বড় মূলধনী বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার ক্রেতা পেল একই দিনে।
Published : 17 Jul 2023, 03:31 PM
বড় মূলধনী কোম্পানি স্কয়ার ফার্মার লেনদেন বাড়ল আরও। সাত মাস পর ফ্লোর ভেঙে পরপর তিনদিন বাড়ল শেয়ারদর।
তবে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকের উত্থান হলেও দ্বিতীয় দিনই কমে গেছে খানিকটা, যদিও স্কয়ার ফার্মার পাশাপাশি মিডল্যান্ড ও রূপালী ব্যাংকের মতো বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বেড়েছে।
লেনদেন অবশ্য আগের দিনের কাছাকাছিই আছে।
দর বেড়েছে এমন কোম্পানির তুলনায় দর হারানো কোম্পানির সংখ্যাই বেশি, তবে বাজারে একটু একটু করে গতি ফিরতে থাকলেও এখনও ফ্লোর প্রাইসে আটকে যাওয়া কোম্পানি সংখ্যাগরিষ্ঠ।
সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৬ পয়েন্ট, ৮৩ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১১৩টির দর। সবচেয়ে বেশি ১৭২টি কোম্পানি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে, যেগুলোর সিংহভাগই ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে।
সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ৩৬৮টি কোম্পানির শেয়ার, আগের দিন সংখ্যাটি ছিল ৩৮৩।
টাকার অঙ্কে লেনদেন হয়েছে ৯৩২ কোটি ৭১ লাখ ৫২ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৯৩৩ কোটি টাকার কিছু বেশি।
গতি পাচ্ছে বড় মূলধনী কোম্পানি
সাত মাস ধরে ফ্লোর প্রাইসে প্রায় ক্রেতাশূন্য অবস্থায় থাকার পর ৮৮৬ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি বৃহস্পতিবার ক্রেতা খুঁজে পায়। হাতবদল হয় ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ১১৯টি শেয়ার। দাম বাড়ে ৬০ পয়সা।
রোববার আরও ১ টাকা ৭০ পয়সা দাম বেড়ে হাতবদল হয় ৫ লাখ ২৫ হাজার ৪৯টি শেয়ার। সেখান থেকে আরও ১ টাকা বেড়ে সোমবার লেনদেন হয়েছে ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৭৫টি শেয়ার।
ঈদের পর থেকেই ৪৬৪ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের শেয়ারের ক্রেতা ফিরে এসেছে। দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই শেয়ারদর বেড়ে বেড়ে ৩০ শতাংশ। ৫.৫৭ শতাংশ দর বেড়ে কোম্পানিটির ২৩ লাখ ৫৬ হাজারেরও বেশি শেয়ার হাতবদল হলো। অথচ ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকার সময় কোম্পানিটির শেয়ারের ক্রেতা ছিল না।
২০ লাখের বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টও। যদিও কোম্পানিটি দর হারিয়েছে কিছুটা।
৬৩৯ কোটি টাকা মূলধনের মিডল্যান্ড ব্যাংক দর বৃদ্ধির শীর্ষ স্থানে উঠার পাশাপাশি হাতবদল হয়েছে ৬৩ লাখ ২৯ হাজারের বেশি শেয়ার।
গত কয়েকে মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো ব্যাংক খাতের বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে একই দিনে। ফ্লোর প্রাইস ভেঙেছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের, দর বেড়েছে ১০ পয়সা।
মিনোরির দুই কোম্পানির শেয়ারের দরপতন
মার্চের শেষে যে এমারেল্ড অয়েলের দর ছিল ৩০ টাকা, সেই কোম্পানির শেয়ারদর গত সপ্তাহে ছাড়িয়ে যায় ১৮৮ টাকা।
কোম্পানিটির শেয়ার ৫ টাকা ২০ পয়সা বা প্রায় ৩ শতাংশ দর হারিয়েছে সোমবার। দিন শেষে দর স্থির হয় ১৭১ টাকা ৩০ পয়সায়।
শতকরা হারে আরও বেশি দর হারিয়েছে ফুওয়াং ফুডস, যে কোম্পানির শেয়ারদর কোরবানির ঈদের পর লাফাচ্ছিল। গত ২ জুলাইও দর ছিল ফ্লোর প্রাইস ২৫ টাকা ২০ পয়সায়, রোববার হয়ে যায় ৪৬ টাকা ৯০ পয়সা, তবে দিন শেষে স্থির হয় ৪৩ টাকা ৫০ পয়সায়। সেখান থেকে ৮ শতাংশ হারিয়ে দর স্থির হয়েছে ৪০ টাকায়।
প্রায় দুই কোটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে কোম্পানিটির, যা গত দুই সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
লেনদেনে সেরা খাদ্য, এরপর বীমা
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ারে যে বিপুল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে রয়েছে, সেটি অব্যাহত রয়েছে।
এই খাতের ২১টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৬৩ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের প্রায় ১৯ শতাংশ।
তবে ৭টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির দিন কমেছে ১৩টির দর। আর একমাত্র কোম্পানি হিসেবে ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো।
দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বীমা খাত। গত এক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো জীবন বীমার চেয়ে সাধারণ বীমার শেয়ারে বেশি লেনদেন হয়েছে।
সাধারণ বীমায় হাতবদল হয়েছে ৭২ কোটি ৬৩ লাখ, জীবন বীমায় ৬০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ১৩৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ১৫ শতাংশের বেশি।
জীবন বীমার ১৫ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে চারটির, কমেছে সাতটির, তিনটির দর ছিল অপরিবর্তিত, লেনদেন হয়নি একটির।
সাধারণ বীমার ৪২ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির, কমেছে ২৬টির দর, অপরিবর্তিত ছিল চারটির আর একটির লেনদেন হয়নি।
অনেক দিন পর লেনদেনের তৃতীয় অবস্থানে উঠে আসা বিবিধ খাতে লেনদেন হয়েছে ৯৯ কোটি টাকার বেশি, সাতটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে তিনটির। তিনটি কোম্পানি ছিল আগের দিনের দরে।
এছাড়া ওষুধ খাতে ৭৪ কোটি, প্রকৌশল খাতে ৭৪ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে প্রায় ৭০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
বাকি সব খাতেই লেনদেন ৫০ কোটি টাকার কম।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা
শীর্ষে থাকা ১০টি কোম্পানির পাঁচটিই সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে এবং আরও একটি কাছাকাছি বেড়ে লেনদেন শেষ করেছে।
সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক, ইনটেক অনলাইন, আজিজ পাইপস, খান ব্রাদার্স, জনতা ইন্স্যুরেন্সের।
লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের দরও সার্কিট ব্রেকারের কাছাকাছি বেড়েছে।
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, বঙ্গজ, সোনালী আঁশ ও ইউনিয়ন ক্যাপিটালও ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায়। এগুলোর দর ৫.৯৪ শতাংশ থেকে ৮.৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
পতনের শীর্ষে যারা
এই তালিকার শীর্ষে ছিল ফুওয়াং ফুডস, যার দর কমেছে ৮ শতাংশের কিছু বেশি। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রূপালী লাইফের কম ৭ শতাংশের বেশি কমেছে।
এছাড়া লিব্রা ইনফিউশনেরে দর ৬ শতাংশের বেশি, সেন্ট্রাল ফার্মা ও শ্যামপুর সুগারের দর ৫ শতাংশের বেশি, লুব রেফ, ফুওয়াং সিরামিকস, ইন্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ইয়ানিক পলিমার ও ডেল্টা লাইফের দর কমেছে ৪ শতাংশের বেশি।