখা গেছে চারটি।

এর মধ্যে জেমিনি সি ফুডে ২৫ কোটির বেশি, অলিম্পিকে প্রায় ১৭ কোটি, এপেক্স ফুডে ১৬ কোটির বেশি, এমারেল্ড অয়েলে ১৩ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।

তথ্য প্রযুক্তি খাতের ১১টি কোম্পানিতেও লেনদেন হয়েছে শতকোটি টাকার বেশি। লেনদেনের শীর্ষ ২০ কোম্পানির মধ্যে পাঁচটিই এ খাতের।

এর মধ্যে আমরা নেটওয়ার্ক ও অগ্নি সিস্টেমসে সাড়ে ২৪ কোটি, জেনেক্স ইনফোসিসে প্রায় ২২ কোটি, আইটিসিতে ১১ কোটি টাকার বেশি এবং এডিএন টেলিকমে লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি টাকার বেশি।

এছাড়া ওষুধ ও রপ্তানি খাতে ৯২ কোটি টাকার বেশি, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ৬৩ কোটি টাকার বেশি, বিবিধ খাতে ৬০ কোটি টাকার বেশি, সিমেন্ট খাতে ৫৬ কোটি টাকার বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে লোকসানির প্রাধান্য, এরারেল্ড অপ্রতিরোধ্য

আগের দিনের মত এদিনও দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় দেখা গেছে লোকসানি কোম্পানির আধিক্য। এর মধ্যে এক মাসের কিছু বেশি সময়ে দ্বিগুণ দর বেড়ে যাওয়ার পর এমারেল্ড অয়েল নিয়ে তদন্তের নির্দেশের মধ্যে কোম্পানিটির দর আরও বাড়ল।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকার পঞ্চম স্থানে থাকা এ কোম্পানি সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়েও কিছুটা কমে লেনদেন শেষ করেছে। গত ২ এপ্রিল কোম্পানিটির দর ছিল ৩০ টাকা ৮০ পয়সা, দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৭১ টাকা ৯০ পয়সা। এই কয় দিনে বেড়েছে ৪১ টাকা ১০ পয়সা।

ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদনকারী কোম্পানিটি ২০১৭ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গত বছর উৎপাদনে ফেরার ঘোষণা এসেছে। এরপর ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে প্রথম বছরে শেয়ার প্রতি ৩৪ টাকার বেশি এবং পরের দুই বছর শেয়ার এক টাকার বেশি করে লোকসানের তথ্য প্রকাশ করে।

ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগেও শেয়ারদর ছিল ৪০ টাকার ঘরে। ছুটি শেষে প্রথম দিনই যা কিছুটা কমেছিল। শেয়ারদর ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পরই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি একে অস্বাভাবিক হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্ত করতে নির্দেশ দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে।

বুধবার শেয়ারদর ছিল ৬৫ টাকা ৯০ পয়সা। দিনের শুরুতে তা ৬৫ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু পরে আগের দিনের চেয়ে বাড়ে ৬ টাকা।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে এদিন এমারেল্ডসহ লোকসানি কোম্পানির সংখ্যা দেখা গেছে ছয়টি কোম্পানি।

এর মধ্যে খান ব্রাদার্সের দর ৯.৯১ শতাংশ, ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব দেওয়ার পর আর কিছু প্রকাশ না করা সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৯.৯৫ শতাংশ, এমারেল্ড অয়েলের দর ৯.১০ শতাংশ, সেন্ট্রাল ফার্মার দর ৮.৫৭ শতাংশ, ইয়াকিন পলিমানেরর দর ৮.৩৩ শতাংশ, ও মাইডাস ফাইন্যান্সের দর বেড়েছে ৭.৮৪ শতাংশ।

বাকি চারটি কোম্পানির মধ্যে নতুন তালিকাভুক্ত মিডল্যান্ড ব্যাংকের দর ৯.৫৫ শতাংশ, হাওয়েল টেক্সটাইলসের দর ৮.৭২ শতাংশ, অগ্নি সিস্টেমসের দর ৮.১৩ শতাংশ এবং একমি ল্যাবরেটরিজের দর বেড়েছে ৭.৪১ শতাংশ।

শীর্ষ ১০ ছাড়াও আরও চারটি কোম্পানির দর ৭ শতাংশের বেশি, তিনটির দর ৬ শতাংশের বেশি, দুটির দর ৫ শতাংশের বেশি, চারটির দর ৪ শতাংশের বেশি, পাঁচটি করে কোম্পানির দর যথাক্রমে ৩ ও ২ শতাংশের বেশি, ৮টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।

চূড়ায় উঠে সি পার্ল পড়ল

দরপতনের শীর্ষে ছিল সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড, যে কোম্পানিটির শেয়ার দর হারিয়েছে ৮.৩৮ শতাংশ।

গত বছরের জুলাইয়ে কোম্পানিটির দর ছিল ৪৪ টাকার আশেপাশে। এরপর থেকে অস্বাভাবিক এক উত্থানে মার্চের শুরুতে দর দাঁড়ায় ৩২৮ টাকা। এরপর থেকে শুরু হয় নিম্নমুখি টান। ছয় কর্মদিবসেই দর কমেছে ৭৩ টাকা ৯০ পয়সা বা প্রায় ২৫ শতাংশ।

একইভাবে আরও ৭.৮৩ শতাংশ দর হারানো লিগ্যাসি ফুটওয়্যার নেমেছে ৬৫ টাকা ৯০ পয়সায়। মার্চে ৪০ টাকার ঘরে লেনদেন হওয়া কোম্পানিটি এপ্রিলে এক শ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

এছাড়া রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৭.০৩ শতাংশ, এডিএন টেলিকমের দর ৬.৮২ শতাংশ, রহিমা ফুডের দর ৬.৪৫ শতাংশ আমরা নেটওয়ার্কের দর ৫.৯১ শতাংশ, মনোস্পুল পেপারের দর ৫.৫৩ শতাংশ, প্রাইম লাইফের দর ৫.২৭ শতাংশ, ইউনিট হোটেলের দর ৫.২৭ শতাংশ এবং এপেক্স ফুটওয়্যারের দর কমেছে ৪.৭৫ শতাংশ।

শীর্ষ দশের বাইরে আরও পাঁচটি কোম্পানির দর ৪ শতাংশের বেশি, ১১টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১৫টির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৭টির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি।