এখন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকলে তারা তাদের শেয়ার বন্ধক রেখে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে না। উপহার হিসেবে কাউকে শেয়ার হস্তান্তরও করা যাবে না।
এতদিন সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকলে ওই উদ্যোক্তা-পরিচালকরা তাদের শেয়ার বিক্রি করতে পারতেন না।
এখন বিক্রি তো করতে পারবেনই না, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ওই শেয়ার বন্ধক রেখে ঋণও নিতে পারবেন না। এমনকি স্ত্রী-সন্তান বা পরিবারের কোনো সদস্যের নামে শেয়ার হস্তান্তরও করতে পারবেন না।
একইসঙ্গে উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করলে ওই কোম্পানি বোনাস শেয়ারও দিতে পারবে না।
অর্থাৎ এতদিন শুধু রাইট শেয়ার দেওয়া ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল; এখন বোনাস শেয়ারও দেওয়া যাবে না।
শুধু তাই নয়, সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং বোর্ডে পৃথক একটি ক্যাটাগরি গঠন করতে হবে।
মঙ্গলবার বিএসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্তসহ আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বোনাস শেয়ারসহ কোনভাবে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারবে না।
এক্ষেত্রে কোম্পানি রাইট শেয়ার, আরপিও, একত্রীকরণ করার ক্ষেত্রে অযোগ্য হবে। এছাড়া ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ ছাড়া কোনো পরিচালক এবং উদ্যোক্তা ওই কোম্পানির শেয়ার বিক্রয় বা হস্তান্তর বা বন্ধক রাখতে পারবে না।
স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতিত উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিত ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানিকে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেডিং বোর্ডে পৃথক একটি ক্যাটাগরি গঠন করতে হবে।
কোনো পরিচালকের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থতার কারণে শূন্য পদে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে এমন শেয়ারহোল্ডারদের মধ্য হতে পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পূরণ করতে হবে।
আর কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান, কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রতি অন্যুন ২ শতাংশ শেয়ার ধারনের জন্য উক্ত কোম্পানি ব্যক্তিকে ওই তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য পরিচালক মনোনীত করতে পারবে।
বিএসইসির এই কঠোর অবস্থান পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জানিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশেষ করে রাইট শেয়ারের পাশাপাশি বোনাস শেয়ার দেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বাজারে শেয়ারের যোগান কমে যাবে। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান শেয়ারের চাহিদা বেড়ে যাবে। বাজার ভালো হবে।”
বাজারে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিএসইসি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।
সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক কোম্পানিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ এবং পরিচালকদের ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক।
কিন্তু ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা মানছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৪০টি কোম্পানি।
এসব কোম্পানিতে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশের কম। এরমধ্যে কোনো কোম্পানিতে মাত্র ১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তাদের। বাকি ৯৯ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
অথচ এই স্বল্প পরিমাণ শেয়ার দিয়ে উদ্যোক্তারা পুরো কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। অর্থাৎ তারাই কোম্পানির মালিক। ফলে এসব কোম্পানি দেউলিয়া হলেও উদ্যোক্তারা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
এ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই গণমাধ্যমে বেশ লেখালেখি হচ্ছে।তারই পরিপেক্ষিতে বিএসইসি এই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
২০১১ সালের ২২ নভেম্বর তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে বিএসইসি নির্দেশনা জারি করে। পরবর্তী ৬ মাস অর্থাৎ ২০১৩ সালের ২১ মের মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো কোম্পানি এ শর্তপূরণ না করা পর্যন্ত রাইট ইস্যুসহ বাজার থেকে নতুন করে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে না। আর কোনো পরিচালক এ শর্ত পূরণ করতে না পারলে তার পদ হারাতে হবে।
এ নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরই ৪ কোম্পানির ১৪ জন পরিচালক আদালতে রিট করেন। আর শেষ পর্যন্ত পরিচালকদের রিট খারিজ করে বিএসইসির সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন আদালত।
পরবর্তী সময়ে এটি কোম্পানি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু এতোদিন যারা এ আইন মানেনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
শেয়ারবাজারে অধিকতর স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য শিগগিরই পরিচালকদের শেয়ার ধারন নিয়ে একটি নতুন নোটিফিকেশন জারি করা হবে বলে কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।