সরকার সার্বভৌম গ্যারান্টার হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ পাওয়ার দরজা খুললো আইসিবির।
Published : 07 Nov 2024, 02:04 PM
তারল্য সংকট কাটানো ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ পাইয়ে দিতে গ্যারান্টার হতে সায় দিয়েছে সরকার।
সরকার সার্বভৌম (সভরেইন) গ্যারান্টার হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ পাওয়ার দরজা খুললো আইসিবির।
সরকারের গ্যারান্টিপত্র পেয়ে অর্থ পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করবে আইসিবি। গ্যারান্টি থাকায় কোনো কারণে আইসিবি ঋণের অর্থ ফেরত দিতে না পারলে সরকারকে তা পরিশোধ করতে হবে।
এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার পর আইসিবি দাপ্তারিক প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ।
গত ২৯ অগাস্ট চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়া এই অধ্যাপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক চেষ্টার পর সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি এ টাকা দিলে আইসিবি সামনে এগোতে পারবে। অর্থ উপদেষ্টা সহযোগিতা করেছেন ঋণ পাইয়ে দিতে। অর্থ পেলে পুঁজিবাজারেও তারল্য বাড়বে।’’
আবু আহমেদ বলেন, “আগে তো আইসিবির অর্থের অপব্যবহার হয়েছে। কিছু পচা শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে আইসিবি।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাওয়া ঋণের অর্থ ব্যবহারের একটি খসড়া পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল আইসিবি।
সেই পরিকল্পনার আলোকে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে আইসিবিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। গত বুধবার ঋণের গ্যারান্টার হতে সম্মতিপত্র ও সেই প্রতিবেদন চেয়ে আইসিবিকে চিঠি দেওয়া হয়।
ঋণের অর্থের ব্যবহারের পরিকল্পনা বিষয়ে আবু আহমেদ বলেন, কিছু উচ্চ সুদের আমানত আছে আইসিবিতে। তাতে সুদ বাবদ বছরে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়।
সেই উচ্চ সুদের আমানতের একটি অংশের ধারাবাহিকতা রাখবে না আইসিবি। অবশিষ্ট অর্থ ধাপে ধাপে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পুঁজিবাজারে লেনদেন ও সূচক বাড়ছিল। কিন্তু সেই ধারা ছিল কেববল দুই সপ্তাহ। ১৪ অগাস্টের পরে বাজারে ধারাবাহিক পতন শুরু হয়। এমনকি একদিনে সূচকের একশ পয়েন্ট হারানোর ঘটনাও বিনিয়োগকারীরা দেখেছেন।
পতনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বাজারে তারল্য প্রবাহে সংকট রয়েছে ও আইসিবিও বিনিয়োগ করতে পারছে না এমন দাবি করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তিন হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি চায় প্রতিষ্ঠানটি।
ঋণ আবেদন পর্যালোচনা করতে গত ১৭ অক্টোবর অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সচিব ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিএসইসি এর চেয়ারম্যানকে নিয়ে বৈঠক হয়।
সেই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঋণ দিতে তাদের আপত্তি নেই। সবশেষ গত ৩০ অক্টোবর বাজারের হাল ধরতে বিএসইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
সেখানেও আইসিবিকে তারল্য সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পায়। পতন থেকে রক্ষা ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে এর আগে গত ৪ নভেম্বর মূলধনী মুনাফার ওপর কর হার কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনে সরকার।
সেই সিদ্ধান্তের পর থেকে সূচক বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে লেনদেন। গত তিন দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকে যোগ হয়েছে ৯৫ পয়েন্ট।