আলোচিত এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাব দেননি।
Published : 28 Jun 2024, 01:12 AM
পুঁজিবাজারে নিজের ও তার পরিবারের কোনো সদস্যের বিনিয়োগ নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
এনবিআর থেকে সরিয়ে দেওয়া আলোচিত কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় কতটুকু, সে বিষয়ে অবশ্য কোনো জবাব আসেনি তার কাছ থেকে।
ঢাকার সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১২ লাখ টাকায় ছাগল কেনার চুক্তি করে আলোচনায় আসা তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাতের বাবা মতিউরের সঙ্গে গভর্নরের দুটি ছবি নিয়ে এই মুহূর্তে নানামুখি আলোচনা সমালোচনা চলছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ফ্রান্সে অবস্থান করা গভর্নরের সঙ্গে যোগাযোগ হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ফোনে যোগাযোগ করতে না পারার পর হোয়াটস অ্যাপ মেজেসে তার কাছে কিছু প্রশ্ন করলে তিনি একটি প্রশ্নের জবাব দেন কেবল।
পুঁজিবাজারে কোনো বিনিয়োগ আছে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘‘আমার একটিও বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্ট নেই এবং আমার কোনো বিনিয়োগ (পরিবারের সদস্যসহ) নেই পুঁজিবাজারে।’’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৬ থেকে ২৮ জুন প্যারিসে ‘আডাম স্মিথ সেমিনারস’ এ অংশ নিতে গত ২৫ জুন দেশ ছাড়েন গভর্নর। আগামী ৩০ জুন তার দেশে ফেরার সূচি রয়েছে।
আব্দুর রউফ তালুকদারকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছাড়াও প্রশ্ন রাখা হয় মতিউর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় ও সম্পর্কের বিষয়ে।
এই দুই জনের হাস্যোজ্জ্বল দুটি ছবি ফেইসবুকে ঘুরছে। একটিতে দেখা যায়, হজের আনুষ্ঠানিকতা চলার সময়ে মতিউর রহমান সেলফি তোলেন গভর্নরকে সঙ্গে নিয়ে।
এই ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় গভর্নরের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। দাবি করা হয় মতিউরের মাধ্যমেই এই বিনিয়োগ করেছেন তিনি।
আরেক ছবিতে দেখা যায়, ২০২২ সালের জুলাই মাসে গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো একদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে তার কক্ষে এসে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন মতিউর রহমান।
মতিউর রহমানের সঙ্গে সরকারি কর্মচারীর বাইরে বিশেষ কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এমন প্রশ্ন গভর্নর দেখলেও কোনো জবাব দেননি।
ছেলের ছাগল কেনার ঘটনায় নিজের ও তার পরিবারের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য সামনে আসার পর মতিউর দাবি করেছেন, তিনি পুঁজিবাজারে থেকে বিনিয়োগ করে অনেক টাকা আয় করেছেন। একটি কোম্পানিতেই এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন।
পরে গণমাধ্যমে উঠে আসে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে আগে বিভিন্ন কোম্পানির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্লেসমেন্ট শেয়ার পেয়ে সেগুলো বেচে দিয়েছেন মতিউর।
একজন ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যরা বারবার কেন প্লেসমেন্ট শেয়ার পাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তাকে নিয়ে নানা খবর প্রকাশের পর গত ২৫ জুন মতিউর রহমান ও তার দুই স্ত্রী ও সন্তানদের নামে বিও হিসাব স্থগিত করতে নির্দেশ দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
গত ২৪ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনে মতিউর, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
তবে ইফাত ও তার মা আগেই দেশের বাইরে চলে গেছেন বলে খবর এসেছে গণমাধ্যমে। মতিউরও একই কাজ করেছেন বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বিষয়ে সরকারি কোনো সংস্থা থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি।
গত ২৩ জুন মতিউর রহমান থেকে এনবিআরের সদস্য ও ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। এখানে তাকে কেনো প্রকার দায়িত্ব না দিয়ে ওএসডি বা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে রাখা হয়।
নতুন দায়িত্বে কোনো দিন তাকে অফিস করতে দেখা যায়নি। অসুস্থতা দেখিয়ে তিনি কর্মস্থলে না গিয়ে বাহক মাধ্যমে যোগ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকেও বাদ দেওয়া হয় মতিউরকে।