বস্ত্র, ওষুধ ও ব্যাংক খাতের বেশির ভাগ শেয়ার দর হারানোতে শুরুর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শেষে বজায় থাকেনি।
Published : 17 Sep 2024, 07:32 PM
পর পর দুই দিন বড় তিন খাতের বেশির ভাগের শেয়ারের দাম কমায় শেষ বেলায় গিয়ে সূচকের পতন দেখেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসই। বড় কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর হারানোর দিনে এদিনও দাপট দেখা গেছে স্বল্প মূলধনী শেয়ারের।
সরকারি ছুটির কারণে মাঝে একদিন বিরতির পর মঙ্গলবার সপ্তাহের দ্বিতীয় লেনদেনে সূচক হারিয়েছে ৩০ পয়েন্ট। এ নিয়ে দুই দিনে মোট সূচক কমল ৪৪ পয়েন্ট। এদিন আগের দিনের চেয়ে লেনদেনও কমেছে সামান্য।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বস্ত্র, ওষুধ ও রসায়ন এবং ব্যাংক খাতের শেয়ারের অধিকাংশ দর হারানোতে শেষ পর্যায়ে সূচক টিকে থাকতে পারেনি। বেলা দেড়টা পর্যন্ত উত্থানে থাকা সূচক শেষ ঘণ্টার লেনদেনে বড় পতন ঘটে।
গত কয়েকদিন ধরে পোশাক খাতে চলা অসন্তোষের প্রভাব পড়েছে এ খাতের শেয়ারের লেনদেনে। একক খাত হিসেবে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে বস্ত্রখাতের কোম্পানিগুলো। আগের দিনের চেয়ে কমেছে খাতটির হাতবদল হওয়া শেয়ারের সংখ্যাও। এর প্রভাবেই সূচক সবচেয়ে বেশি দর হারায়।
মঙ্গলবার ডিএসই প্রধান সূচক লেনদেন শেষ করেছে ৫ হাজার ৬৮১ পয়েন্টে। এ নিয়ে দুই দিনে সূচক কমে যাওয়ার সঙ্গে বাজার মূলধন হারিয়েছে দুই হাজার ৮৮৬ কোটি টাকার।
আগের দুই দিনের মত স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দরে উল্লম্ফন বেশি দেখা গেছে ডিএসইতে। দর বাড়ার শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে এসব কোম্পানির পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে কারসাজিতে নাম আসা আরও কিছু শেয়ারের দর।
দিনের লেনদেনে দেখা যায়, এদিন সকালে বড় আকারের উত্থান দিয়ে শুরু হয়ে চলে প্রথম আধা ঘণ্টা। এসময়ে সূচকে আগের দিনের চেয়ে ২৭ পয়েন্ট যোগ হয় অর্থাৎ সূচক চলে যায় ৫ হাজার ৭৩৮ পয়েন্টে।
এরপর সময়ের সঙ্গে দর হারানোর শেয়ারের বাড়তে থাকলে সূচক কমতে থাকে। তবে বেলা ১১টার দিকে ক্রয় চাপ বাড়লে সূচকও উঠতে শুরু করে। কিন্তু সেই ধারা বজায় থাকেনি পৌনে ১২টার পর।
আবার সূচক কমে লেনদেন চলে বেলা দেড়টা পর্যন্ত। এসময়েও আগের দিনের চেয়ে ৪ পয়েন্ট বেশি থাকা সূচক শেষ পর্যায়ের বিক্রয় চাপে আর টিকে থাকতে পারেনি।
শেষ এক ঘণ্টার লেনদেনে অর্জিত সূচকের সবটুকু হারিয়ে আগের দিনের চেয়ে ৩০ পয়েন্ট হারায় ডিএসই প্রধান সূচক।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ওষুধ ও রসায়ন এবং ব্যাংক খাতের শেয়ারের অধিকাংশ দর হারানোতে শেষ পর্যায়ে সূচক টিকে থাকতে পারেনি। গত কয়েক দিনের এ দুটি খাত সবচেয়ে বেশি অবদান রেখলেও মঙ্গলবার কমেছে পরিমাণ।
ডিএসইর লেনদেন তথ্য অনুযায়ী, একক খাত হিসেবে মোট লেনদেনে সবচয়ে বেশি ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ অবদান রাখে ওষুধ ও রসায়ন খাত।
এখাতের লেনদেনে আসা কোম্পানির মধ্যে ২০ টি বা ৫৯ শতাংশ দর হারায়। দর বাড়ে ১২টির বা ৩৫ শতাংশ কোম্পানরি।
এরপরই আগের দিনের মত দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও ব্যাংক খাতের অবদান সামান্য কমেছে লেনদেনে। প্রায় ১১ শতাংশ অবদান রাখা খাতটির ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ২১টিরই শেয়ার দর কমেছে।
আর তৃতীয় খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের অবদান ছিল ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। একক খাত হিসেবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোম্পানি দর হারিয়েছে বস্ত্র খাতের। লেনদেনে আসা কোম্পানির মধ্যে ৩৪টিই শেয়ার দর হারিয়েছে। এখাতের মাত্র ১২টির শেয়ার দর বেড়েছে।
ডিএসইর লেনদেন তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, লেনদেনে আসা মোট ৪০১টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর হারানোর সংখ্যা আগের দিনের মতই ছিল ১৮২টির, দর বাড়ে ১৫৬টির ও আগের দরে লেনদেন করে ৬৩টি শেয়ার।
একক কোম্পানি হিসেবে দর বাড়ার শীর্ষ তালিকায় ছিল ১২৭ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের। দর বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে কোম্পানিটির শেয়ারদর।
দ্বিতীয় অবস্থানে ১০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের। এরপর তৃতীয় অবস্থানে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি দর বেড়েছে আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর।
অন্যদিকে দর হারানোর শীর্ষে ছিল ন্যাশনাল টি কোম্পানির। এরপরই ৬ শতাংশের উপরে দর হারিয়েছে লিব্রা ইনফিউশন ও পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড।
ডিএসইর প্রধান সূচকের সঙ্গে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস আগের দিনের চেয়ে ৮ পয়েন্ট হারিয়ে নেমেছে ১ হাজার ২৩৮ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান নেয় ২ হাজার ৬৮ পয়েন্টে।