লেনদেন তলানীতে নেমে আসছে। মূল্যসূচক একদিন বাড়ছে, তো পাঁচ দিন পড়ছে। কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।
সবাই প্রত্যাশা করেছিল ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের পর নতুন সরকার আসলে বাজার ভালো হবে; তেমনটা লক্ষ্যও করা গিয়েছিল। প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়ে ৫ হাজার ৯০০ পয়েন্টে উঠেছিল। লেনদেনও এক হাজার ৩০০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল।
কিন্তু ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতি ঘোষণার পর থেকেই বাজার উল্টোপথে হাটতে শুরু করে। সূচক কমতে কমতে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। লেনদেন নেমে এসেছে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফের হতাশা ফিরে এসেছে। অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভ-মানবন্ধন করেছেন ছোট বিনিয়োগকারীরা।
এ পরিস্থিতিতে বাজারের দরপতন ঠেকাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-সংগঠন বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে।
এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও পুঁজিবাজার নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। তারপরও বাজার ভালো হচ্ছে না; স্বাভাবিক হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। ২০১০ সালে ধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় ৯০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল পুন:র্বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিএসইসি প্লেসমেন্ট শেয়ার বন্ধ এবং নতুন আইপিও আবেদন নিচ্ছে না। সর্বশেষ মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ এবং এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারনের জন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএসইসি।
“এ সব ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বাজারে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। ঈদের কারণে এখন বিনিয়োগকারীরা প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে কিছু টাকা তুলে তুচ্ছে। বাজেটে ভালো কিছু থাকাবে বলে ইতোমধ্যেই অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। সবমিলিয়ে জুলাই-অগাস্টে বাজার ভালো হবে বলে আমার বিশ্বাস।”
“কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজারের দুর্বল দিক নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। সবকিছু মিলিয়ে বিএসইসি বেসিক জায়গায় সংস্কার করেছে। এ সব সংস্কার দীর্ঘমেয়াদে ভালেঅ ফল বয়ে আনবে।”
তবে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ২০০৭-২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ভিন্ন কথা বলেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, প্রদোদনা বা কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদে ভালো করা যাবে না। সত্যিকার অর্থে বাজার ভালো করতে হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। যে সব বিনিয়োগকারী বাজার বিমুখ হয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।
“অন্য আর একটি কাজ করতে হবে; সেটি হল, বাজারে যাতে ২০১০ সালের মতো বড় ধস না হয়, কোন মহল কোন ধরনের কারসাজি করার সুযোগ না পায় সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত রতে হবে। মোদ্দা কথা, বাজারে বিনিয়োগ করলে সব টাকাই যেনো গচ্চা না যায়; বছর শেষে যেনো মোটামুটি মুনাফা পাওয়া যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে “
বাজার পরিস্থিতি
গত কয়েক দিনের বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৬ মে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানো সংক্রান্ত সার্কুলার জারির পর চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার বাজারে উল্লম্ফন ঘটে। ঐ ডিএসইএক্স ১০৫ পয়েন্ট বাড়ে। কিন্তু পরের দিনই বাজারে বড় পতন হয়। মঙ্গলবারও সূচক পড়ে, লেনদেন নেমে আসে ৩০০ কোটি টাকার নীচে। বুধবার সূচক কিছুটা বাড়লেও বৃহস্পতিবার কমে সপ্তাহ শেষ হয়েছে।
চট্টগ্র্ম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসপিআই ১ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৬ হাজার ৪১ দশমিক ০৮ পয়েন্টে।
বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৩১৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা বুধবারের তুলনায় ২৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বেশি। বুধবার ডিএসইতে লেনদেন ছিল ২৯০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৪০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১২৯টির, কমেছে ১৬৪টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭টি কোম্পানির শেয়ার দর।
ডিএসইএক্স বা প্রধান মূল্য সূচক দশমিক ৩৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৫০ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে এক হাজার ১৯২ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ ২ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৩২ পয়েন্টে।
অন্যদিকে সিএসইতে ১৮ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বেশি।
লেনদেন হয়েছে ২৪৪টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৬ টির, কমেছে ১১২ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬ টির।