সারা দিনে লেনদেন হয়েছে ৩৪৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর। চলতি বছর এক দিনে এত বেশি কোম্পানির লেনদেন এর আগে হয়নি।
Published : 06 Mar 2023, 03:14 PM
পুঁজিবাজারে শেষ পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে চার দিনই বাড়ল সূচক, এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন দেখল ঢাকার শেয়ারবাজার।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছিল ৩৬ পয়েন্ট। সোমবার তা বাড়ল আরও ৯ পয়েন্ট।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগের দিনের চেয়ে ২৩ পয়েন্ট বেশি ছিল সূচকের ঘরে, তা ক্রমেই বাড়ছিল। তবে পরে দর বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে।
দিন শেষে সূচকের অবস্থান দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৫৯ পয়েন্ট, যা গত ১৩ ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ। ১৪ কর্মদিবস আগে সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ২৭০ পয়েন্ট।
সোমবার বেড়েছে টাকার প্রবাহ, যা নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিন মোট ৭২৭ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার টাকার শেয়ার কিনেছেন বিনিয়োগকারীরা, যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি লেনদেন ছিল ৭৫২ কোটি ৭৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। পরে কমতে কমতে ২৩ ফেব্রুয়ারি নেমে আসে ২২২ কোটি ৯৯ লাখ ৪২ হাজার টাকায়।
সোমবার লেনদেন হয়েছে ৩৪৩টি কোম্পানির শোয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের। চলতি ২০২৩ সালে এক দিনে এত বেশি কোম্পানির লেনদেন এর আগে হয়নি। আগের দিন ৩৪০টিই ছিল বছরের সর্বোচ্চ।
‘ফ্লোর প্রাইস’ উঠিয়ে দেওয়া হবে, এমন গুজবে টানা দরপতনের মধ্যে থাকা বাজারের এই ‘ইউটার্ন’ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির একটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে।
গত ১ মার্চ সংস্থাটি জানায়, ২২ ডিসেম্বর যেসব কোম্পানির ‘ফ্লোর প্রাইস’ উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোতে শেয়ারের সর্বনিম্ন দর পুনর্বহাল হয়েছে। পাশাপাশি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম জানিয়ে দেন, দরপতন ঠেকাতে দেওয়া এই সুবিধা প্রত্যাহারের কোনো চিন্তাই নেই।
ফ্লোর উঠিয়ে দেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেগুলো প্রায় প্রতি দিনই সর্বোচ্চ সীমা এক শতাংশের কাছাকাছি দর হারাচ্ছিল, সেগুলোর অনেকগুলো গত দুই কর্মদিবস ধরে দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকছে।
তবে এই প্রবণতার মধ্যেও বড় মূলধনী মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ারে এখনও কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। স্বল্প মূলধনী বা পরিশোধিত মূলধন বেশি নয়, এমন শেয়ারের লেনদেনই হচ্ছে বেশি।
‘কমিশন না পেলে কর্মীদের বোনাস দেব কীভাবে?’
ডিএসইর ব্রোকারেজ হাউজগুলোর মালিকদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাঁচ বা সাত দিনের প্রবণতা দিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে চাই না। তবে অনেকগুলো কোম্পনির ফ্লোর ভেঙেছে। ফলে একটা বেচে আরেকটা কেনার প্রবণতা বাড়ছে। এটি লেনদেন বাড়াচ্ছে।
“আমরা চাই লেনদেন আরও বাড়ুক। সূচক বাড়ল বা কমল, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই মুভমেন্ট। এটার কমিশনেই তো হাউজগুলো চলে। সামনে রোজা আসছে, ঈদে বোনাস দিতে হবে। লেনদেন না বাড়লে কীভাবে তা দেব?”
দুইশ কোটি টাকার ঘরে নেমে আসা লেনদেন কদিনের মধ্যেই সাতশ কোটির ঘর ছাড়িয়ে যাওয়ার পেছনে কী ঘটনা কাজ করেছে, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “কারণ, একটা কথা বলা হয়েছে যে, ফ্লোর নাও উঠতে পারে ইলেকশন টাইমে। এতে হয়ত অনেকে ভেবেছেন যে, যেগুলো ফ্লোরের বাইরে আছে, সেগুলো নিয়ে নড়াচড়া করি। তারা সক্রিয় হয়েছে।”
তবে বড় মূলধনী ও মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর ফ্লোরে আটকে থাকা এবং শেয়ারের আগ্রহ না থাকার বিষয়টি এখনও পুঁজিবাজারের বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন রিচার্ড।
তিনি বলেন, “বাজার কয়েকদিন বেড়েছে ঠিক, কিন্তু সেটা অংশগ্রহণমূলক ঘটনা না। আমরা চাই অংশগ্রহণমূলক হোক, সব খাতেই পড়ুক ইতিবাচক প্রবণতা।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে ‘ফ্লোর ফিরে পাওয়া’ কোম্পানির প্রাধান্য
গত ২২ ডিসেম্বর ‘ফ্লোর’ তুলে এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১ শতাংশ করে দেওয়ার পর টানা দর হারাতে থাকা আরও বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারদরে লাফ দিয়েছে।
‘ফ্লোর’ তুলে দেওয়ার পর ২১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১৬ টাকা ১০ পয়সায় নেমে আসা ডমিনোজ স্টিল ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষে। ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়ে শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৮০ পয়সায়। এক দিনে বেড়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। এর আগে ১৬ কর্মদিবসে কমেছিল একই পরিমাণ।
‘ফ্লোর প্রাইস’ পুনর্বহাল হওয়ার পর পরপর তিন দিন লাফ দিল ন্যাশনাল ফিডমিলের শেয়ার দরও। ৯.৪০ শতাংশ বেড়ে দর দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা। আগের দিনও বেড়েছিল ৯.৫২ শতাংশ। ‘ফ্লোর’ প্রত্যাহারের পর ১৬ টাকা ৭০ পয়সা থেকে দর নেমে এসেছিল ১২ টাকা ৭০ পয়সায়।
‘ফ্লোর প্রাইস’ পুনর্বহাল হওয়া সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর ৯.৩৩ শতাংশ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের দর ৬.৬৯ শতাংশ, পদ্মা লাইফের দর ৬.৪২ শতাংশ, আরএসআরএম স্টিলের দর ৫.৯৫ শতাংশ, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের দর ৫.৮৮ শতাংশ, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের দর ৫.৮৩ শতাংশ বেড়েছে।
শীর্ষ দশে থাকা বাকি দুই কোম্পানির শেয়ার দর ফ্লোর প্রাইসের বেশি ছিল আগে থেকেই। এর মধ্যে যমুনা অয়েলের দর ৫.৫৬ শতাংশ এবং সি পার্ল হোটেল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার দর বেড়েছে ৫.২২ শতাংশ।
শীর্ষ দশের বাইরে আরও দুটি কোম্পানির দর ৫ শতাংশের বেশি, ৯টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ১৮ টির দর ৩ শতাংশের বেশি ২০টির দর ২ শতাংশের বেশি, ১৯টির দর ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
দর পতনের শীর্ষেও ‘ফ্লোরে ফেরা’ লোকসানি কোম্পানি
ফ্লোর ফিরে পাওয়ার পর আগের দিন প্রায় ১০ শতাংশ দর বাড়া লোকসানি জিলবাংলা সুগার মিলসের শেয়ার এদিন ছিল দরপতনের শীর্ষে। ৯.৩৬ শতাংশ দর হারিয়ে এ শেয়ার বৃহস্পতিবারের দামে ফিরে গেছে।
সকালে ১০ শতাংশ বেড়ে পরে ১০ শতাংশ পতন হয়েছে মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের। দিনের সর্বোচ্চ দর ৩২ টাকা ৯০ পয়সায় যারা কিনেছেন, তারা এক দিনেই প্রায় ২০ শতাংশ লোকসান করেছেন । কারণ দিন শেষে ৯.০৯ শতাংশ হারিয়ে দাম স্থির হয় ৩০ টাকায়। এটাও লোকসানি কোম্পানি।
একই গ্রুপের আরেক লোকসানি কোম্পানি মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ৩.৯৭ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ৩.৭০ শতাংশ দর হারিয়েছে।
বিকন ফার্মা, এপেক্স ফুড, ফ্লোরে ফেরা হামিদ ফেব্রিক্স, আজিজ পাইপ ও পেপার প্রসেসিংও ছিল দরপতনের শীর্ষ দশে। ওয়ান ব্যাংকও ছিল এই তালিকায়।
শীর্ষ দশের বাইরে আরও চারটি কোম্পানি ২ শতাংশের বেশি এবং ২৭টি কোম্পানি এক থেকে দুই শতাংশ দর হারিয়েছে।