সাইফুল আলম, তার পরিবারের সদস্যসহ ২৫ জন ব্যক্তি এবং এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ৫৬টি কোম্পানির হাতে থাকা সব শেয়ারের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।
Published : 21 Aug 2024, 10:23 AM
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তার পরিবারের সদস্যসহ ২৫ জনের নামে থাকা সব ধরনের শেয়ার লেনদেন, স্থানান্তর ও কেনা-বেচায় অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন- বিএসইসি।
কমিশন জানিয়েছে, এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ৫৬টি কোম্পানির হাতে থাকা শেয়ারের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনা পেয়ে রাতেই শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সিদ্ধান্ত দেয় বিএসইসি। রাতেই তা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়।
বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তালিকা পাঠিয়েছে, সেই তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকা সব শেয়ার ও ফান্ড, অর্থাৎ সকল বিনিয়োগ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হস্তান্তর, ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেন বন্ধ থাকবে।”
নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যে ২৫ জন ব্যক্তির নাম এসেছে, তাদের মধ্যে ২৩ জনই এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ছয়টি ব্যাংকের পরিচালক।
ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার রয়েছে এই ৭১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভু্ক্ত নয়।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলাম) বর্তমানে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তার স্ত্রী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ফারজানা পারভীন, তাদের ছেলে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলমের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
ইউনিয়ন ব্যাংকের দশ পরিচালকদের মধ্যে মর্জিনা শারমীন, রাশেদুল আলম, মোস্তান বিল্লাহ আদিল, হালিমা বেগম এবং ওসমান গণির শেয়ার লেনদেনেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসইবিএল) চেয়ারম্যান বেলাল আহমেদ, পরিচালক আরশাদুল আলম ও বদরুন্নেসা আলম ও মাহমুদুল আলমের নামও রয়েছে তালিকায়।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বাকি পরিচালকদের মধ্যে রহিমা বেগম, আতিকুর নেসা, আশরাফুল মোস্তফা চৌধুরী ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসানের শেয়ার হস্তান্তরেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিএসইসি।
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ও ভাইস চেয়ারপারসন মায়মুনা খানম ও পরিচালকদের মধ্যে শহীদুল আলম, শাহানা ফেরদৌস, রোকেয়া ইয়াসমিন, শহীদুল আলম সেথ ও ফারজানা বেগমের শেয়ার বেচা-কেনায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার থেকে ওই ২৫ ব্যক্তি ও ৫৬ কোম্পানির মালিকানায় থাকা শেয়ার, ইউনিট ফান্ড, বন্ড এর লেনদেন, স্থানান্তর ও কেনা-বেচা বন্ধ থাকবে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে।
তবে কোনো ব্যাংক বা কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বন্ধ হবে না। শুধু তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও কোম্পানির হাতে থাকা শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে।
ছয় ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশের মালিকানা রয়েছে ২৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে। তারা সবাই নামে বা বেনামে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
এরপর আত্মগোপনে চলে যান সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং ব্যাংক পরিচালকদের একটি অংশ। ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ২৫ ব্যক্তি
সাইফুল আলম, ফারজানা পারভীন, আহসানুল আলম, মাইমুনা খানম, আতিকুর নেসা, শারমিন ফাতেমা, মারজিনা শারমিন, ফারজানা বেগম, শাহানা ফেরদৌস, রহিমা বেগম, মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, আশরাফুল মোস্তফা চৌধুরী, মোহাম্মদ আব্দু্ল্লাহ হাসান, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, বেলাল আহমেদ, মাহমুদুল আলম, আশরাফুল আলম, বদরুন্নেসা আলম, ওয়াহিদুল আলম সেথ, রোকেয়া ইয়াসমিন, শহিদুল আলম, হালিমা বেগম, রাশেদুল আলম, মোহাম্মদ মোস্তান বিল্লাহ আদিল ও ওসমান গণি।
নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ৫৬ কোম্পানি
এবিসি ভেঞ্চারস লিমিটেড, আরমাডা স্পিনিং মিলস, বাংলাদেশ পেট্রো কেমিক্যালস, বিএলইউ ইন্টারন্যশনাল, ব্রিলিয়ান্ট বিজনেস কোম্পানি, ব্রডওয়ে ইমপেক্স কোম্পানি, সি এন্ড এ এক্সেসরিজ, সি এন্ড এ ফেব্রিক্স লিমিটেড, ক্যারোলিনা বিজনেস এন্টারপ্রাইজেস, ডায়নামিক ভেঞ্চারস লিমিটেড, এভারগ্রিন শিপিং লিমিটেড ও এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড।
এক্সেলসর ইমপেক্স কোম্পনি লিমিটেড, ফাতেহবাদ ফার্ম লিমিটেড, জেনেসিস টেক্সটাইলস এক্সেসরিজ অ্যান্ড অ্যাপারেলস, গ্লোবাল ট্রেডিং কোঅপারেশন, গ্র্যান্ড বিজনেস লিমিটেড, হাসান আবাসন প্রাইভেট লিমিটেড, হাইক্লাস বিজনেস এন্টারপ্রাইজ ও হলিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল।
হানিওয়েল সিকিউরিটিজ করপোরেশন, আইডিয়াল ফ্লাওয়ার মিলস, জেএমসি বিল্ডার্স লিমিটেড, কর্ণফুলী ফুডস, কর্ণফুলী প্রাকৃতিক গ্যাস লিমিটেড, কিংস্টোন ফ্লাওয়ার মিলস, কিংওয়ে এন্ডিউভারস লিমিটেড, লিডার বিজনেস এন্টারপ্রাইজ ও লায়ন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
লায়ন বিজনেস রিসোর্সেস, ম্যারাথন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মিল্কওয়ে ইমপেক্সকো লিমিটেড, মডার্ন প্রপার্টিজ, নওশিন স্টিলস লিমিটেড, ওশান রিসোর্টস লিমিটেড, পদ্মা এক্সপোর্ট ইমপোর্ট অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেড।
প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, পিকস বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, পারসেপটা এন্ডিউভরর্স লিমিটেড, প্লাটিনাম এন্ডিউভরর্স লিমিটেড, পোর্টম্যান সিমেন্টস লিমিটেড, প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্টস, পুষ্টি ভেজিটেবল ঘি, রিলায়েবল অন্ট্রাপ্রেনারস, শাহ আমানত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি, সলিড ওয়্যাক ইন্স্যুরেন্স পিসিসি লিমিটেড, সোনালী কর্র্গো লজিস্টিকস।
ইউনিগ্লোব বিজনেস রিসোর্সেস, ইউনিক ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, ইউনিটেক্স সিমেন্ট, ইউনিটেক্স স্টিল মিলস, ইউনিটেক্স টায়ার লিমিটেড, ভাইব্র্যান্ট এন্ডিউভারস লিমিটেড, ভিক্টর ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস, ওয়েসকো লিমিটেড ও ওয়েস্টার্ন ডিজাইনারস লিমিটেড।